দুদকের ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব

প্রকল্পই শেষ হয়নি, সফটওয়্যারের মেয়াদ শেষ ডিসেম্বরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতার উন্নয়ন, দপ্তরগুলোর অটোমেশন, মোবাইল ট্র্যাকার, ডিজিটাল আর্কাইভ, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবসহ বিভিন্ন সুবিধা সংযোজনের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) শক্তিশালী করতে একটি প্রকল্পের কাজ চলমান। শুরুতে তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এর পরও কাজ শেষ না হওয়ায় এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত জুনে সে মেয়াদও শেষ হয়েছে। নতুন করে আরো দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলেও প্রকল্পের আওতায় ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব এবং ডকুমেন্ট ফরেনসিক ল্যাবের একাধিক সফটওয়্যারের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে বছরের ডিসেম্বরে। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষ হলেও ফরেনসিক ল্যাব কার্যকর করতে সফটওয়্যারের মেয়াদ বাড়াতে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) করা এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া আইএমইডির নিবিড় পরিবীক্ষণে দুর্নীতি দমন কমিশন শক্তিশালীকরণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটির বেশকিছু ত্রুটির চিত্রও উঠে এসেছে।

দুর্নীতি দমনে জাতীয় কারিগরি প্রকল্প বাংলাদেশে এই প্রথম বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, প্রকল্প গ্রহণের আগে কাজের আকার, জটিলতা সমস্যা অনুধাবন করা সম্ভব হয়নি। সে কারণে প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নেও ত্রুটি ছিল। ফলে বাস্তবায়নেও বিভিন্ন ঘাটতি দেখা গিয়েছে।

আইএমইডি বলছে, দুর্নীতি দমনে অভিযোগ দাখিলের পদ্ধতি প্রযুক্তিবান্ধব নয়। পাশাপাশি পরিচয় গোপন রেখে অনলাইনে তথ্য প্রদানের কোনো ব্যবস্থা নেই। সফটওয়্যারের প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরির কাজও যথাসময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতির ফলে জাতীয় সম্পদের অপচয়, সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি এবং জনগণের মাঝে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। দুর্নীতি দরিদ্রতা বাড়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪ অনুযায়ী সমাজে দুর্নীতি দমন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দুদককে একচ্ছত্র দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অভিযোগের অনুসন্ধান তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তির আদালতে অভিযোগ দায়ের সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হয়। সেক্ষেত্রে অভিযোগ অনুসন্ধান তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের জনবলের দক্ষতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি একান্ত প্রয়োজন।

প্রকল্পের মূল বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। পরে প্রথম সংশোধিত বাস্তবায়নকাল ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রকল্পের মূল প্রাক্কলিত ব্যয় ৪৯ কোটি ১৮ লাখ থেকে দশমিক ৪৪ শতাংশ কমিয়ে সংশোধিত প্রাক্কলিত ব্যয় ৪৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে করোনা মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি কম হওয়ায় এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় প্রকল্পটির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বিভিন্ন তদন্তের কাজে ফরেনসিক ল্যাব-সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দুদককে সিআইডি বা অন্যান্য সংস্থার দ্বারস্থ হতে হয়। নিজস্ব ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপিত হলে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব এবং ডকুমেন্ট ফরেনসিক ল্যাব-সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না দুদককে। প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে দুদকের কর্মকর্তারা যেকোনো ডিজিটাল বা ডকুমেন্ট ফরেনসিক পরীক্ষা কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমোদন সাপেক্ষে নিজেরাই সম্পাদন করতে পারবেন। প্রকল্পের কাজের অংশ হিসেবে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব ডকুমেন্ট ফরেনসিক ল্যাবের জন্য বেশকিছু সফটওয়্যার কেনা হয়েছিল। কিন্তু যথাসময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় সেসব সফটওয়্যারের মেয়াদ শেষের পথে। এখন বাড়তি অর্থ ব্যয় করে এসব লাইসেন্স নবায়ন করাতে হবে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব এবং ডকুমেন্ট ফরেনসিক ল্যাবের একাধিক সফটওয়্যারের লাইসেন্সের মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হবে। যেহেতু প্রকল্পের মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়ছে, তাই এসব সফটওয়্যারের লাইসেন্স নবায়নের উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ করেছে আইএমইডি।

বিষয়টি নিয়ে দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের কাজ যেভাবে এগিয়ে চলেছে তাতে আমি সন্তুষ্ট। বিষয়ে আমাদের দক্ষ জনবলের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে, আমরা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেই ঘাটতি মেটানোর কাজ করছি। সফটওয়্যারের বিষয়টি কারিগরি খাতের সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন। নিশ্চয় বিষয়ে কোনো না কোনো সমাধান বের করা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, দুদককে শক্তিশালী করার প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ধরা হয়েছিল, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দুদক কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার উন্নয়ন; দুদকের সব দপ্তরের অটোমেশন, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি এবং সততা সংঘের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারি বেসরকারি খাতে দুর্নীতি হ্রাস।

প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রমগুলো হচ্ছে দুদকের কর্মকর্তা বা কর্মচারী এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ; সততা সংঘের জমায়েত এবং প্রতিরোধ কমিটির দুর্নীতি প্রতিরোধ প্রোগ্রাম; দুদকের প্রধান কার্যালয় ২২ কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ; সততা সংঘের জমায়েত এবং প্রতিরোধ কমিটির দুর্নীতি প্রতিরোধ প্রোগ্রাম; দুদকের প্রধান কার্যালয় ২২টি সমন্বিত জেলা কার্যালয় অটোমেশন; মোবাইল ট্র্যাকার, আইপি টিভি, ডিজিটাল আর্কাইভ, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি সম্পদ সংগ্রহ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন