২৩ লাখ টাকা নিয়ে আটক কক্সবাজারের সেই সার্ভেয়ার কারাগারে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, কক্সবাজার

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএও) শাখার সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ শনিবার বিকালে তাকে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে তোলা হয়। শুনানি শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক আসাদ উদ্দিন মোহাম্মদ আসিফ। 

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, গতকাল শুক্রবার বিমানে করে বাড়ির পথে রওনা দেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএও) শাখার সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান। সঙ্গে ব্যাগে নেন ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকা। বিশাল অংকের এই টাকাসহ কক্সবাজার বিমানবন্দর হয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছান তিনি। 

পরবর্তীতে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে পিছু নেয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার টিম। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে ধরা পড়েন সার্ভেয়ার আতিক। ঢাকা থেকে বিমানে করে কক্সবাজার নিয়ে আসা হয়। রাতেই তাকে সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। যা সাধারণ ডায়েরি হিসেবে লিপিবদ্ধ করে সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়। 

আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আজ বিকালে তাকে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে তোলা হয়। 

ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, এডিসির লিখিত অভিযোগসহ শুক্রবার রাতে আতিকুরকে থানায় সোপর্দ করেন। আইন মতে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। যা দুর্নীতি দমন কমিশনারের কক্সবাজার সম্মিলিত কার্যালয়ে পাঠানো হয়। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে তারা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএও) শাখার সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান

আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে বলে জানান এডিসি মো. আমিন আল পারভেজ। তিনি জানিয়েছেন, ফৌজদারি মামলার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। তিনি কীভাবে, কোথা থেকে এতো টাকা পেলেন এবং তা ঢাকায় কেন নিয়ে গেছেন, সব বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। 

আতিকুর রহমানের বাড়ি সিরাজগঞ্জে বলে জানা গেছে। তিনিসহ তিনজন সার্ভেয়ার মহেশখালীতে সরকারের প্রায় ১৫টি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন। ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে জমির মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ বাবদ আতিকুর ওই অর্থ নিয়েছেন বলে সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজারে সরকারের ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তিনটি তদন্তে ভূমি অধিগ্রহণে মোট ৭৮ কোটি টাকা দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়। 

২০২০ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে র‌্যাব কক্সবাজার শহরের তারাবনিয়ার ছড়া সার্ভেয়ার ফেরদৌসের বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৭ লাখ টাকা জব্দ করে। এছাড়া বাহারছড়া এলাকায় সার্ভেয়ার ফরিদের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৬০ লাখ ৮০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। এ ব্যাপারে দায়ের করা মামলার তদন্ত করে দুদক। এ দুর্নীতির তদন্তে নেতৃত্ব দেয়া দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে প্রথমে বদলি এবং পরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে চাকরিচ্যুত করা হয়। 

কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুদকের অভিযানের পর অনেকটা আত্মগোপনে চলে যায় দালালচক্র। সম্প্রতি তারা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন