[‘অন্তরে
এবং
বাহিরে
যে
দুটি
উদার
এবং
উন্মুক্ত
বিহারক্ষেত্র
আছে,
মনুষ্য
যেখান
হইতে
জীবন,
বল
এবং
স্বাস্থ্য
সঞ্চয়
করে,
যেখানে
নানা
বর্ণ,
নানা
রূপ,
নানা
গন্ধ,
বিচিত্র
গতি
এবং
গীতি,
প্রীতি
ও
প্রফুল্লতা
সর্বদা
হিল্লোলিত
হইয়া
আমাদিগকে
সর্বাঙ্গসচেতন
সম্পূর্ণ
বিকশিত
করিয়া
তুলিবার
চেষ্টা
করিতেছে
সেই
দুই
মাতৃভূমি
হইতে
নির্বাসিত
করিয়া
হতভাগ্য
শিশুদিগকে
কোনো
বিদেশী
কারাগারে
শৃঙ্খলাবদ্ধ
করিয়া
রাখা
হয়’]
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,
‘শিক্ষা’)
এক
মা
অমিতা
সেন
চাইতেন
ছেলে
অমর্ত্য
শান্তিনিকেতনে
থেকে
পড়াশোনা
করুক
এবং
সম্ভবত
কাকতালীয়ভাবে
রবীন্দ্রনাথের
মৃত্যু
তাকে
আরো
বেশি
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ
করল।
অন্যদিকে
বাবা
আশুতোষ
সেন
ঢাকার
পরিবার
ছেড়ে
দাদু-দিদিমার
কাছে
বাস
করার
প্রস্তাব
পছন্দ
করলেন
না।
কিন্তু
যেমনটি
আগে
বলা
হয়েছে,
যুদ্ধ
ভারতের
সন্নিকটে
আসার
প্রেক্ষিতে,
তার
বাবা
শান্তিনিকেতনে
অধিক
নিরাপত্তার
যুক্তি
স্বীকার
করলেন।
ওটাই
ছিল
তার
চলে
যাওয়ার
পেছনে
অকাট্য
যুক্তি।
জাপানিরা
ফিরে
গেলেও
অমর্ত্য
সেন
এরই
মধ্যে
ভালোবেসে
ফেলা
শান্তিনিকেতন
ছেড়ে
ঢাকায়
ফিরে
আসতে
অস্বীকৃতি
জানালেন।
কান টানলে
যেমন
মাথা
আসে,
অনেকটা
তেমনি
অমর্ত্য
প্রসঙ্গে
রবীন্দ্রনাথ
আসে।
তার
কারণ,
অমর্ত্য
সেন
তার
পরবর্তী
জীবনভর
রবীন্দ্রনাথের
আদর্শ
আক্ষরিক
অর্থে
ধারণ
করেছেন।
অমর্ত্য
সেন
সেন্ট
গ্রেগরিজ
স্কুলে
অধ্যয়নরত
থাকাবস্থায়
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর
১৯৪১
সালের
আগস্টে
মৃত্যুবরণ
করেন।
তাড়াতাড়ি
আহূত
স্কুল
অ্যাসেম্বলিতে
হেডমাস্টার
শোকাবহ
খবরটা
দিয়ে
ওই
দিনের
জন্য
সব
পাঠদান
স্থগিত
করেছিলেন।
বাসায়
ফিরে
বিস্ময়াহত
অমর্ত্যের
মনে
হলো
পছন্দনীয়
শ্মশ্রুমণ্ডিত
মানুষটি
যাকে
সে
পরিবারের
বন্ধু
হিসেবে
জানত
এবং
শান্তিনিকেতনে
গেলে
দাদু-দিদিমা
অথবা
মা
যার
সঙ্গে
দেখা
করতে
যেত,
সেই
মনোরম
মানুষটি
পৃথিবীর
জন্য
এত
গুরুত্বপূর্ণ
কেন।
হ্যাঁ,
জানা
ছিল
যে
তিনি
একজন
অত্যন্ত
প্রশংসিত
কবি
এবং
দু-একটা
কবিতা
অমর্ত্য
আবৃত্তি
করতে
পারতেন,
কিন্তু
এটা
সহজবোধ্য
হলো
না
তার
কাছে
যে
কেন
অতি
গুরুত্ববহ
ব্যক্তি
ভাবা
হচ্ছে
সদ্যপ্রয়াত
রবীন্দ্রনাথকে।
সাত
বছর
বয়সী
অমর্ত্য
তখন
ভাবতেই
পারেননি
আগামী
বছরগুলোয়
তার
চিন্তার
জগতে
ঠাকুর
কত
বৈপ্লবিক
প্রভাব
নিয়ে
উপস্থিত
হবেন।
দুই
বাসায়
পৌঁছে
দেখলেন
একটা
সোফায়
বসে
মা
কাঁদছেন;
বাবা
নাকি
বিশ্ববিদ্যালয়ের
কাজ
তড়িঘড়ি
সেরে
বাড়ি
আগেভাগে
ফিরবেন।
তিন
বছরের
বোন
মঞ্জু
পরিস্থিতি
দেখে
থতমত
খেয়ে
গেলে
অমর্ত্য
তাকে
বোঝালেন,
একজন
অতি
মহান
এবং
আমাদের
কাছে
প্রিয়
এই
মাত্র
মারা
গেছেন।
মৃত্যু
কী
তা
মঞ্জু
জানত
না
বিধায়
প্রশ্ন
করল,
‘চলে
গেল’?
অমর্ত্য
সেন
হ্যাঁ
বলতেই
বোনটি
বলে
উঠল,
‘সে
ফিরে
আসবে’।
তার
প্রায়
সত্তর
বছর
পর
২০১১
সালের
ফেব্রুয়ারিতে
সামান্য
পীড়ায়
মঞ্জু
যখন
মারা
গেল,
অমর্ত্যের
স্মরণে
ভাসল
সেই
শব্দগুলো।
জগৎ-কুটিরের
সবাই—আত্মীয়-জন,
কাজের
লোক
এবং
বন্ধুমহল—১৯৪১
সালের
আগস্টের
সেই
ভ্যাপসা
দিনে
মনে
হয়েছিল
মর্মপীড়ায়
মুহ্যমান;
সেখানে
মনে
হচ্ছিল
শোকের
মাতম।
হবে
না
কেন,
শৈশব
থেকে
অমর্ত্য
সেনের
জীবনে
ঠাকুরের
উপস্থিতি
ছিল
বিরাট
পরিসরে।
মা
অমিতা
সেন
শুধু
শান্তিনিকেতনের
স্কুলে
পড়াশোনা
করেছেন
তা
নয়,
আগেও
বলা
হয়েছে,
নিয়মিত
তিনি
কলকাতায়
স্বয়ং
রবীন্দ্রনাথ
পরিচালিত
নৃত্যনাট্যে
প্রধান
ভূমিকায়
অবতীর্ণ
হতেন।
মায়ের
দিক
থেকে
দাদু
ক্ষিতিমোহন
সেন
দশকের
পর
দশক
শান্তিনিকেতনে
শিক্ষাকতা
ও
গবেষণায়
জড়িত
ছিলেন
এবং
তারা
একে
অন্যের
কাছে
সহযোগী।
রবীন্দ্রনাথ
প্রায়ই
ক্ষিতিমোহনের
ক্ল্যাসিক
জ্ঞান
এবং
বাংলা
ও
উত্তর
ভারতের
ব্যতিক্রমধর্মী
গ্রামীণ
কাব্যিক
রচনা
থেকে
ধারণা
নিতেন।
রবীন্দ্রনাথ
যখন
খুব
অসুস্থ
হয়ে
‘সভ্যতার
সংকট’
শিরোনামে
জীবনের
