আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির হিড়িক

অর্থনীতির শঙ্কা সঞ্চারিত হচ্ছে পুঁজিবাজারেও

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদুল আজহার ছুটির পরে পুঁজিবাজার পরিস্থিতির উন্নতি হবে এমন প্রত্যাশা ছিল সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু ঈদের পর থেকেই টানা নিম্নমুখিতা চলছে পুঁজিবাজারে। এর মধ্যে গতকাল দেশের পুঁজিবাজারে সূচকের বড় পতন হয়েছে। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে তাতে দেশের অর্থনীতিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আর অর্থনীতির শঙ্কা সঞ্চারিত হয়েছে পুঁজিবাজারেও। এতে গতকাল আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির হিড়িক পরিলক্ষিত হয়েছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর পর মিনিট পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে ছিল সূচক। কিন্তু শেয়ার বিক্রির চাপে এরপর থেকেই দরপতন হতে থাকে, যা লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। শেষ পর্যন্ত গতকাল দিনশেষে ৮৭ পয়েন্ট কমে হাজার ২১৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স। এর আগের কার্যদিবসে যা ছিল হাজার ৩০৪ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইর ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ গতকাল ৩২ পয়েন্ট কমে হাজার ২৩৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ২৬৮ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিন শেষে ১৬ পয়েন্ট কমে হাজার ৩৬০ পয়েন্টে অবস্থান করছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল হাজার ৩৭৬। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বাংলাদেশ (বিএটিবিসি), স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের শেয়ারের।

গতকাল পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে প্রচুর শেয়ার বিক্রির কার্যাদেশ থাকলেও ক্রেতার অভাবে অনেক শেয়ারই হল্ট্রেড হয়ে যায়। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। গতকাল সর্বোচ্চ শতাংশ দর হারিয়েছে কোম্পানির শেয়ার। আর দেড়-দুই শতাংশের কম দর হারিয়েছে এমন শেয়ারের সংখ্যা ছিল ২৮১টি।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি টাকার অবমূল্যায়নের কারণে পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত ছিলেন। এর মধ্যে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি পেট্রল পাম্প একদিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত তাদের আরো আতঙ্কিত করে তোলে। সামনের দিনগুলোতে সামষ্টিক অর্থনীতির সংকট আরো তীব্র হতে পারে এমন শঙ্কায় তারা শেয়ার বিক্রি করে দিতে থাকেন।

ডিএসইতে গতকাল ৫১৫ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ৫৯৩ কোটি টাকা। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩৮২টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ১২টির, কমেছে ৩৫৮টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১২টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।

বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, সবার প্রত্যাশা ছিল ঈদের পর পুঁজিবাজার ভালো হবে। কিন্তু সামষ্টিক অর্থনীতির কিছু ইস্যুর কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। গতকাল শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা ছিল লক্ষণীয়। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বড় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার কেনার প্রবণতা দেখা গেছে। বাজার স্থিতিশীলতায় কমিশনের পক্ষ থেকে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হবে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে বলে জানান তিনি।

খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১২ দশমিক শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে বস্ত্র খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ দখলে নিয়েছে ওষুধ রসায়ন খাত। দশমিক শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জীবন বীমা খাত। প্রকৌশল খাতের দখলে ছিল মোট লেনদেনের দশমিক শতাংশ। এছাড়া বিবিধ খাতের দখলে ছিল মোট লেনদেনের দশমিক শতাংশ। গতকাল পুঁজিবাজারে সব খাতের শেয়ারেই নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে পাট খাতে সবচেয়ে বেশি শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও শ্রীলংকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজার ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। অথচ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচারের কারণে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে বলে জানান তিনি।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) নির্বাচিত সূচক সিএসসিএক্স গতকাল ১৪৬ পয়েন্ট কমে ১০ হাজার ৯৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১১ হাজার ৯৯ পয়েন্ট। সিএসইর সব শেয়ারের সূচক সিএএসপিআই গতকাল ২৪২ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ২৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১৮ হাজার ৫২৩ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২৯৭টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৭টির, কমেছে ২৬০টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২০টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে ১৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন