নমপেনে ব্রুনাই দারুসসালামের দ্বিতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছবি: বাসস রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বৃহস্পতিবার কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক শীর্ষ প্রতিনিধি এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেল ফন্টেলেসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তাদের সহযোগিতা চান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, বৈঠকে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার অসাধারণ সাফল্যের কথা জানান পরারাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে সংকটের কথাও জোসেপ বোরেল ফন্টেলেসকে অবহিত করেন।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি অত্যন্ত জোরালোভাবে বৈঠকে উত্থাপন করে মোমেন বলেন, অনেক প্রচেষ্টার পরও গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখেনি।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, জাপান, কোরিয়া, ফ্রান্সের মতো দেশগুলোর মিয়ানমারের সঙ্গে অধিকতর বিনিয়োগ ও বাণিজ্য থাকায় তাদের দিক থেকেও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ বজায় রাখা প্রয়োজন।
বৈঠকে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে চাপ প্রয়োগের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যকর সমর্থন প্রত্যাশা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অন্যথায় মিয়ানমার ও বাংলাদেশ এমনকি সমগ্র অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেপ বোরেল ফন্টেলেসকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা সানন্দে গ্রহণ করেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
এদিকে মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ব্রুনাইয়েরও সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বৃহস্পতিবার কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে ব্রুনাই দারুসসালামের দ্বিতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো সেরি সেতিয়া হাজি এরিওয়ান বিন পেহিন দাতু পেকারমা জয়া হাজি মোহাম্মদ ইউসুফের সঙ্গে বৈঠকে এ অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকে তারা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং আগামী দিনে বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমত্কার সম্পর্ক আরো জোরদারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। ড. মোমেন বর্তমানে ২৯তম আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে কম্বোডিয়ায় তিনদিনের সরকারি সফরে রয়েছেন।
তিনি মিয়ানমারের নাগরিকদের বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা জানান এবং মিয়ানমারের ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে দ্রুত, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরিতে মিয়ানমারকে রাজি করাতে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর আরো সমন্বিত ও সক্রিয় সমর্থনের আহ্বান জানান। এ সময় ড. মোমেন আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার (এসডিপি) হওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষে ব্রুনাই দারুসসালামের সমর্থনও প্রত্যাশা করেন।
বৈঠকে তারা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, জলজ চাষ ও মৎস্য, জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও ওষুধ, সংযোগ (কানেক্টিভিটি), আইসিটি, পর্যটন, হালাল বাণিজ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, যুব ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা ত্বরান্বিত করতে সম্মত হন। ব্রুনাইয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো ইউসুফ মহামারির কারণে ২০২০ সালে স্থগিত হয়ে যাওয়া ব্রুনাইয়ের সুলতানের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ড. মোমেন এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান।
এদিকে আসিয়ান সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে জোটটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ভিয়েতনামের সমর্থন চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। নমপেনে ভিয়েতনামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুই থান সোনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ সমর্থন চান। এছাড়া মিয়ানমারের ওপর বন্ধুত্বপূর্ণ প্রভাব প্রয়োগ করে বাংলাদেশ থেকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে তিনি ভিয়েতনামের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।
