যুবসমাজকে মেধা মননে বিকশিত হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবন থেকে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ছবি: পিআইডি

নিজেদের মেধা মননের বিকাশের মধ্য দিয়ে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মর্যাদা আরো উঁচুতে নিয়ে যেতে দেশের কিশোর তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল যে নীতি, আদর্শ, কর্মপন্থা, দিকনির্দেশনা রেখে গেছেন, আমি মনে করি তা অনুসরণ করে আমাদের শিশু যুবসমাজ নিজেদের গড়ে তুলবে। শুধু নিজের দেশের জন্য না, মেধা-মনন বিকশিত করে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যেন আমরা বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারি।

গতকাল শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তিনি।

খেলাধুলা সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে কামাল আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু আধুনিক ফুটবল, আবাহনী ক্রীড়া চক্র গড়ে তোলা এবং বিভিন্ন খেলাধুলায় শিশু থেকে শুরু করে তরুণ প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করার একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছে সে। পাশাপাশি সংগীতচর্চায় স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করে বিভিন্ন দেশীয় গানকে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রে তুলে তাকে জনপ্রিয় করার কাজটিও সে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করে গিয়েছে। কেননা বহুমুখী প্রতিভা নিয়েই জন্মেছিল শেখ কামাল। স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, বাসার ছাদে শেখ কামালের সংগীত দলের অনুশীলন চলত, যেখানে ফিরোজ সাঁই, ফেরদৌস ওয়াহিদ, নাসিরউদ্দিনসহ অনেকেই আসত।

ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, শেখ কামাল সেনাবাহিনীতে কমিশন পেলেও যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান শ্রেণীর লেখাপড়া তখনো শেষ হয়নি, তাই চাকরি ছেড়ে আবারো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু মাস্টার্সের রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার আগেই না ফেরার দেশে চলে যায়।

ক্রীড়াবিদ সংস্কৃতিকর্মীদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া উদ্যোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, যারা ক্রীড়া সংস্কৃতিচর্চার জগতে সম্পৃক্ত থাকেন তাদের কারো কারো জীবন একটা সময় খুব দুর্বিষহ হয়ে যায়। শেখ কামালই প্রথম ক্রীড়া জগতে সম্পৃক্তদের সহযোগিতার জন্য ফান্ড গঠন করেছিল। আমি সরকারে আসার পর তাদের জন্য বিভিন্ন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে দিয়েছি, সিড মানি দিয়েছি এবং আরো ফান্ড জোগাড় করে দেব, যেন তাদের আর কষ্ট করতে না হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা বয়সে আসলে তাদের আর অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকে না, সেটা যেন না হয় আমরা ব্যবস্থা নেব। খেলোয়াড়দের জন্য যেমন কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে, সাংস্কৃতিক জগতের জন্যও আমরা করে দিয়েছি। শিল্প-সংস্কৃতির জগতের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, তাদের জন্য ট্রাস্ট ফান্ড করে আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। কাজেই যেকোনো আপত্কালে তারা যেন চিকিৎসা বা অন্য কোনো সহযোগিতা পায় চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০২২ সালে সাতটি ক্যাটাগরিতে নয়জন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এবং দুটি প্রতিষ্ঠানকে শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

প্রবীণ ক্রীড়া সংগঠক হারুনুর রশীদ আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন এবং ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব বিভাগে লিটন কুমার দাস (ক্রিকেট), আবদুল্লাহ হেল বাকী (শুটিং) এবং মোল্লা সাবিরা সুলতানা (ভারোত্তোলন) পুরস্কার পেয়েছেন। উদীয়মান ক্রীড়াবিদ হয়েছেন দিয়া সিদ্দিক (তীরন্দাজি) মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম (ক্রিকেট) ক্রীড়া সংগঠক ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন সাইদুর রহমান প্যাটেল নাজমা শামীম।

এছাড়া ক্রীড়া সংস্থা বা ফেডারেশন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ অলিম্পিক সমিতি এবং ক্রীড়া পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড পুরস্কার লাভ করে। ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে কাশীনাথ বসাক পুরস্কার লাভ করেন।

যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশীদ এবং স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কাজী হাবলু স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শেখ কামালের জীবন কর্মের ওপর নির্মিত এক আলোর পথের যাত্রী শীর্ষক একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রী পরে শেখ কামালকে নিয়ে রচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল আলোকিত তারুণ্যের প্রতিচ্ছবি শীর্ষক সচিত্র স্মারক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন