২৫ বছরে মেন ইন ব্ল্যাক

উইল স্মিথের ক্যারিয়ারের বাঁক বদল যেখানে

সিনেমা স্টাররা নানা সময়েই বিতর্কে জড়ান। কিন্তু এতে তাদের ক্যারিয়ারের ভালো কাজগুলো হারিয়ে যায় না। চড়কাণ্ড হোক বা অন্যকিছু, উইল স্মিথের মেন ইন ব্ল্যাক, পারসুইট অব হ্যাপিনেস থেকে যায় আলোচনায়। আজ পূর্ণ হচ্ছে মেন ইন ব্ল্যাকের ২৫ বছর। কালো স্যুট আর রে-ব্যান সানগ্লাসে তরুণ উইল স্মিথ এখনো বহু দর্শকের প্রিয়। এজেন্ট জে নামের চরিত্রটি হয়ে উঠেছে কাল্ট ক্ল্যাসিক। সিনেমার মধ্য দিয়েই স্মিথ হয়ে উঠেছিলেন স্টার। তবে সেটা গল্পের একটা অংশ। অন্য অনেক গল্পের মতো গল্পও স্মিথের না হলে পারত। কেননা স্টিভেন স্পিলবার্গের প্রথম পছন্দ স্মিথ ছিলেন না।

সাই-ফাই কমেডি মেন ইন ব্ল্যাকের প্রযোজক ছিলেন স্টিভেন স্পিলবার্গ। তার পরিকল্পনায় এজেন্ট জে চরিত্রটির জন্য উপযুক্ত ছিলেন ক্রিস ডনেল। আজকের দিনে এসে টমি জোনসের সঙ্গে ডনেলের যুগলবন্দি অনেকটাই অসম্ভব বলে মনে হয়। তবে সেটা মনে হওয়ার কারণ উইলের সঙ্গে জোনসের রসায়নটা জমে যাওয়া। প্রযোজক হিসেবে স্পিলবার্গ সম্ভবত ব্যবসায়িক দিক ভেবেছিলেন। কেননা ক্রিস তখন তার ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করছিলেন। সেন্ট অব উইম্যান, ম্যাড লাফ সাফল্য পেয়েছিল বক্স অফিস দর্শকের কাছে। কিন্তু মেন ইন ব্ল্যাকের পরিচালক ব্যারি সনেনফেল্ড প্রস্তাবে সম্মত হননি। তার প্রয়োজন ছিল একটি তরুণ মুখ, যা ডনেলের বাহ্যিক চেহারার সঙ্গে মেলে না। ২০১৭ সালে হাফিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে ব্যারি জানান, ‘ক্রিসকে বলেছিলাম আমি খুব একটা ভালো পরিচালক না। স্ক্রিপ্টও ভালো না। তার হাতে অন্য কোনো কাজ থাকলে মেন ইন ব্ল্যাক করা উচিত হবে না। পরের দিন ক্রিস জানান তিনি আগ্রহী না।

তাহলে কে হবেন এজেন্ট জে? ভ্যারাইটি তাদের আর্কাইভ থেকে জেনেছে, টমি জোনসকে এজেন্ট কে চরিত্রের শুরুতেই কাস্ট করা হয়েছিল কিন্তু ১৯৯৫ সালের আগস্ট অবধি এজেন্ট জে চরিত্রের জন্য কাউকে কাস্ট করা হয়নি। অনেকে অনেক নাম প্রস্তাব করেছিলেন কিন্তু ব্যারির মাথায় চরিত্রটির জন্য উপযুক্ত নাম ছিল উইল স্মিথ। সাই-ফাই হলেও মেন ইন ব্ল্যাকের গল্পটায় কমেডির ছোঁয়া আছে। আর ততদিনে উইল স্মিথ তার দ্য ফ্রেশ প্রিন্স অব বেল এয়ার সিটকমের জন্য পরিচিত ছিলেন। তাছাড়া মেন ইন ব্ল্যাকের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কলাম্বিয়া পিকচার্সের ব্যানারেই ওই বছর এসেছিল স্মিথের অ্যাকশন থ্রিলার ব্যাড বয়েজ। সুতরাং ব্যাটে বলে মিলে গেল আর সেপ্টেম্বরে জানা গেল উইল স্মিথই হচ্ছেন এজেন্ট জে। চরিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য তার পারিশ্রমিক ছিল ৫০ লাখ ডলার।

এরপর অবশ্য স্মিথকে নিয়ে নানা কথা উঠেছিল। বলা হচ্ছিল ব্যাড বয়েজের পরবর্তী পর্বের জন্য মেন ইন ব্ল্যাকে সময় দিচ্ছেন না স্মিথ। কিন্তু ২০০৩ অবধি ব্যাড বয়েজের দ্বিতীয় পর্ব আসেনি। মেন ইন ব্ল্যাক এসেছিল ১৯৯৭ সালের জুলাই। মাসটা স্মিথের জন্য বিশেষ পয়া। আগের বছর জুলাই মুক্তি পাওয়া ইনডিপেনডেন্স ডে ব্যবসায়িক সফলতা লাভ করেছিল। আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে স্মিথের সিনেমা মুক্তি পাওয়ার কারণে তার নাম হয়ে ওঠেকিং অব দ্য ফোর্থ জুলাই মেন ইন ব্ল্যাকের পরও হ্যানকক, মেন ইন ব্ল্যাক টু জুলাইয়ে মুক্তি পায়। শুধু সিনেমার ব্যবসা না, মেন ইন ব্ল্যাকের টাইটেল সংটি এমটিভির সেরা গানের তালিকার শীর্ষে ছিল।

সিনেমায় স্মিথ যতটা না নায়ক হিসেবে তার চেয়ে অভিনেতা সত্তা অভিনয় প্রতিভা প্রকাশিত হয়েছে বেশি। সে সময়টা মূলত ছিল অ্যাকশন থ্রিলারের, যেখানে আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার বা সিলভেস্টার স্ট্যালোনকেঅ্যাকশনকরতে দেখা যেত। কিন্তু পৃথিবীতে থাকা এলিয়েনদের বিপরীতে দাঁড়ানো ব্যক্তিরা কোনো না কোনোভাবে সুপার হিউম্যানের কাছাকাছিই বটে। কিন্তু কমেডির মধ্য দিয়ে সে উপস্থাপনাটা ছিল ভিন্ন ধারার। আর দর্শকের সেটা ভালোও লেগেছিল। সিনেমাটির প্রচারণার সময় নিউজউইককে স্মিথ বলেছিলেন, ‘সুপার হিউম্যান বা শারীরিক শক্তিতে বলীয়ান একজন লোক বুলেটের সামনে এসে পড়ার বিষয়গুলো কঠিন। আর ততটা আকর্ষণও করে না। আকর্ষণ করে যখন আপনি গুলির সামনে থেকে সরে যাবেন।

স্মিথের চরিত্র তাকে জিম ক্যারির (দ্য মাস্ক) কাতারে নিয়ে গিয়েছিল। বলা যায়, তার পরবর্তী হিট সিনেমাগুলো বা তার অভিনয় জীবনের মোড় ছিল মেন ইন ব্ল্যাক। ২৫ বছর পর তাই এখনো সিনেমা এজেন্ট জে দর্শকের কাছে সমান জনপ্রিয়।

ভ্যারাইটি অবলম্বনে মাহমুদুর রহমান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন