ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের করণীয়

ডায়াবেটিস রোগীদের বাঁচাতে হলে প্রথমেই তাদের ডায়াবেটিসের লেভেল কতটুকু থাকা উচিত সেটি জানা দরকার। পাশাপাশি শরীরের অন্য রোগগুলো নিয়ন্ত্রণ করলে ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা ৭০ ভাগ কমানো যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের অন্যতম শর্ত চারটি ডি মেনে চলা। সেগুলো হলো ড্রাগ, ডিসিপ্লিন, ডায়েট ড্রিম। অর্থাৎ ওষুধ, শারীরিক পরিশ্রম, খাদ্যাভ্যাস ঘুমানো।

ওষুধ: ওষুধের মধ্যে রয়েছে ইনসুলিন এবং ট্যাবলেট। কারো যদি শারীরিক অবস্থা জটিল না থাকে তাহলে ট্যাবলেট দিয়ে চিকিৎসাা শুরু হয়। অনেক ডায়াবেটিস রোগীকে ছয়-সাত বছর পর্যন্ত ট্যাবলেট সেবনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিস যত বেশি সময় ধরে আমাদের শরীরে থাকে, ধীরে ধীরে শরীরের ইনসুলিন তত কম তৈরি করে। ফলে ডায়াবেটিস শুরুর ছয় বছর পর ৫০ ভাগ মানুষ ইনসুলিননির্ভর হয়ে পড়ে। এজন্য আক্রান্ত হওয়ার শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলতে হবে। চিকিৎসকরা রোগের শুরুর দিকে দুই-একটা ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনেন। তারপর এতে নিয়ন্ত্রণে না এলে ইনসুলিন দেন। বর্তমানে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আধুনিক কিছু ট্যাবলেট ইনজেকশন রয়েছে। যেগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কিডনি, হার্ট অ্যাটাকের প্রতিরোধ ওজন নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে। নতুন ওষুধগুলো ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সুবিধা এনে দিয়েছে। যদিও ওষুধগুলো ব্যয়বহুল। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করলে রোগীকে জটিলতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

খাদ্যাভ্যাস: ডায়াবেটিসের রোগীদের অল্প অল্প করে বারবার খেতে হবে। যেমন প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে সকালের নাশতা খেয়ে নেবেন। বেলা ১১টায় হালকা নাশতা খাবেন। দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিরতি দিয়ে বিকালে হালকা নাশতা খেতে পারেন। এরপর রাত ৯টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নেবেন। সবশেষ রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে রাত ১০টা-১১টার মধ্যে হালকা নাশতা খাবেন। এভাবে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে, রোগটি আর ওঠানামা করবে না। তবে সুষম খাদ্য ডায়াবেটিস রোগীর জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে। আমরা ছোটবেলা থেকেই পড়ে এসেছি, খাবারের মধ্যে ফ্যাট, মিনারেল, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এগুলো যদি আনুপাতিক হারে থাকে তবেই ডায়াবেটিস রোগীর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে। দেশে অনেক ফ্যাশনেবল ডায়েট রয়েছে। যেমন কিটো ডায়েট। ধরনের বিভিন্ন ডায়েট ডায়াবেটিক রোগীর জন্য বেশ ক্ষতিকর। তাই আমাদের সুষম খাবার খেতে হবে। সরাসরি চিনি, মিষ্টি ফলের জুস খাওয়া যাবে না। তবে ফল খাওয়া যাবে। পুরো ফলটা চিবিয়ে খেলে ফলের মধ্যে থাকা ফাইবার আমাদের শরীরের উপকার করে। ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড খাওয়া এড়িয়ে যেতে হবে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ধূমপান পরিহার করতে হবে। কারণ ধূমপানের কারণে ডায়াবেটিক রোগীদের হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোক, চোখের অন্ধত্ব অন্যদের তুলনায় অনেক আগেই হতে পারে। সুতরাং ধূমপান অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

শারীরিক পরিশ্রম: ডায়াবেটিক রোগীকে প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচদিন হাঁটতে হবে। ব্যস্ততা বেশি থাকলে সেক্ষেত্রে সপ্তাহে অন্তত তিনদিন ৫০ মিনিট করে হাঁটতে হবে। সুতরাং ডায়াবেটিক রোগীকে সপ্তাহে সব মিলিয়ে ১৫০ মিনিট হাঁটতে হবে।  প্রথম পাঁচ মিনিট অস্থিসন্ধির জয়েন্ট নড়াচড়ার ব্যায়াম করতে হবে। হাঁটার নিয়ম হলো হাঁটার শুরুর দিকে গতি কম থাকবে, আস্তে আস্তে গতি বাড়াতে হবে। অতঃপর হাঁটার শেষের দিকে গতি কমিয়ে হাঁটা বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাসার ছাদে হাঁটা যেতে পারে। এছাড়া কেউ সুইমিং করতে পারে, জিমে যেতে পারে অথবা ট্রেডমিল মেশিনে ব্যায়াম করতে পারেন।

ঘুম: ডায়াবেটিসের রোগীরা অনেক ক্ষেত্রে ঘুমকে গুরুত্ব দেন না। অথচ পরিমাণমতো না ঘুমালে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন হয়ে যায়। রোগীদের প্রতিদিন অন্তত ছয় ঘণ্টা করে ঘুমানো উচিত।

অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ

বিভাগীয় প্রধান, ডায়াবেটিস এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন