শেষ পাতা

হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে গতকাল টি২০ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ১০ রানে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। এ ম্যাচে একাধিক রেকর্ডের সঙ্গী হয়েছে ক্রেগ আরভিনের দল। তিন ম্যাচের সিরিজটা ২-১-এ জিতে নিয়েছে স্বাগতিকরা।

ওপরের র্যাংকধারী কিংবা আইসিসির পূর্ণ সদস্য কোনো দেশের বিপক্ষে এ প্রথম টি২০ সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব দেখাল জিম্বাবুয়ে। এছাড়া সাতবারের চেষ্টায় এ প্রথম বাংলাদেশকে টি২০ সিরিজে হারাল তারা। এর আগের ছয়টি টি২০ সিরিজের মধ্যে তিনটিই জিতে নেয় বাংলাদেশ, আর তিনটি হয় ড্র। এবার উইনিং চার্টে নাম উঠল জিম্বাবুয়েরও।

সম্প্রতি টি২০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়া জিম্বাবুয়ে ২০১০ সালে একমাত্র টি২০ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায়, ২০২১ সালে তারা ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এবং তিন বছর আগে সিঙ্গাপুরে ত্রিদেশীয় সিরিজও জয় করে, যাতে তৃতীয় দল ছিল নেপাল। কিন্তু এ প্রথম দুই জাতির টি২০ সিরিজে তারা পূর্ণ সদস্য কোনো দেশকে হারানোর কৃতিত্ব দেখাল।

টস জিতে ব্যাটিং নেয়া জিম্বাবুয়ে ৬৭ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারালেও শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ১৫৬ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় বার্ল ও জঙ্গোইর বীরত্বপূর্ণ ব্যাটিংয়ে। পরে বোলিংয়েও দুর্দান্ত পারফর্ম করে স্বাগতিকরা। চাপের মুখে অতিথিরা ৮ উইকেটে ১৪৬ রান তুলতে সমর্থ হয়।

জিম্বাবুয়ের ভিক্টর নিয়াউচি (৩/২৯) ও ব্র্যাড ইভানসের (২/২৬) দারুণ বোলিংয়ের মুখে বাংলাদেশের কেউই প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি হয়ে ওঠার মতো ব্যাটিং করতে পারেননি। আফিফ হোসেনের ২৭ বলে খেলা ৩৯ রানের হার না মানা ইনিংসটা শুধু হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। এছাড়া মাহমুদউল্লাহ ২৭ বলে ২৭, মেহেদী হাসান ১৭ বলে ২২ রান করেন। ৩৪ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারানো বাংলাদেশ একটি পর্যায়ে ৪৯ বলে কোনো বাউন্ডারি পায়নি। এতে জয়ের সম্ভাবনা ক্রমেই কমতে থাকে সফরকারী দলের। 

এর আগে ৬ উইকেট পতনের পর লুক জঙ্গোইকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে ৭৯ রান বোর্ডে তুলে জিম্বাবুয়েকে চাপমুক্ত করেন বার্ল। জঙ্গোই ২০ বলে ৩৫ ও বার্ল ২৮ বলে ৫৪ রান করেন। এ পথে নাসুম আহমেদের এক ওভার থেকেই ৫ ছক্কা ও এক চারের সাহায্যে ৩৪ রান তোলার কৃতিত্ব দেখান বার্ল, যা টি২০ ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বিগ হিটার বার্ল বাংলাদেশের কাছে মোটেও অপরিচিত নাম নন। তিন বছর আগে সাকিব আল হাসানের এক ওভার থেকে তিনি ৩০ রান তুলেছিলেন। কাল তিনি ইনিংস সাজান ৬টি ছক্কা ও দুটি চারের সাহায্যে।

শেষ দিকে মাত্র ৫.১ ওভারে ৭৯ রানের জুটি গড়েন বার্ল ও জঙ্গোই। টি২০ ক্রিকেট ইতিহাসে সপ্তম উইকেটে পঞ্চাশের বেশি রান উঠেছে এমন কোনো জুটিরই এত বেশি স্ট্রাইট রেট নেই।

অথচ বার্ল ও জঙ্গোইর অভাবনীয় ব্যাটিংয়ের আগে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ। নাসুম নিজের প্রথম বলেই রেগিস চাকাভাবে আউট করেন। ষষ্ঠ ওভারে পরপর দুই বলে ওয়েসলে মাদেভেরে ও সিকান্দার রাজাকে সাজঘরে ফেরান আরেক স্পিনার মেহেদী হাসান। মাত্র ২ রানে শন উইলিয়ামস শিকার হন মোসাদ্দেক হোসেনের।

নুরুল হাসান সোহানের চোটে দলে আসা মাহমুদউল্লাহ প্রথম বলেই আউট করেন ক্রেগ আরভিনকে। তার বলে আরভিনকে স্ট্যাম্পিং করেন এনামুল হক বিজয়। এরপর মিলটন মুম্বাকে (৪) দ্রুতই ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান।

এ ৬ উইকেট পতনে স্বাগতিকরা যখন ধুঁকছিলেন তখন সাহসী ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ের চিত্রটাই পাল্টে দেন বার্ল ও জঙ্গোই। এ দুজনকে আউট করে জিম্বাবুয়ের রানটা ১৬০-এর নিচে রাখতে ভূমিকা রাখেন পেসার হাসান মাহমুদ।

এ ম্যাচে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। মুনিম শাহরিয়ারের জায়গায় আসেন পারভেজ হোসেন ইমন। এছাড়া উইকেট কিপার ব্যাটার সোহান ও পেসার শরিফুল ইসলামের জায়গায় একাদশে এসেছেন যথাক্রমে অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ ও স্পিনার নাসুম আহমেদ।

৫ আগস্ট শুরু হবে ওয়ানডে সিরিজ। সিরিজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচ যথাক্রমে ৭ ও ১০ আগস্ট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ১৫৬/৮ (বার্ল ৫৪, জঙ্গোই ৩৫, আরভিন ২৪; হাসান ২/২৮, মেহেদী ২/২৮)। বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৬/৮ (আফিফ ৩৯, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মেহেদী ২২; নিয়াউচি ৩/২৯, ইভানস ২/২৬)। ফল: জিম্বাবুয়ে ১০ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রায়ান বার্ল (জিম্বাবুয়ে)। ম্যান অব দ্য সিরিজ: সিকান্দার রাজা (জিম্বাবুয়ে)। সিরিজ: জিম্বাবুয়ে ২-১-এ জয়ী।