শেষ
বক্তৃতা
দিতে
অপারগ
হয়ে
পড়লেন,
তখন
কবির
পক্ষ
থেকে
ক্ষিতিমোহন
১৯৪১
সালের
এপ্রিলে
শান্তিনিকেতনে
বিরাট
এক
জনসভায়
বজ্রতুল্য
ভাষণটি
পড়ে
শোনান।
ওটা
ছিল
একটা
অন্তর্দৃষ্টিমূলক
ভাষণ,
যা
ছোট
অমর্ত্যকে
আন্দোলিত
করে
এবং
তাকে
চ্যালেঞ্জ
ছুড়ে
দেয়।
রবীন্দ্রনাথ
সেই
সময়
খুব
খারাপ
মানসিক
অবস্থার
মধ্য
দিয়ে
যাচ্ছিলেন—যুদ্ধের
কারণে
মন
খারাপ,
পশ্চিমাদের
অব্যাহত
ঔপনিবেশিক
আচরণে
বিপর্যস্ত,
নাজিদের
বর্বরতায়
এবং
জাপানি
দখলদার
সামরিক
বাহিনীর
সহিংসতায়
বেদনাক্লিষ্ট,
ভারতের
ভেতর
উদীয়মান
সাম্প্রদায়িক
উত্তেজনায়
বিরক্ত
এবং
সার্বিক
বিশ্বের
ভবিষ্যৎ
নিয়ে
গভীরভাবে
চিন্তিত।
তিন
রবীন্দ্রনাথের
মৃত্যুতে
অমর্ত্য
সেনও
খুব
কষ্ট
পেলেন,
বিশেষত
যখন
এ
মৃত্যুর
তাত্পর্য
মনে
গেঁথে
গেল।
তিনি
তাকে
একজন
সহূদয়
বয়োজ্যেষ্ঠ
হিসেবে
পছন্দ
করতেন
এবং
মনে
হতো
মানুষটি
তার
সঙ্গে
কথা
বলে
আনন্দ
পেতেন।
একই
সঙ্গে
এখন
যা
জানতে
পারছেন
রবীন্দ্রনাথের
ধারণার
গুরুত্ব
এবং
তার
সৃষ্টিশীলতার
শক্তি
নিয়ে,
সে
ব্যাপারেও
কৌতূহলপূর্ণ
হয়ে
পড়লেন।
যে
মানুষটির
প্রতি
যতটুকু
মনোযোগ
দেয়া
উচিত
ছিল
অথচ
দেননি
বলে
অনুভব
করছেন,
সে
বহুল
প্রশংসিত
মানুষটি
সম্পর্কে
জানতে
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ
হলেন
অমর্ত্য।
এভাবেই ঠাকুরের
চিন্তার
নিবেদিত
অনুসরণ
শুরু
হলো
তার
মৃত্যুর
ঠিক
পরই
এবং
অমর্ত্যকে
দিল
জীবনকালে
পুরস্কৃত
ব্যস্ততা।
বিশেষত
স্বাধীনতা
এবং
যুক্তিতর্কে
ঠাকুরের
অতিরিক্ত
গুরুত্ব
প্রদান
অমর্ত্যের
কাছে
গুরুতর
চিন্তার
বিষয়
হয়ে
দাঁড়াল
এবং
বয়স
বাড়ার
সঙ্গে
সঙ্গে
সে
বিষয়গুলোর
প্রতি
আকর্ষণ
তীব্রতর
হলো।
একজন
মানুষের
স্বাধীনতা
ও
সামাজিক
অগ্রগতি
প্রসারণে
শিক্ষার
ভূমিকা
নিয়ে
রবীন্দ্রনাথের
ধারণা
অন্তর্দৃষ্টিমূলক
এবং
প্ররোচনায়
সমর্থ
বলে
ঠাহর
হতে
থাকে
অমর্ত্য
সেনের
কাছে।
১৯৪১ সালের
অক্টোবরে
শান্তিনিকেতনের
উদ্দেশে
ঢাকা
ছাড়েন
অমর্ত্য
