এ যেন এলভিসের পুনর্জন্ম

আসরার আবেদিন

তারকারা যে উন্মাদনা সৃষ্টি করেন, তা টিকে থাকে বছরের পর বছর। এমনো হয়, মৃত্যুর পর তাদেরই কোনো কাজ তাদের পুনর্জীবিত করে। আবার কখনো কখনো তাদের জীবনভিত্তিক বই, সিনেমা থেকে তারা নবজীবন লাভ করেন। এলভিস প্রিসলি তার জীবনেই কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। আজ অবধি তাকে অনুসরণ, অনুকরণ করেন বহু শিল্পী। তাকে নিয়ে কথা হবে, লেখা হবে এটাই স্বাভাবিক। তাকে নিয়ে সম্প্রতি নির্মিত হয়েছে এলভিস বাজ লুরম্যান পরিচালিত সিনেমাটিতে এলভিসের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অস্টিন বাটলার।

এলভিস তৈরি করার ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই সিনেমাটি নিয়ে নানা ধরনের গুঞ্জন উঠেছিল। প্রথমত, সিনেমাটি আদৌ এলভিসকে ফুটিয়ে তুলতে পারবে কিনা। অস্টিনের মতো তরুণ অভিনেতাকে এলভিসের চরিত্রে কাস্ট করা ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক চলেছে বহুদিন। কিন্তু বিতর্ক প্রায় যুক্তিহীন। কেননা ১৯৭৯ সালে নির্মিত জন কার্পেন্টারের সিনেমায় কার্ট রাসেল যখন এলভিসের চরিত্রে অভিনয় করেন তখন তার বয়স ২৮ বছর। ১৯৯৩ সালে নির্মিত এলভিস অ্যান্ড দ্য কর্নেল সিনেমায় অভিনয়ের সময় রব ইয়ংব্লাডের বয়স ছিল ২৪ বছর।

বায়োপিকে একটা চ্যালেঞ্জ থাকে। ব্যক্তিকে স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তোলা। পোশাক-আশাক মেলানোর পাশাপাশি হাঁটাচলা, বাচনভঙ্গি মেলাতে হয়। এসব ক্ষেত্রে কিছু বিষয় নির্ভর করে পরিচালকের ওপর। কখনো তিনি মুখ্য চরিত্রকে সে চরিত্রের সময় পরিবেশের সঙ্গে মিলিয়ে উপস্থাপন করেন। কখনো নিজের মতো করে খানিক পরিবর্তন করেন। এলভিসের ক্ষেত্রে বাজ লুরম্যান কিছুটা স্বাধীনতা নিয়েছেন। এলভিসের সময়কে স্পষ্ট করে উপস্থাপন করলেও এলভিসের চরিত্রে অস্টিনকে কিছুটা নিজের মতো করে সাজিয়েছেন লুরম্যান। বাটলারের পোশাক থেকে শুরু করে তার অভিব্যক্তির ক্ষেত্রে সে স্বাধীনতার প্রকাশ দেখা গিয়েছে। লুরম্যান এলভিসের জীবন থেকে শুরু করে স্টারডম সবকিছুই এনেছেন মেপে মেপে।

অস্টিন বাটলারের অভিনয় সিনেমার অন্যতম সফল কাজ। লুরম্যান তার মধ্য থেকে এলভিসকে বের করে এনেছেন। গল্পের শুরু থেকেই এলভিসের মধ্যে গানের পাশাপাশি এক ধরনের পাগলামি ছিল। সুপারস্টার হওয়ার সময়টা পুরো ধরার ক্ষেত্রে কিছুটা তাড়া ছিল বলে মনে হতে পারে। অর্থাৎ, গল্পের ধাপগুলো একটার পর একটা খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছিল। জায়গায় আরো সময় নেয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু এলভিসের সাফল্য আসার পাশাপাশি দেশজুড়ে তাকে নিয়ে বিতর্ক সমালোচনার বিষয়গুলো লুরম্যান এনেছেন। আর এখানে মুখ্য হয়ে উঠেছেন টম হ্যাংকস। মজার ব্যাপার সিনেমায় এলভিসের পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র কর্নেল টম পারকার। বলা হয়, পারকারের হাতের পুতুল ছিলেন এলভিস। লুরম্যানের সিনেমার গল্প অনুসারে পারকারই এলভিসের আবিষ্কারক এবং এলভিসকে তিনিই স্টার করে তোলেন।

এলভিসের ক্যারিয়ারে কর্নেলের প্রভাব নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রিসলিকে পুতুল হিসেবে ধরে নিয়ে পারকারকে পুতুল নাচের কারিগর বলা হয়। উইলিয়াম গ্রাহামের ১৯৯৩ সালের সিনেমাটির নামই ছিল এলভিস অ্যান্ড দ্য কর্নেল: অ্যান আনটোল্ড স্টোরি লরম্যানের সিনেমায় অনেকখানি আলো কেড়ে নিয়েছেন কর্নেলরূপী টম হ্যাংকস। প্রিসলির জীবনকে মোটামুটি তিন অধ্যায়ে ভাগ করে দেখানো হয়েছে। প্রথমার্ধ রীতিমতো দ্রুত তারুণ্যে ভরপুর। তৃতীয় অংশে সংকট দুরাশার মেঘ ঘনীভূত করেন পরিচালক। সিনেমার অভিনেতা অভিনেত্রীর তালিকা দীর্ঘ। তাদের পারফরম্যান্স আলাদা করে উল্লেখ করা কঠিন। অভিনয়ের বাইরে এলভিসের সময় সমাজ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে লুরম্যান যথাযথ ছিলেন। সিনেমার গল্প নির্মাণের পাশাপাশি সংগীতের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এলভিসের স্টেজ পারফরম্যান্সের চমত্কার রূপায়নটা এলিয়ট হুইলারের অসাধারণ মিউজিক ছাড়া সম্ভব হতো না। দুর্দান্ত সংগীতের সঙ্গে বাটলারের এনার্জির কারণে এলভিসের প্রতিটা পারফরম্যান্স দর্শককে নাচতে বাধ্য করে।

এলভিসের এলোমেলো জীবন আর তার যাত্রার সঙ্গে চল্লিশ, পঞ্চাশ, ষাট সত্তর দশকের আমেরিকার সমাজ, সংগীত, শোবিজ থেকে শুরু করে বাণিজ্যের নানা দিক উঠে এসেছে বাজ লরম্যানের সিনেমায়। এলভিসের জন্য যেমন তরুণীরা অধীর হয়ে যেতেন, সিনেমায় বাটলারের চাহনিতে বহু তরুণীর স্পন্দন থামিয়ে গিয়েছে। বাটলারের চাহনি, পারকারের চরিত্রে হ্যাংকসের মাপা অভিনয় আর লুরম্যানের নিজের দৃষ্টিকোণ মিলিয়ে সিনেমা হয়ে উঠেছে এলভিসের নতুন উপস্থাপন। যেখানে এলভিস তার বাস্তবতা আরো স্পষ্ট। লুরম্যান কোনো বক্তব্যে ইতস্তত করেননি। যেমন করেননি খোদ এলভিস। তাই সিনেমাটি দেখে মনে হবে রকস্টারের পুনর্জন্ম হলো!

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন