মধ্য আষাঢ়েও দেখা নেই বৃষ্টির

সাতক্ষীরায় আমন বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না চাষীরা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা

বৃষ্টির অভাবে সাতক্ষীরায় আমন বীজতলা তৈরিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দেশের উত্তর উত্তর-পূর্বাঞ্চল যখন অতিবৃষ্টির প্রভাবে বন্যায় ভাসছে, তখন মধ্য আষাঢ়েও বৃষ্টির দেখা নেই সাতক্ষীরায়। মৌসুমি বৃষ্টি না হওয়ায় চলতি আমন চাষের বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না কৃষক। অনাবৃষ্টির কারণে জেলায় মৎস্য চাষেও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

পরিবেশবিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি ভূ-গর্ভস্থ অধিক পরিমাণ পানি উত্তোলন, উন্মুক্ত পুকুর জলাশয় কমে যাওয়া এবং বনজ বৃক্ষ উজাড় হওয়ার কারণে অনাবৃষ্টি দেখা দিয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুখরালী গ্রামের কৃষক তুহিন হোসেন, মধু রহমান, সাদেক আলী জানান, চলতি আমন মৌসুমের বীজতলা তৈরির সময় অন্তত ১৫ দিন পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছে না। এতে করে আমন উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে ধারণা করছেন তারা। ওই কৃষকরা জানান, প্রতি মৌসুমে একেকজন ১০-১৫ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেন। তারা আরো বলেন, আগামী সা-আটদিনের মধ্যে যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১১ হাজার ৯০০ হেক্টর, তালায় হাজার ৮৫০ হেক্টর, দেবহাটায় হাজার ৫৭০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১৭ হাজার ৬৩০ হেক্টর, আশাশুনিতে হাজার ৪৬০ হেক্টর এবং শ্যামনগরে ১৬ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমি।

এদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় জেলার মিঠাপানির মৎস্য চাষীরাও বিপাকে পড়েছেন। জেলার অধিকাংশ মৎস্য চাষী ঘেরে (খামার) মাছের পোনা অবমুক্ত করতে পারছেন না। ব্যাহত হচ্ছে রেণু পোনা উৎপাদনও।

সাতক্ষীরার দহকুলা গ্রামের মৎস্য চাষী কওছার আলী বাবু হোসেন জানান, মৌসুমি বৃষ্টি না হওয়ায় তারা ঘেরে মাছ ছাড়তে পারছেন না। নলকূপের পানি দিয়ে কোনোরকম ঘের টিকিয়ে রেখেছেন তারা। এরপর পানি উঠালেই তা থাকছে না, আবার নেমে যাচ্ছে ভূ-গর্ভে। ফলে চলতি মৌসুমে মাছ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

সাতক্ষীরার বাটকেখালী গ্রামের রেণু পোনা উৎপাদনকারী রবিউল ইসলাম জানান, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে কয়েকবার ভূ-গর্ভের পানি উত্তোলন করে রুই, মৃগেল কাতলা মাছের ডিম ফোটানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এতে তার অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের সাতক্ষীরা জেলা সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল জানান, ভূ-গর্ভস্থ পানি অধিক পরিমাণ উত্তোলন করে চাষাবাদ, উন্মুক্ত পুকুর-জলাশয় কমে যাওয়া এবং বনজ সম্পদ উজাড়ের কারণে অনাবৃষ্টি বা মৌসুমি বৃষ্টি হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে শুধু সাতক্ষীরা জেলা নয়, বরং খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর জেলায়ও বৃষ্টির দেখা নেই।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, মৌসুমি বৃষ্টি না হওয়ায় এখনো পর্যন্ত জেলার চাষীরা আমন বীজতলা তৈরি করতে পারেননি। বীজতলা তৈরির সময় প্রায় ১৫ দিন পেরিয়ে গেছে। এতে আমন চাষে কেমন প্রভাব পড়তে পারেএমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এখনো পর্যাপ্ত সময় আছে। আশা করা হচ্ছে দু-একের মধ্যে বৃষ্টি হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন