চলমান বন্যায় সিলেট বিভাগে কৃষি খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার ঘরে ঘরে বিরাজ করছে হাহাকার। মাঠের ফসল, অনেকের ধানের গোলা সব ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। পানি নামতে শুরু করলেও এখনো ফসলি জমি নিমজ্জিত বন্যার পানিতে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হিসাব মতে, বিভাগে চলতি মৌসুমে আউশ, বোনা আমন ও সবজি মিলিয়ে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে পানিতে নিমজ্জিত ৮৮ হাজার ৬২২ হেক্টর, যা আবাদকৃত মোট ফসলি জমির ৪৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর; সিলেট অঞ্চল সূত্র এসব তথ্য জানিয়ে বলেছে, সিলেট বিভাগে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৩৬ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে
৪৪ দশমিক ৯৩ ভাগ জমির আউশ পানিতে নিমজ্জিত। এছাড়া ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমির বোনা আমন ও ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ জমির সবজি পানিতে তলিয়ে আছে। এ বিভাগে ৬৫ হাজার ৮০৭ হেক্টর জমির আউশ, ১৪ হাজার ৯৮৮ হেক্টর জমির বোনা আমন এবং ৭ হাজার ৮২৭ হেক্টর জমির সবজি পানিতে নিমজ্জিত।
জেলাওয়ারি পরিসংখ্যানে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ২৬ হাজার ২৭৯ হেক্টর জমির আউশ ধান নিমজ্জিত রয়েছে। এ জেলায় ২ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমির সবজি পানিতে তলিয়ে আছে। এছাড়া সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় যথাক্রমে ১১ হাজার ৪০০ হেক্টর, ১৬ হাজার ৩৩৮ হেক্টর ও ১১ হাজার ৭৫৭ হেক্টর জমির আউশ ধান পানিতে তলিয়ে আছে। এছাড়া হবিগঞ্জের ১৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর ও মৌলভীবাজারে ৩৫৮ হেক্টর জমির বোনা আমন পানিতে নিমজ্জিত।
সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৪০০, সিলেটে ২ হাজার ৬৬৫, হবিগঞ্জে ১ হাজার ৯১৫ ও মৌলভীবাজারে ৮৪৭ হেক্টর জমির সবজি জলমগ্ন।
সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের চাতলীবন্দ গ্রামের কৃষক তেরাব আলী জানান, দুই দফা বন্যায় সর্বস্ব হারিয়েছেন তিনি। প্রথম দফা বন্যা ধানের চারা নষ্ট করে যায়। এরপর বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চারা এনে ধান রোপণ করেছিলেন। সেই আউশ ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। উঁচু জমিতে কিছু মৌসুমি সবজি চাষের চেষ্টা করেছিলেন, সেগুলোও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
গোয়াইনঘাটের নন্দিরগাঁও গ্রামের আব্দুল আলী বলেন, এ উপজেলা মূলত তিন দফা বন্যাক্রান্ত হয়েছে। তাদের ক্ষতির আর কিছু অবশিষ্ট নেই, প্রথম বন্যায় হাওরের ফসল, দ্বিতীয় দফা বন্যায় ইরি খেত আর তৃতীয় দফায় সর্বশেষ অবলম্বন গোলার ধান ভেসে যায়। আগামীতে কি হবে সেটা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।
সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের নীলগাঁওয়ের বাসিন্দা ফরিদ আহমদ বলেন, প্রথম দফা বন্যায় নিচু এলাকার বোরো ফসল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের এলাকা অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ায় ধান তুলতে পেরেছিলেন। চলমান বন্যার পানি দ্রুত ঘরে ঢুকে পড়লে ধান সরানোর সুযোগই পাননি। বেশির ভাগ ধান পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সর্বনাশা বন্যা সব কেড়ে নেবে কখনো কল্পনাও করেননি।
ডিএই সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান জানান,
আউশ, বোনা আমন ও সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি ধীরগতিতে নামায় নিমজ্জিত ফসল ঘরে তোলার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
তিনি জানান, গত ৯ জুন থেকে ২২ জুন—
এ সময়ে ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে পরবর্তী ক্ষতি নিরূপণ করা হবে। তবে
সরকার কৃষকদের সহায়তায় নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তায় মন্ত্রনালয়ে কিছু প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। পানি নেমে গেলে তাদের সার্বিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জুন থেকে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। ১৬ জুন থেকে সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমা অতিক্রম করে। ফলে তলিয়ে যায় সিলেট নগরীর অধিকাংশ এলাকা। ১০ দিন পর ২৫ জুন সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার নিচে নেমে এলেও সিলেট নগরীর অনেক নিচু এলাকায় এখনো বন্যার পানি রয়েছে।