বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পণ্যের দাম। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সুদহার বাড়াতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কা নিয়ে সতর্ক করছেন ব্যবসায়ী ও আর্থনীতিবিদরা। তবে নিজেদের অবস্থানে অনড় ব্যাংকগুলোর নীতিনির্ধারকরা। খবর রয়টার্স।
বিশ্বের শীর্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানদের ভাষ্য, বিশ্বজুড়ে উচ্চমূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা বেদনাদায়ক হবে, এমনকি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও থমকে যেতে পারে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই মূল্যবৃদ্ধি আটকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি কয়েক দশকের রেকর্ড ভেঙে চলেছে। কারণ বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। পাশাপাশি মহামারী-পরবর্তী সরবরাহ চেইনের বাধা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এবং কঠিন শ্রমবাজারও সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। পর্তুগালের সিন্ট্রায় ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের (ইসিবি) বার্ষিক সম্মেলনে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েল বলেন, মূলস্ফীতিকে দমানোর প্রক্রিয়ায় কিছু নেতিবাচক প্রভাব জাড়িয়ে আছে। তবে মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হওয়া এবং এটি ক্রমবর্ধমান থাকলে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
পাওয়েলের কথার প্রতিধ্বনি করে ইসিবি প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দে বলেন, প্রাক-মহামারী যুগের নিম্নমূল্যস্ফীতি ফিরে আসবে না। তবে আমাদের ক্রমেই মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতিটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এজন্য ইসিবিকে এখন অনেক কাজ করতে হবে। কারণ মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার ২ শতাংশের ওপরে থাকার সম্ভাবনা ছিল।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) আগের অনুমান ১ দশমিক ৪ শতাংশের বেশি সংকুচিত হয়েছে মার্কিন অর্থনীতি। নতুন প্রতিবেদন অনুসারে, এ সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। এ অবস্থায় মন্দার আশঙ্কাও বাড়ছে। জেরোম পাওয়েল বলেন, মুদ্রানীতি কঠোর করে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা এড়ানো অবশ্যই সম্ভব। তবে পথটি খুব সংকীর্ণ এবং সফলতার কোনো গ্যারান্টি নেই।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান বলেন, এমন কোনো ঝুঁকি আছে যার কারণে আমরা অনেক পেছনে চলে যাব? ঝুঁকি অবশ্যই আছে। আমি একমত নই যে এটি অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। তবে মূল্যবৃদ্ধির এ প্রবণতা থামাতে ব্যর্থ হলে আমাদের অনেক বড় মূল্য চুকাতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি অভিভাবক গ্রুপ ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটলমেন্টের মহাব্যবস্থাপক অগাস্টিন কারস্টেন্স বলেন, নীতিনির্ধারকদের ত্রুটি রয়েছে এবং সেটা স্বীকার করার জন্য তারা পদক্ষেপও নিচ্ছেন। তাদের কাজ ছিল মুদ্রানীতি কঠোর করা। যদিও এ কারণে ঝুঁকিও বাড়ছে। এরই মধ্যে আমরা উচ্চমূল্যস্ফীতির পরিবেশে প্রবেশ করেছি। এখন তাদের চেষ্টা করা উচিত একটি নিম্নমূল্যস্ফীতির পরিবেশ থেকে উচ্চমূল্যস্ফীতির পরিবেশে সম্পূর্ণ রূপান্তর রোধ করা। আপনাকে এ দুষ্টচক্রের প্রভাব প্রতিরোধ করতে হবে।
ইসিবি ফেডারেল রিজার্ভকে অনুসরণ করে জুলাই ও সেপ্টেম্বরে সুদহার বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক জুনে দশমিক ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়েছে এবং জুলাইয়ে অনুরূপ পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (বিওই) জুনে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে পাঁচবার সুদহার বাড়াল ব্রিটিশ ব্যাংকটি। মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় ভবিষ্যতে আরো আগ্রাসী পদক্ষেপ নেয়ারও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করে বিওই গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি একটি সম্মেলনে বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অনেক কিছু করতে হবে। যদিও আগামী বৈঠকের জন্য আমরা থেমে নেই। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। তবে সেক্ষেত্রেও নানা ঝুঁকি রয়েছে। কারণ এরই মধ্যে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে ধীরগতি শুরু হয়েছে। অর্থনীতি এখন স্পষ্টতই টার্নিং পয়েন্টে রয়েছে।