কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রাণনাশের হুমকিতে পালিয়েছে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় পাঁচ পাড়ার ৯২ পরিবার। পালিয়ে আসা এসব পরিবারের একাংশ বান্দরবানের বিভিন্ন পাড়ায় তাদের আত্মীয়দের আশ্রয়ে রয়েছে। গত তিন-চারদিনে পালিয়ে আসার ঘটনাগুলো ঘটে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পালিয়ে আসা পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাইজাম পাড়ার ২২ পরিবার, বিলছড়ি পাড়ার ২৪ পরিবার, কাইঙ্গছড়া পাড়ার ১১ পরিবার, বরেক্যাছড়া পাড়ার ৩৭ পরিবার ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের প্রভাতচন্দ্র পাড়ার ছয়টি পরিবার।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ের দুর্গম এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে বর্তমানে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম বম পার্টি বা কেএনএফ। এ গ্রুপটি বিনা কারণে দুর্গম এলাকার পাড়াগুলোয় খেটে খাওয়া নিরীহ মানুষকে হত্যাসহ অমানুষিক নির্যাতন করে বেড়াচ্ছে। গত ২১ জুন রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়ায় বাবা-ছেলেসহ তিনজনকে হত্যা করে কেএনএফ সদস্যরা। এ ঘটনায় দুই শিশু গুলিবিদ্ধ হয়। ওই ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়নি। ফেসবুক পেজে ওই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বম পার্টি বা কেএনএফ। এর পর থেকে বড়থলি ও আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার পাড়াবাসীকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দিয়ে আসছিল কেএনএফ। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভীতসন্ত্রস্ত পাড়াবাসী পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
বিলপাড়া থেকে পালিয়ে আসা ফুলমালা চাকমার সঙ্গে গতকাল মোবাইল ফোনে কথা হয়। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার পাড়া ছেড়ে পরিবারসহ পালিয়ে এসেছেন। বর্তমানে আমার পরিবারের পাঁচ সদস্য বান্দরবানের জামছড়ি ইউনিয়নের শামুকঝিরিপাড়ায় এক আত্মীয়ের আশ্রয়ে রয়েছি। কয়েক মাস আগে থেকে বম পার্টির সন্ত্রাসীরা গৃহপালিত শুকর, কুকুর, মুরগি, চালসহ খাদ্যপণ্য লুণ্ঠন করে নিয়ে যেত। সাইজামপাড়ার ঘটনার পর বম পার্টি আরো কঠোর হুমকি দেয় ও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
পালিয়ে আসা পরিবারগুলোর একটি অংশ আলেক্ষ্যং ও রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়ায় আশ্রয় নিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আলেক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, বড়থলি ইউনিয়নের তিন চারটি পাড়া থেকে গতকাল পর্যন্ত পালিয়ে আসা ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বটতলীপাড়া, শঙ্খমণিপাড়া, ব্যাঙছড়িপাড়া, শামুকঝিরি, ফরেস্ট কলোনি, রনিনপাড়াসহ ১১-১৪টি পাড়ায় আশ্রয় নিয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বড়থলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতোমং মারমা। তিনি জেএসএসের বড়থলি ইউনিয়নের সভাপতি নন জানিয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, সাইজামপাড়ায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর ২নং ওয়ার্ডের চারটি পাড়ার ৮৬ পরিবার পাড়া ছেড়ে পালিয়েছে।
দুর্গম এলাকা হওয়ায় ঘটনাস্থলে যেতে গত ২৪ জুন থেকে রাঙ্গামাটির পুলিশ বান্দরবানের রুমা থানায় অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মামুদা বেগম।
আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের একটি পাড়া ছেড়ে স্থানীয়দের পালিয়ে আসার বিষয়টি অফিসিয়ালি জানেন না বলে দাবি করেছেন বান্দরবান পুলিশ সুপার জেরিন আখতার।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
