প্রান্তিক পর্যালোচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক

পোশাক তৈরিতে আমদানীকৃত কাঁচামালের ব্যবহার বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের প্রধান রফতানি পণ্য পোশাক তৈরির প্রধান কাঁচামাল সুতা কাপড়। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারিত মানের কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিতে আমদানিনির্ভরতার পাশাপাশি সুতা-কাপড়ের স্থানীয় উৎপাদন সক্ষমতাও রয়েছে বাংলাদেশের। অর্থমূল্য বিবেচনায় গত ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি করা কাঁচামালের ব্যবহার বেড়েছে।

পোশাক রফতানির গতি-প্রকৃতি নিয়ে নিয়মিতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের এক্সটারনাল ইকোনমিক্স শাখা থেকে প্রকাশ করা হয় তৈরি পোশাকের প্রান্তিক পর্যালোচনা শীর্ষক প্রতিবেদন। আগস্ট প্রকাশ পেয়েছে এপ্রিল থেকে জুনের রফতানি পরিসংখ্যান নিয়ে পর্যালোচনার সর্বশেষ সংস্করণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রান্তিক পর্যালোচনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট হাজার ১৪৫ কোটি ৬৭ লাখ ৩০ হাজার ডলারের পোশাক রফতানি হয় বাংলাদেশ থেকে, যা তৈরিতে হাজার ২৮৫ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারের কাঁচা তুলা, কৃত্রিম সুতা, তুলাজাত সুতা এবং বস্ত্র অ্যাকসেসরিজের মতো কাঁচামাল আমদানি করা হয়। সে হিসেবে মোট রফতানির ৪০ দশমিক ৮৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয় পোশাকের কাঁচামাল আমদানি বাবদ।

এদিকে গত জুনে সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট পোশাক রফতানির অর্থমূল্য ছিল হাজার ২৬১ কোটি ডলার। পরিমাণ অর্থের পোশাক তৈরিতে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি হয়েছে হাজার ৯৪৩ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ডলারের। সে হিসেবে পোশাক রফতানির মোট অর্থমূল্যের ৪৫ দশমিক ৬১ শতাংশ ব্যয় হয়েছে কাঁচামাল আমদানিতে। গত অর্থবছরে ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় আমদানীকৃত কাঁচামালের ব্যবহার বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনার সঙ্গে সহমত পোষণ করছেন পোশাক প্রস্তুত রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আমদানি ব্যয় বেড়েছে। বিশেষ করে আমদানি পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এর ফলে মূল্য সংযোজনের হারও কমেছে। পোশাকের ভ্যালু অ্যাডিশন আরো বৃদ্ধি পেলে রফতানি মূল্যও বেশি পাওয়া সম্ভব।

সারা বিশ্বেই ফ্যাব্রিকের গঠন পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে জানিয়ে শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, যেখানে ৭০ শতাংশই কটন ব্যবহার করা হতো, বর্তমানে সেখানে ৭০ শতাংশ কৃত্রিম তন্তু ব্যবহূত হচ্ছে। কটন আর কৃত্রিম তন্তু ব্যবহার করে একটি টি-শার্ট বানাতে একই সময় লাগে। কিন্তু কৃত্রিম তন্তুর ক্ষেত্রে দাম বেশি পাওয়া যায়। এতে রফতানি মূল্য বেড়ে যায় ২০-৩০ শতাংশ।

পর্যালোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে মোট পোশাক রফতানি অর্থমূল্যের ৪৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ ব্যয় হয়েছে কাঁচামাল আমদানি বাবদ। নিট রফতানির (রফতানি মূল্য থেকে কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ বাদ দিয়ে প্রকৃত রফতানি) অর্থমূল্য ছিল ৬০৪ কোটি ৫৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের তুলনায় যা ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কয়েক মাস ধরে বেশ উৎসাহব্যঞ্জক। তবে পোশাক পণ্যে পরবর্তী ধাপের রফতানি প্রবৃদ্ধি প্রতিযোগিতা সক্ষমতার জন্য উদ্ভাবনের গতি এবং ডিজিটালাইজেশনে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। এছাড়া ফাস্ট ফ্যাশন বৈচিত্র্যময় পণ্যের চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার তাগিদও দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের কর্মীদের জ্ঞান দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজস্ব ব্র্যান্ড উন্নয়নের পরামর্শও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের পর্যালোচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, দেশের মোট রফতানির ৮৫ দশমিক ৩৫ শতাংশই তৈরি পোশাক শিল্পের ওভেন নিটওয়্যার পণ্য। খাতের প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখতে বিভিন্ন ধরনের সহায়ক পদক্ষেপের সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব পদক্ষেপের মধ্যে আছে কম দামে কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিত করা, উৎপাদনের লিড টাইম হ্রাস করা, বিভিন্ন স্বল্পমূল্যের পুনঃঅর্থায়ন স্কিম নিশ্চিত করা, ব্যবসা সহজীকরণ এবং মৌলিক কম মূল্যের পরিবর্তে বৈচিত্র্যময় পণ্য রফতানি করা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন