রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য

জুলাইয়ে সড়কে প্রাণ গেছে ১১৮ পথচারীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে গত জুলাই মাসে ৬৩২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৭৩৯ জন এবং আহত হয়েছেন ২০৪২ জন। নিহতদের মধ্যে ১১৮ জনই পথচারী,যা মোট প্রাণহানির ১৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

একমাসে নিহতের মধ্যে ১০৫ জন ছিলেন নারী। মৃত্যুর এ মিছিলে শিশুর সংখ্যা ১০৯। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২৯৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৫১ জন,যা মোট নিহতের ৩৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। একমাসে যানবাহনের চালক ও তাদের সহকারীর মৃত্যুর সংখ্যা ১৩৭। অর্থাৎ মোট মৃত্যুর ১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

আজ শনিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য পাওয়া যায়।

সেখানে বলা হয়, এই সময়ে ১৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত এবং সাতজন নিখোঁজ রয়েছে। ২৬টি রেলপথ দুর্ঘটনায় (রেলক্রসিং দুর্ঘটনাসহ) ৪১ জন নিহত এবং ৩৩ জন আহত হয়েছে।

তুলনামূলক চিত্রে বলা হয়, গত জুন মাসে প্রতিদিন গড়ে ১৫ দশমিক ৫৬টি দুর্ঘটনায় ১৭ দশমিক ৪৬ জন নিহত হয়েছিল। এই হিসাবে জুলাই মাসে দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩০ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। জুলাইয়ে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ জন, অর্থাৎ ২৪ জন। এ সময় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৫৮১ জন, অর্থাৎ ৭৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।

৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায় মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২৫১ জন (৩৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ), বাস যাত্রী ৬১ জন (৮ দশমিক ২৫ শতাংশ), ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি আরোহী ৫৫ জন (৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ), মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী ৫৭ জন (৭ দশমিক ৭১ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী ১৪৯ জন (২০ দশমিক ১৬ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী ২৬ জন (৩ দশমিক ৫১ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, প্যাডেল ভ্যান আরোহী ২২ জন (২ দশমিক ৯৭ শতাংশ) নিহত হয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২৫২টি জাতীয় মহাসড়কে, ১৯৯টি আঞ্চলিক সড়কে, ১০৯টি গ্রামীণ সড়কে ও ৬৪টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৮টি সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ১৪৫টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৫৭টি, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১২৭টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৮৬টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৭টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে; ১৯৯টি দুর্ঘটনায় ২২৮ জন নিহত হয়। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৩১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। একক জেলা হিসেবে গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি ৪৪ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও জেলায়। এই ৩টি জেলায় সাধারণ মাত্রার ১১টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ৪১টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত ও ৫৮ জন আহত হয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সড়ক দুর্ঘটনার ১০টি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছে। এগুলো হলো,  ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা,  বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সংস্থাটি ১০টি সুপারিশও করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়ানো, চালকদের বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করে দেয়া, বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়ানো, ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি ইত্যাদি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন