‘বেটউইনার নিউজ’-এর পণ্যদূত হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ফের বিতর্কের মুখে পড়েছেন সাকিব আল হাসান। বিসিবি বলছে, বেটিং প্রতিষ্ঠান বেটউইনারের এ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে কোনো অনুমোদন নেননি সাকিব। শেষ পর্যন্ত এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাকিবের চুক্তির ব্যাপারটি সত্যি হয়ে থাকলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে বিসিবি।
সম্প্রতি ‘বেটউইনার নিউজ’ নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে পণ্যদূত হিসেবে চুক্তি করেছেন সাকিব। তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এ-সংক্রান্ত পোস্টও করা হয়েছে। সাকিবের সঙ্গে চুক্তির কথা নিশ্চিত করেছে ‘বেটউইনার নিউজ’ নামের ওই ওয়েবসাইটও। বাংলাদেশ থেকে বেটউইনারের ওয়েবসাইটেও প্রবেশ করার সুযোগ নেই, কারণ সেটি ব্লক করা।
এর আগেও মাঠে ও মাঠের বাইরে বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এ পোস্টার বয়ের নাম। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ক্রিকেটের বাইরে গিয়ে শেয়ারবাজার থেকে শুরু করে স্বর্ণ ব্যবসার মতো নানা আর্থিক কর্মকাণ্ডে অনেক বড় পরিসরে জড়িয়েছেন সাকিব। এর মধ্যে কোনো কোনোটিতে জড়িয়েছেন বিতর্কিত উপায়ে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার ক্ষেত্রেও বিবিসি নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ না করার অভিযোগ রয়েছে জনপ্রিয় এ ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে।
২০১৭ সাল থেকে বিএসইসির শুভেচ্ছাদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন সাকিব আল হাসান। গত বছরের মে মাসে সংস্থাটির কাছ থেকে প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে তার মালিকানাধীন মোনার্ক হোল্ডিংস। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) জমা দেয়া নথিতে দেখা যায়, মোনার্ক হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান পদে নাম রয়েছে সাকিব আল হাসানের। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন পুঁজিবাজারে বহুল আলোচিত শেয়ার ব্যবসায়ী ও সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবুল খায়ের হীরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান। আর পরিচালক হিসেবে জাভেদ এ মতিন ও আবুল কালাম মাতবরের নাম রয়েছে।
শেয়ারবাজারের পর স্বর্ণ ব্যবসায়ও নাম লেখান এ তারকা ক্রিকেটার। গত বছর স্বর্ণের ব্যবসা শুরু করার আগে রেস্টুরেন্ট, কাঁকড়ার খামারসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় জড়ান সাকিব।
২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলছেন সাকিব আল হাসান। ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট, বিগ ব্যাশ, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, শ্রীলংকান প্রিমিয়ার লিগ, পাকিস্তান সুপার লিগসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই খেলছেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশী বিভিন্ন লিগে খেলে বিপুল পরিমাণ আয় করেছেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু বিদেশে খেলে উপার্জিত অর্থ তিনি দেশে আনেননি। উপার্জিত অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়েছেন সাকিব। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ রয়েছে তার। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন স্টেটে বাড়ি কিনেছেন সাকিব আল হাসান।
২০০৯ সাল-পরবর্তী সময় থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত ও পণ্যদূত হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হতে থাকেন সাকিব আল হাসান। ওই সময় ১৫ লাখ টাকায় শুভেচ্ছাদূত হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন একটি ব্যাংকের সঙ্গে। সে চুক্তির মাধ্যমেই দেশের ব্যাংক খাতের সঙ্গে পরিচয় ঘটে সাকিব আল হাসানের। তার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ব্র্যাক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডসহ বিভিন্ন ব্যাংকের শুভেচ্ছাদূত হয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে পেপসি, বাংলালিংক, ক্যাস্ট্রল, লাইফবয়, সিঙ্গার ইলেকট্রনিকস, নরটন অ্যান্টিভাইরাস, বুস্ট, লা রিভ, লেনোভো, রানার মোটরসাইকেল, জা’এনজি আইসক্রিম, টিফিন বিস্কুটসহ বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনী দূত হিসেবে কাজ করেছেন সাকিব আল হাসান। বিনিময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। পরিচয় ঘটেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, রাজনীতিকসহ ক্ষমতাশালীদের সঙ্গে।
তারকাদের আয় ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে এমন বেশকিছু ওয়েবসাইট থেকে সাকিব আল হাসানের মোট সম্পদের বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। ক্রিকট্রেকারের তথ্য বলছে, ২০১৬ সালে সাকিব আল হাসানের সম্পদের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৩ কোটি ডলার। আর ক্লাউডনেটওর্থের হিসাবে ২০১৯ সাল শেষে সাকিবের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। অন্যদিকে নেটওর্থআইডিয়ার মতে, ২০২১ সালে সাকিবের সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৪ কোটি ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় হিসেবে পাওয়া বেতন, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ থেকে আয়, পণ্যের দূত হিসেবে আয়সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসা থেকে আয়ের ভিত্তিতে সাকিব আল হাসানের মোট সম্পদের পরিমাণ হিসাব করেছে ওয়েবসাইটগুলো।
সাকিবের ‘বেটউইনার নিউজ’-এর পণ্যদূত হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভায় আলোচনা হয়। সভা শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, সাধারণত যেকোনো বাণিজ্যিক চুক্তির ক্ষেত্রে বিসিবির অনুমোদন নিতে হয় চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের। তবে এক্ষেত্রে সাকিব সেটি নেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুমতি নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ আমরা অনুমতি দেবই না। যদি বেটিং (সংশ্লিষ্ট) হয়ে থাকে, অনুমতি তো দেবই না। এটার মানে হচ্ছে, আমাদের কাছে অনুমতি চায়নি। এ রকম কিছু হলে সাকিবকে নোটিস পাঠানো হবে। তবে তার আগে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চায় বোর্ড।’ সাকিবের চুক্তির ব্যাপারটি নিশ্চিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাকিবের সঙ্গে কথা বলে দেখি। বাংলাদেশের আইনও এটির অনুমোদন দেয় না। অবশ্যই সিরিয়াস একটি ইস্যু। এটি সত্যি হয়ে থাকলে যা যা করার দরকার করব আমরা।’