বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমা অব্যাহত রয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধি, রফতানিকারক দেশগুলোতে মজুদ বেড়ে যাওয়ায় এমন দরপতন হচ্ছে। দেশের বাজারেও আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার প্রভাব কিছুটা পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কমোডিটি এক্সচেঞ্জ শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে গত ২৮ জুলাই সয়াবিন তেলের দর উঠেছিল টনপ্রতি ১ হাজার ৪৫১ ডলার। গত বুধবার এ দর নেমে আসে টনপ্রতি ১ হাজার ৪৩৪ ডলারে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে সয়াবিনের টনপ্রতি দর কমেছে ১৭ ডলার। সয়াবিনের চেয়ে বেশি কমেছে পাম অয়েলের দাম। গত ২৮ জুলাই পাম অয়েলের দর উঠেছিল ৮৮৮ ডলারে। তবে বুধবার এ দর ৮৬৬ ডলারে নেমে এসেছে।
দেশে সয়াবিন তেলের বড় অংশ বেচাকেনা হয় বোতলজাত হিসেবে। এখন বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সর্বশেষ গত ২১ জুলাই প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে দাম কমানোর পর প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি ১৪৭ টাকা ও প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের দাম দাঁড়িয়েছে ১২৫ টাকায়।
এদিকে ভোজ্যতেলের দাম কমানো হলেও তা যৌক্তিক নয় বলে দাবি করেছেন ভোজ্যতেল সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত দাম সমন্বয়ের পাশাপাশি রেকর্ড পরিমাণ কমানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে দুই দফায় সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ৪৫ টাকা বাড়ানো হলেও দাম কমানোর ক্ষেত্রে ধীর নীতিতে রয়েছে কোম্পানিগুলো।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, চলতি বছরের মার্চে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত পাম অয়েলের সর্বোচ্চ দাম ওঠে ১ হাজার ৭৭৭ ডলার। সয়াবিনের দাম মার্চে ওঠে ১ হাজার ৯৫৭ ডলার, এপ্রিলে ১ হাজার ৯৪৮ ও মে মাসে ১ হাজার ৯৬৩ ডলারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশে বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিনের দাম ২০৫ টাকায় নির্ধারণ করে মিল মালিকদের অ্যাসোসিয়েশন ও সরকার। তবে দুই মাস ধরে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম টানা কমতে থাকলে সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে পাম অয়েলের লিটারপ্রতি দাম ৬ টাকা কমিয়ে করা হয় ১৫৬ টাকা।
দেশের ব্যবসায়ীরা মূলত মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে হালকা পরিশোধিত আকারে ও বিডি পাম অয়েল আমদানি করে। আর অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি করে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে। বছরে ২১ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়। এছাড়া মাড়াই করে পাওয়া যায় আরো তিন লাখ টন সয়াবিন।
কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দরপতন যেভাবে হয় দেশের বাজারে সেভাবে দাম কমানো হয় না। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে দেরি করেন না আমদানিকারকরা।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেশ কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে এ ভোজ্যতেলের দাম সেভাবে কমেনি। পাইকারি কিংবা খুচরা বাজারে এখনো বেঁধে দেয়া দামের বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। সেজন্য দেশের বাজারে সে অনুপাতে দাম সমন্বয় হওয়া প্রয়োজন। দাম সমন্বয়ের বিলম্বের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তারা। যার কারণে বড় অংকের মুনাফা ভোগ করছেন ব্যবসায়ী কিংবা আমদানিকারকরা।
ভোজ্যতেল বিপণনকারী কোম্পানি টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে বাড়তি দামের কারণেই দর বাড়ানো হয়েছিল। আবার বিশ্ববাজারে দাম কমার কারণে দেশের বাজারেও দাম কমে এসেছে। তবে এটাও সত্যি দেশে ডলারের দাম ৮৫ থেকে বেড়ে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যে দরে ঋণপত্র খোলা হয়, পরে আমদানি বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে অনেক চড়া দরে।’
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে রুশ হামলার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারেও তেলের দাম বেড়ে গেলে গত ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি ও স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের সুপারিশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশে নামিয়ে আনে। সুযোগটি আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাখা আছে। বর্তমানে পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পরিশোধিত পাম অয়েলের স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট নেই।