সেন।
এটা
রবীন্দ্রনাথের
মৃত্যুর
কয়েক
সপ্তাহ
পর।
তার
‘স্বগৃহে
প্রত্যাবর্তন’
(দিদিমার ভাষায়)
বিরাট
শুভেচ্ছা
বয়ে
আনল
দাদু-দিদিমার
কাছ
থেকে।
তারা
তখন
সেই
শুকনো
খড়ের
কুটিরে
বাস
করছিলেন,
যেখানে
১৯৩৩
সালের
নভেম্বরে
তার
জন্ম
হয়।
ওখানে
প্রথম
সন্ধ্যায়
রান্নাঘরে
তিনি
ছোট
একটা
চৌকিতে
বসে
রান্নারত
দিদিমার
কাছ
থেকে
পরিবর্তনশীল
পরিবারের
খবর
এবং
খোশগল্পে
মেতে
উঠলেন,
যার
তাত্পর্য
ক্রমান্বয়ে
প্রায়
নয়
বছর
বয়সী
মানুষটির
কাছে
পরিষ্কার
হয়ে
উঠল
এবং
তিনি
নিজেকে
পরিপক্ব
ভাবছিলেন।
বস্তুত
সাত
এবং
নয়
বছরের
মধ্যে
তার
ধারণার
এবং
বোঝাপড়ার
পৃথিবীটার
খুব
দ্রুত
বিস্তৃতি
তাকে
শিহরিত
করে।
শান্তিনিকেতনে তখন
বার্ষিক
পূজার
ছুটি।
ক্লাস
শুরু
হওয়ার
আগে
অমর্ত্য
সেন
ক্যাম্পাস
ঘুরে
দেখছিলেন
বিশেষ
করে
খেলার
মাঠগুলো।
তার
মাসতুতো
ভাই
বিরেনদা
মাঠে
অনুশীলনরত
সমবয়সী
ক্রিকেট
দলের
ক্যাপ্টেনের
সঙ্গে
পরিচয়
করিয়ে
দিল।
তাদের
সঙ্গে
প্রথম
খেলায়
বিরাট
বিপর্যয়
ঘটল।
তার
ব্যাটিং
দক্ষতা
পরীক্ষার
জন্য
ক্যাপ্টেন
যখন
বল
করছিল,
ব্যাট
থেকে
বল
বেরিয়ে
সোজাসুজি
বোলারের
নাকে
লেগে
প্রচুর
রক্তক্ষরণ
ঘটায়।
সেবা
করার
একপর্যায়ে
ক্যাপ্টেন
বিরেনদাকে
বলেন,
‘তোমার
ভাই
নিশ্চয়
আমার
দলে
খেলতে
পারে,
তবে
তাকে
বলে
দিও
যেন
বোলারের
নাক
নিশানা
না
করে
বাউন্ডারি
নিশানা
করে।’
‘আমি
ও
রকম
প্রতিজ্ঞা
করে
একটা
নতুন
স্কুলে
জীবনে
আমার
পদার্পণ
উদযাপন
করলাম—
‘বলছেন
অমর্ত্য
সেন।’
যে অর্থে
শান্তিনিকেতন
একটা
মজা
ছিল
সেটা
একটা
স্কুল
হতে
পারে
তা
তিনি
কল্পনাও
করতে
পারেননি।
কোনো
কিছু
করার
সিদ্ধান্ত
নেয়ার
ক্ষেত্রে
এত
স্বাধীনতা,
আলাপচারিতা
চালানোর
জন্য
এতসংখ্যক
বৌদ্ধিক
বন্ধু
নাগালের
মধ্যে
এবং
সিলেবাসের
বাইরে
প্রশ্ন
নেয়ার
জন্য
এত
বন্ধুসুলভ
শিক্ষক
এবং
সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ,
এত
কম
আরোপিত
শৃঙ্খলা
এবং
কঠিন
শাস্তির
পূর্ণ
অনুপস্থিতি!
নিষিদ্ধ দৈহিক
শাস্তি
নিয়মটি
রবীন্দ্রনাথ
জোরের
সঙ্গে
প্রচার
করতেন।
অমর্ত্য
সেনের
দাদু
ক্ষিতিমোহন
তাকে
ব্যাখ্যা
করেছেন
কেন
ওই
নিয়ম
‘আমাদের
স্কুল
এবং
দেশের
অন্যান্য
স্কুলের’
মধ্যে
প্রকৃত
পার্থক্য
ঘটায়
এবং
কেন
নিয়মটি
শিক্ষায়
বিশেষ
করে
শিশুদের
মধ্যে
শেখার
অনুপ্রেরণা
জাগাতে
একটা
বড়
ব্যবধানের
কারণ।
তিনি
বলতেন,
অসহায়
শিশুকে
মারধর
করা
শুধু
বর্বরোচিত
কাজ
নয়,
যা
আমাদের
ঘৃণাভরে
পরিহার
করতে
শেখা
উচিত।
আবার
এও
যে
শুধু
ব্যথা
আর
অপমান
থেকে
বাঁচার
জন্য
নয়,
একজন
ছাত্র
সঠিক
কাজ
করবে
একটা
যৌক্তিক
বোধের
মাধ্যমে।
যা
হোক,
এ
নিয়মের
প্রতি
একনিষ্ঠ
থাকার
পরও,
একটা
মজার
ঘটনার
রটনা
আছে।
ক্ষিতিমোহনের
ছয়
বছর
বয়সী
শিশুদের
ক্লাসে
এক
দুরন্ত
এবং
অমার্জিত
ছোট
ছেলে
বারংবার
নিষেধ
সত্ত্বেও
শিক্ষকের
লেকটার্নে
(গির্জায় বাইবেল
রেখে
পাঠ
করার
জন্য
ব্যবহূত
ঢালু
ডেস্ক
বিশেষ)
তার
স্যানডেল
রেখে
দিত।
ক্ষিতিমোহন
নানাভাবে—যেমন
যৌক্তিক
ব্যাখ্যা
দিয়ে
বোঝানোর
চেষ্টা,
উদ্যমী
শিশুটিকে
নিবৃত্ত
করতে
ব্যর্থ
হয়ে
বলতে
বাধ্য
হলেন,
এমন
ব্যবহার
চলতে
থাকলে
বালকটির
জন্য
যথোপযুক্ত
শাস্তি
হবে
একটা
থাপ্পড়।
যে-ই
বলা,
শিশুটি
স্পষ্টভাবে
উত্তর
দিল,
‘ও
ক্ষিতিদা
তুমি
হয়তো
শোননি
যে
গুরুদেব
(রবীন্দ্রনাথ) নিয়ম
করেছেন
যে
শান্তিনিকেতনের
মাটিতে
কোনো
ছাত্রকে
দৈহিক
শাস্তি
দেয়া
যাবে
না।’
গল্প
আছে
যে
ক্ষিতিমোহন
ছেলেটিকে
তার
শার্টের
কলার
ধরে
ওপরে
উঠিয়ে
শান্তিনিকেতনের
মাটিতে
না
থাকার
নিশ্চয়তা
দিতে
বলেছিলেন।
যা-ই
হোক,
একটা
সমঝোতার
পর,
একটা
মৃদু
প্রতীকী
থাপ্পড়
দিয়ে
স্যান্ডেল
উত্তোলনকারীকে
শান্তিনিকেতনের
মাটিতে
ফিরিয়ে
আনা
হয়।
চার
ওখানে
ক্লাস
হতো
অস্বাভাবিক
কায়দায়।
পরীক্ষাগারের
প্রয়োজন
না
পড়লে
কিংবা
বৃষ্টি
না
হলে
ক্লাস
হতো
বাইরে
পূর্বনির্ধারিত
কোনো
গাছের
নিচে,
সঙ্গে
করে
নিয়ে
আসা
মাদুর
পেতে।
শিক্ষক
সামনাসামনি
বসতেন
সিমেন্টের
তৈরি
আসনে,
পাশে
ব্ল্যাকবোর্ড
অথবা
লেকটার্ন।
বাইরে
ক্লাস
করাই
একমাত্র
ব্যতিক্রম
নয়,
এটা
একটা
বহুবিস্তৃত
এবং
অন্তর্ভুক্তিমূলক
পাঠ্যসূচিসহ
প্রগতিশীল
সহশিক্ষা
বিদ্যালয়
এবং
এশিয়া
এবং
বেশ
ভালোভাবে
আফ্রিকার
বিভিন্ন
সংস্কৃতিনিবিষ্ট।
তবে
শিক্ষা
দান
এবং
গ্রহণ
সম্পর্কে
তেমন
কঠোর
নয়—এমনকি
একাডেমিক
মান
কলকাতা
কিংবা
ঢাকার
ভালো
স্কুলের
সঙ্গে
তুলনীয়
নয়
বিশেষ
করে
সেন্ট
গ্রেগরিজ
স্কুলের
কাছেধারেও
নয়।
কিন্তু
একটা
কিছু
উল্লেখযোগ্য
তো
ছিলই
তার
মধ্যে
যেমন
খুব
সহজে
সনাতনী
ভারতীয়
সাহিত্য
থেকে
সাম্প্রতিক
এবং
ক্ল্যাসিক্যাল
পশ্চিমা
চিন্তায়
প্রবেশ
এবং
তারপর
চীন
অথবা
জাপান
অথবা
আফ্রিকা
অথবা
লাতিন
আমেরিকা।
স্কুলটির
বহুমুখিতা
উদযাপন
সাধারণভাবে
ভারতের
সব
স্কুল
শিক্ষায়
শক্তভাবে
বিদ্যমান,
পরোক্ষভাবে
হলেও
সাংস্কৃতিক
রক্ষণশীলতার
তির্যক
বিপরীত।
সত্যজিৎ রায়
এ
স্কুলে
অমর্ত্য
সেনের
আগের
বছর
পড়তে
এসেছিলেন
যদিও
বয়সে
১২
বছর
বড়
ছিলেন—‘শান্তিনিকেতনে
শিক্ষানবিশি
ছাড়া
আমি
‘পথের
পাঁচালি
নির্মাণ
করতে
পারতাম
কিনা
সন্দেহ।
সেখানে
মাস্টার
মশাইয়ের
পায়ে
বসে
(নন্দলাল বসু)
আমি
শিখেছিলাম
প্রকৃতির
দিকে
কীভাবে
তাকাতে
হয়
এবং
কীভাবে
প্রকৃতির
ভেতরে
থাকা
ছন্দ
অনুভব
করা
যায়।’
১৮৬৩ সালে
রায়পুরের
ভূসম্পত্তির
জমিদার
সিতিকান্ত
সিনহা
রবীন্দ্রনাথের
পিতা
দেবেন্দ্রনাকে
এক
খণ্ড
জমি
দেন।
উদ্দেশ্য
ছিল
এ
জমিতে
বিখ্যাত
পণ্ডিত
এবং
ব্রাহ্ম
সমাজের
নেতা
দেবেন্দ্রনাথের
জন্য
ধ্যান
ও
নির্জন
আশ্রয়ের
ব্যবস্থা
করা।
দেবেন্দ্রনাথ
ওই
জমিতে
তেমন
কিছুই
করেননি
এবং
২০
শতকের
শুরুতে
রবীন্দ্রনাথ
তার
নতুন
স্কুলের
জন্য
এ
জমি
ব্যবহারের
সিদ্ধান্ত
নিলেন।
এভাবেই
১৯০১
সালে
বিশ্ব-জ্ঞান
আহরণে
বিশ্বভারতী
নামে
একটা
নতুন
একাডেমিক
স্বত্তা
জন্ম
নেয়।
এটা
হতে
যাচ্ছিল
ভারতীয়
একটা
স্কুল
যার
প্রতিশ্রুতি
পৃথিবীর
সবচেয়ে
ভালো
জ্ঞানের
পিছু
নেয়া,
সেই
জ্ঞান
কোত্থেকে
এলো
সেটা
বিবেচ্য
বিষয়
নয়।
আসলে একটা
নতুন
ধারার
স্কুল
করার
চিন্তায়
ব্যাপক
প্রভাব
রেখেছে
রবীন্দ্রনাথের
নিজের
স্কুলজীবনে
লব্ধ
অসন্তুষ্টি।
তিনি
আবেগপূর্ণভাবে
অপছন্দ
করতেন,
যেখানে
পাঠানো
হতো
সে
জায়গাগুলো
এবং
পরে
বাড়িতে
গৃহশিক্ষকের
সাহায্যে
পড়াশোনা
চলত।
তার
কাছে
ভারতীয়
স্কুল
মানে
একটা
বিভীষিকা।
শৈশবকালেই
তার
জানা
ভারতীয়
স্কুলের
মান
নিয়ে
গভীর
চিন্তা
জাগে,
যদিও
কিছু
স্কুলের
চমত্কার
একাডেমিক
খ্যাতির
কথা
অজানা
ছিল
না।
যখন
ঠাকুর
নিজের
এ
স্কুল
প্রতিষ্ঠা
করলেন,
এটাকে
অন্যদের
চেয়ে
আমূল
পার্থক্য
হিসেবে
দেখতে
চাইলেন।
ভিনদেশী জো
মার্শাল
১৯১৪
সালে,
অমর্ত্য
সেনের
জন্মের
দু’দশক
আগে
মন্তব্য
করলেন
এ
রূপ—ঠাকুরের
চিন্তাভাবনার
কেন্দ্রবিন্দুতে
ছিল
স্বাধীনতা—এমনকি
শিশুদের
জন্য।
শান্তিনিকেতনে
অধ্যয়নকালে
অমর্ত্য
ক্রমে
অনুধাবন
করতে
লাগলেন
যে
স্বাধীনতা
অনুশীলনের
সঙ্গে
যুক্তি
দেয়ার
ক্ষমতা
পক্বতর
করতে
হবে।
‘আপনার
যদি
স্বাধীনতা
থাকে,
এটা
প্রয়োগ
করার
কারণ
থাকবে—এমনকি
কিছু
না
করাও
এক
ধরনের
অনুশীলন।
এটা
হচ্ছে
যুক্তি
দেয়ার
স্বাধীনতার
প্রশিক্ষণ—বরং
ভয়
পাওয়া
নয়
যেটা
মুখস্থবিদ্যা
অর্জনকারীদের
শেখানো
হয়।
আমার
কাছে
মনে
হয়েছিল
এ
বিষয়টি
অন্যতম
একটা
যা
ঠাকুর
এ
অস্বাভাবিক
স্কুলের
মাধ্যমে
খুব
জোরালোভাবে
এগিয়ে
নিতে
চেয়েছিলেন।
স্বাধীনতা
এবং
যুক্তির
ব্যতিক্রমধর্মী
এ
সংযুক্তি
আমার
জীবনে
সবসময়
আমার
সাথে
ছিল।’
‘যতটুকু
আবশ্যক
কেবল
তাহারই
মধ্যে
কারারুদ্ধ
হইয়া
থাকা
মানবজীবনের
ধর্ম
নহে,
আমাদের
দেহ
সাড়ে
তিন
হাতের
মধ্যে
বদ্ধ,
কিন্তু
তাই
বলিয়া
ঠিক
সেই
সাড়ে
তিন
হাত
পরিমাণ
গৃহনির্মাণ
করিলে
চলিবে
না’—(রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর,
‘শিক্ষা’)।
আব্দুল বায়েস: অর্থনীতির অধ্যাপক; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির খণ্ডকালীন শিক্ষক