ওইসিডি-এফএও এগ্রিকালচারাল আউটলুক ২০২২-৩১

বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজন টেকসই বিনিয়োগ

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বব্যাপী নানা সংকট চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে অস্থির হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের বাজার। এছাড়া জলবায়ু সহনশীল টেকসই ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন কৃষিখাদ্য খাত। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুদ্ধ বন্ধসহ খাতে টেকসই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও) অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) প্রকাশিতএগ্রিকালচারাল আউটলুক ২০২২-৩১প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে আসে।

ওইসিডি-এফএও এগ্রিকালচারাল আউটলুক ২০২২-৩১ প্রতিবেদনে কৃষিপণ্যের বাজারে মধ্যমেয়াদি বিভিন্ন সম্ভাবনার ওপর আলোকপাত করা হয়। প্রতিবেদনের প্রাপ্ত ফলাফলগুলো কৃষি উৎপাদন খাতে অতিরিক্ত সরকারি ব্যয় বেসরকারি বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে। পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়াতে তথ্য-প্রযুক্তি অবকাঠামোর সঙ্গে মানব মূলধনের গুরুত্বকেও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।

ওইসিডি-এফএওর কৃষি পূর্বাভাসবিষয়ক প্রতিবেদনে কৃষিপণ্যের দাম বাড়ার বেশকিছু কারণ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে কভিড-১৯-পরবর্তী সময়ে চাহিদা পুনরুদ্ধারের ফলে সরবরাহ বাণিজ্য সংকট, উল্লেখযোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী দেশে প্রতিকূল আবহাওয়া এবং উৎপাদন পরিবহন ব্যয়ের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি। পাশাপাশি ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান এসব কারণকে আরো সহযোগিতা করেছে। সামরিক অভিযানের ফলে গম, ভুট্টা সূর্যমুখী তেলের সরবরাহ সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে সারের বাজারে রাশিয়ার উল্লেখযোগ্য অংশীদারত্ব বিদ্যমান সার সংকটকেও আরো অস্থির করে তুলেছে। ফলে সারের দাম স্বল্পমেয়াদি উৎপাদনশীলতায় সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা বাড়ছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখযোগ্য পণ্যের বাজারে বড় আকারের ঝুঁকিগুলো তুলে ধরা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ইউক্রেনের রফতানি সক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হলে গমের দাম যুদ্ধ শুরুর আগের তুলনায় ১৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে এবং রাশিয়া স্বাভাবিক রফতানি সক্ষমতার ৫০ শতাংশ শস্য রফতানি করলে দাম ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এছাড়াও ২০২২-২৩ ২০২৩-২৪ মৌসুমে ইউক্রেন রাশিয়া থেকে খাদ্যশস্য রফতানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসতে পারে। সময়ে সৃষ্ট ঘাটতি পূরণে বৈশ্বিক কোনো বিকল্পও দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। ফলে মহামারীকালীন অপুষ্টিতে ভোগা জনগোষ্ঠীর পরিমাণ ক্রমাগতভাবে বাড়তে পারে।

ওইসিডির সেক্রেটারি জেনারেল ম্যাথিয়াস কোরম্যান বলেন, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা না হলে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট পরিস্থিতি আরো খারাপ অবস্থায় পৌঁছাবে। বিশেষ করে এর ভুক্তভোগী হবেন বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। তাত্ক্ষণিকভাবে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া ইউক্রেনের পরিবারগুলোর জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোও এর দ্বারা লাভবান হবে।

এফএওর মহাপরিচালক কিউ দোংয়ু বলেন খাদ্য, সার, প্রাণিখাদ্য জ্বালানির দাম বাড়ার পাশাপাশি সংকুচিত অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্বব্যাপী মানুষের সংকটকে প্রকট করে তুলছে। যদি রাশিয়া ইউক্রেনসহ উল্লেখযোগ্য খাদ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর সরবরাহ এবং বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস পায়, তবে আগামী বছর বিশ্বজুড়ে অতিরিক্ত প্রায় দুই কোটি লোক দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টিতে ভুগবে। খাদ্যপণ্যের স্বল্প সরবরাহ বিশ্বজুড়ে সংকটকে বাড়িয়ে তুলবে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, খাদ্য নিরাপত্তাসংক্রান্ত স্বল্প মধ্যমেয়াদি চ্যালেঞ্জ নির্ণয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য বাজারগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে ব্যবসায়িক অংশীদারদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা, পরিবহনের গুরুত্ব, নিশ্চিত নীতিভুক্ত বহুপক্ষীয় ব্যবসায়িক ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। পাশাপাশি ২০৩০ এজেন্ডার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস) পূরণে কৃষি খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনা জলবায়ু সহনশীল কৃষি খাত তৈরিতে বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করা হয়। যাতে আগামী এক দশকে বার্ষিক দশমিক শতাংশ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির চাহিদা পরিবেশের ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব না রাখে।

শূন্য ক্ষুধার জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আগামী এক দশকে কৃষি উৎপাদনশীলতা গড়ে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে কৃষি খাতে কার্বন নিঃসরণে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা বজায় রাখতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন