প্রত্যেকের বছরে একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে

বিশ্বে ৪৬ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে বাংলাদেশে রোগীর সংখ্যা ৮৬ লাখেরও বেশি। দুই ধরনের ডায়াবেটিসের মধ্যে মানুষ টাইপ- তেই ৯৫ ভাগ আক্রান্ত হয়ে থাকে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান কারণই হলো ইন্টেস্টিনাল অ্যালকেলাইন ফসফেটাস (আইএপি) লেভেল বেড়ে যাওয়া। সঠিক সময়ে রোগীরা ডায়াবেটিস শনাক্ত করে নিয়ন্ত্রণে রাখলে দেহের দীর্ঘমেয়াদি রোগ হওয়ার ঝুঁকি থেকে বেঁচে থাকতে পারে। তবে রোগটি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে ডায়াবেটিস সম্পর্কে তাকে শিক্ষিত হতে হবে। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. কে আজাদ খান। সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

ডায়াবেটিস রোগীরা নিজের রোগ সম্পর্কে অবগত না হওয়ার কারণ কী?

বিশ্বের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৫০ ভাগই জানে না তার রোগ রয়েছে। তবে দেশে হার তুলনামূলক কম আছে। দুই ধরনের ডায়াবেটিসের টাইপ- তেই ৯৫ ভাগ আক্রান্ত হয়ে থাকে। অন্য কোনো রোগ শনাক্ত করতে গিয়ে মূলত রোগ ধরা পড়ে। সাধারণত নিয়মিত চেকআপ করার প্রয়োজন মনে করে না অনেকে।

ডায়াবেটিস শনাক্তের উপযুক্ত সময় কোনটি?

রোগটি যত তাড়াতাড়ি শনাক্ত হবে ততই ভালো। কারণ ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তাহলে সব ধরনের জাটিলতা দূর করা যায়। তাছাড়া অন্যান্য জটিলতা নিয়ে রোগটি শনাক্ত হলে এসব জটিলতা তো সহজেই দূর করা যায় না। প্রথম দিকে শনাক্ত করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দেহের অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা কম। বিশেষ করে ব্রেইন স্ট্রোক, চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক, নিওরোপ্যাথি, কিডনি বিকল হওয়া রোধ করা যায়।

যেকোনো বয়সী মানুষেরই কি ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা উচিত?

একটা বয়সের পর সবারই উচিত প্রতি এক বছর পর পর ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করা। সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। কিন্তু যাদের বংশগত ডায়াবেটিস রয়েছে অথবা যাদের শারীরিক অবস্থা কাজ করার মতো নয় কিংবা যাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের আগেই করা উচিত। সঠিক সময়ে ডায়াবেটিস শনাক্ত করে দেহে দীর্ঘমেয়াদি রোগ হওয়ার ঝুঁকি থেকে বাঁচা সম্ভব।

কী কী দীর্ঘমেয়াদি রোগ ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী?

শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গই ডায়াবেটিসের কারণে ক্ষতি হয়। বিশেষ করে ব্রেইন স্ট্রোক, চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক, নিওরোপ্যাথি, কিডনি বিকল হওয়া পায়ে পচন ধরা।

ডায়াবেটিসের সঙ্গে উচ্চরক্তচাপের সম্পর্ক কী?

যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের উচ্চরক্তচাপ হবে। আর যাদের উচ্চরক্তচাপ আছে তাদের ডায়াবেটিস থাকার সম্ভাবনা বেশি।

রোগটি নিয়ন্ত্রণে একজন রোগীর কী করণীয়?

ডায়াবেটিস রোগীদের তিনটি বিষয়ে খুবই নজর দিতে হবে। খাবার, কায়িক পরিশ্রম ওষুধ। যেসব খাবারে সুগার যুক্ত সেসব খাবার পরিহার করা। যেমন চিনিযুক্ত খাবার, মিষ্টি রসালোযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। এছাড়া যেসব আক্রান্ত রোগীর ওজন বেশি তাদের ওজন কমাতে হবে। বিপরীতে যাদের ওজন কম তাদের স্বাভাবিক ওজনে আসতে হবে।

ডায়াবেটিস কি শতভাগ নিয়ন্ত্রণযাগ্য?

নিয়ন্ত্রণ হয় না এমন কোনো ডায়াবেটিস নেই। তবে রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে ডায়াবেটিস সম্পর্কে তাকে শিক্ষিত হতে হবে। যেমন একটা লোকের ইনসুলিন নিতে হচ্ছে, এখন সে করে কি যখন খায় তখন ইনসুলিন নেয় না, আবার যখন খায় না তখন ইনসুলিন নিয়ে নেয়, তাহলে এটি সাংঘর্ষিক হয়ে গেল না? কারণ যদি ইনসুলিন বাইরের থেকে দিই সে তো কাজ করবেই! সে মুহূর্তে না খেলে হাইপো হয়ে যাবে তার। কারণ একজন সুস্থ লোকের যতখানি ইনসুলিন দরকার শরীর ঠিক ততখানি ইনসুলিন তৈরি করে। যেটা ডায়াবেটিসের রোগীরা কখনো পারে না।

দেশে ডায়াবেটিস সচেতনতা যে পর্যায়ে রয়েছে সেটি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে আরো কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?

প্রথম কথা হচ্ছে তামাকের সবকিছুই যেমন ক্ষতিকর, ঠিক তেমনই ডায়াবেটিসের সবদিকই ক্ষতিকর। এটি সবাইকে জানতে হবে। তামাকের উৎপাদন সংশ্লিষ্ট সবকিছু যেমন নিষিদ্ধ করা জরুরি, ঠিক তেমনই ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে এমন কিছু থেকে দূরে থাকাও জরুরি। আমাদের কীভাবে বললে মানুষ শুনবে বা সচেতন হবে সেটা আমাদের বুঝতে হবে এবং সচেতন করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন