বিভিন্ন অনিশ্চয়তা কাটিয়ে জাপানের খুচরা বিক্রি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। মে মাসে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে খুচরা বিক্রি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বেড়েছে। এ নিয়ে টানা তৃতীয় মাসের মতো দেশটিতে খুচরা বিক্রি বাড়ল। এ পরিসংখ্যান জাপানের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আশা শক্তিশালী করছে। যদিও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি চলতি বছরের বাকি সময়ে জাপানি পরিবারগুলোয় ব্যয়ে ঝুঁকি তৈরি করেছে। খবর রয়টার্স।
গতকাল প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুসারে, মে মাসে জাপানের খুচরা বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। এ হার ৩ দশমিক ৩ শতাংশ পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। এর আগে এপ্রিলে বিক্রি বেড়েছিল ৩ দশমিক ১ শতাংশ। কভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিল করায় মার্চ থেকে দেশটিতে খুচরা বিক্রি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
ঋতুভিত্তিক সামঞ্জস্যপূর্ণ মাসভিত্তিক হিসাবে খুচরা বিক্রি মে মাসে দশমিক ৬ শতাংশ প্রসারিত হয়েছে। যদিও এপ্রিলের বাড়ার এ হার ১ শতাংশ ছিল। মে মাসের শুরুর দিকে জাপানিরা ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো কভিড-১৯ নিষেধাজ্ঞা শেষে ‘গোল্ডেন উইক’
ছুটির মৌসুম উপভোগ করেছিল। এ ছুটিতে বাড়ির বাইরে খাওয়া-দাওয়া এবং দেশের অভ্যন্তরে ঘোরাঘুরির হার অনেক বেড়ে যায়।
পরিষেবা খাতের প্রত্যাবর্তন এবং শক্তিশালী পারিবারিক ব্যয় বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে প্রবৃদ্ধিতে ফেরাবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার পরে দ্বিতীয় প্রান্তিকে জাপানের জিডিপি ৪ দশমিক ১ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এদিকে ভোক্তা ব্যয় নির্ভর জাপানের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ব্যাহত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং ডলারের বিপরীতে ইয়েনের দরপতন চলতি বছরের বাকি সময়ে জাপানের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এরই মধ্যে দেশটির ভোক্তা আস্থা সূচক জুনে তিন মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো কমেছে। এ সূচক মে মাসের ৩৪ দশমিক ১ পয়েন্ট থেকে চলতি মাসে ৩২ দশমিক ১ পয়েন্টে নেমেছে। গতকাল প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এ হার ২০২১ সালের জানুয়ারির পর সর্বনিম্ন। সে সময় কভিড-১৯ সংক্রমণ ভোক্তা আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
জাপানের মন্ত্রিপরিষদ অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ, খাদ্য ও অন্যান্য দৈনন্দিন পণ্যের দাম ক্রমেই বাড়ছে। এ পরিস্থিতি সম্ভবত ভোক্তা মনোভাবকে সংকুচিত করবে। সবমিলিয়ে ভোক্তা ব্যয় কমে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
আগামী মাসে জাতীয় উচ্চকক্ষ নির্বাচনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি। এটি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সরকারের জনপ্রিয়তার আঘাত করছে। যদিও ক্ষমতাসীন দল এখনো বিপুল ব্যবধানে জয়ী হওয়ার আশা করছে।
মুডি’স অ্যানালিটিকসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ স্টেফান অ্যাংরিক একটি নোটে বলেন, কভিডজনিত স্থবিরতা কাটিয়ে ধীরে ধীরে জাপানের অর্থনীতি পুনরায় চালু হচ্ছে। তবে একদিকে দুর্বল মজুরি বৃদ্ধি এবং অন্যদিকে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে ভোক্তা রা চাপের মধ্যে রয়েছেন। এ পরিস্থিতি যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকেই বিপত্তির ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে।