দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম কমেছে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৫৪ থেকে কমে ১ হাজার ২১৯ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এ ওজনের প্রতি সিলিন্ডারে দাম কমেছে ৩৫ টাকা। গতকাল বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নতুন দাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারি পর্যায়ে সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দামের পরিবর্তন হয়নি। সেটির দাম ৫৯১ টাকাই রয়েছে। এছাড়া গাড়িতে ব্যবহূত অটোগ্যাসের দাম প্রতি লিটারে ৫৮ টাকা ৪৬ থেকে কমিয়ে ৫৬ টাকা ৮৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে সৌদি আরামকো কোম্পানির প্রপেন ও বিউটেনের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি মাসেই এলপিজির দাম ঘোষণা করছে বিইআরসি।
গত বছর ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। তার পর থেকে প্রতি মাসে একবার দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। এর আগে বছরের শুরুতেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজারজাত করা এলপিজি দাম বাড়ানো হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির কাঁচামালের দাম ১৫-২২ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাহক পর্যায়ে পণ্যটির দাম বাড়াতে হয়েছে। অন্যদিকে এলপিজির আকস্মিক এ মূল্যবৃদ্ধির ফলে ভোগান্তিতে পড়েন সীমিত আয়ের সাধারণ ভোক্তারা।
এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এ দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এ সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি। গতকাল দাম ঘোষণার সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী, আ ব ম ফারুক, বজলুর রহমান ও মো. কামরুজ্জামান।
দেশের বাজারে সাড়ে পাঁচ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডারের দাম ৫৫৯ টাকা, ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২১৯, সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৭১, ১৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ৫২৪, ১৬ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ৬২৬ টাকা হবে। এছাড়া ১৮ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ৮২৯ টাকা, ২০ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২ হাজার ৩৩, ২২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২ হাজার ২৩৬, ২৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২ হাজার ৫৩৯, ৩০ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৩ হাজার ৪৯, ৩৩ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৩ হাজার ৩৫৪, ৩৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৩ হাজার ৫৫৫ এবং ৪৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৪ হাজার ৫৭৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগস্টের জন্য সৌদি আরামকোর সিপি মূল্যে প্রপেন ও বিউটেনের মিশ্রণের প্রতি টনের গড় মূল্য ধরা হয়েছে ৬৬৩ দশমিক ৫০ ডলার, জুলাইয়ে এ দাম ৭২৫ মার্কিন ডলার ছিল। আগস্টে কমলেও জুলাইয়ে এলপিজির দাম বেড়েছিল কেজিতে ১ টাকা।
এর আগে গত জুলাইয়ে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির দাম বাড়িয়েছিল বিইআরসি। ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৪২ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ২৫৪ টাকা করা হয়েছিল। আর গত জুনে ভোক্তা পর্যায়ে এ গ্যাসের দাম ৯৩ টাকা কমানো হয়েছিল। তবে সে সময়ও সরকারি পর্যায়ে সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের মূল্য পরিবর্তন হয়নি।
ক্রমবর্ধমানভাবে দেশে এলপিজির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে তা ১০ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। প্রতি বছর এলপিজির চাহিদা বাড়ছে। মোট ১৮টি কোম্পানি গ্রাহকের কাছে এলপি গ্যাস সরবরাহ করছে। যার মধ্যে মাত্র ২০ হাজার টন সরকারি এলপি গ্যাস কোম্পানি সরবরাহ করছে। বাকিটা বেসরকারি এলপিজি কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে। রাষ্ট্রায়ত্ত এলপি গ্যাস কোম্পানির বাজারজাত করা এলপিজি সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হয়। সাড়ে ১২ কেজির প্রতি সিলিন্ডার এলপিজি ৬০০ টাকায় বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
