চীনজুড়ে শিথিল করা হচ্ছে কভিডজনিত বিধিনিষেধ। বাণিজ্যনগরী সাংহাইসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোয় লকডাউন তুলে নেয়া হয়েছে। পুনরুদ্ধার হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির শিল্পোৎপাদন খাত। যদিও এ খাতের মুনাফায় পতন অব্যাহত রয়েছে। মে মাসেও দেশটির শিল্প খাতের মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় নিম্নমুখী। কভিডজনিত প্রতিবন্ধকতার জেরেই টানা দ্বিতীয় মাসের মতো এ খাতের মুনাফা কমেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স।
ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক্স (এনবিএস) অনুসারে, মে মাসে শিল্প খাতের মুনাফা এক বছর আগের তুলনায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। যদিও এ হার এপ্রিলে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সংকোচনের তুলনায় কম। জ্বালানি তেল ও গ্যাস উত্তোলন খাতের উচ্চ মুনাফা শিল্প মুনাফার পতন কমাতে সহায়তা করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দামে উল্লম্ফন এ খাতের মুনাফা ব্যাপকহারে বাড়িয়ে তুলেছে।
গত মাসে দেশটির প্রধান উৎপাদন কেন্দ্রগুলোয় পুনরায় কারখানা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। তবে কভিডজনিত কারণে সৃষ্ট সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা এ খাতের মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ সময়ে উৎপাদন খাতের মুনাফা ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। এপ্রিলে এ খাতের মুনাফা কমার হার ছিল ২২ দশমিক ৪ শতাংশ। সরঞ্জাম উৎপাদন বাড়ায় মুনাফা সংকোচনের গতি কিছুটা ধীর হয়েছে।
এনবিএসের জ্যেষ্ঠ পরিসংখ্যানবিদ ঝু হং একটি বিবৃতিতে বলেন, সামগ্রিকভাবে শিল্প সংস্থাগুলো কার্যক্রম কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতায় ফিরেছে। তবে এটিও মনে রাখতে হবে যে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মুনাফা নিম্নমুখী রয়েছে। ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের চাপ এবং উৎপাদন ও পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ঝু হং বলেন, গত মাসে দেশের উৎপাদন খাত ধীরে ধীরে উন্নতি করেছে। তবে কভিডে বিপর্যস্ত সাংহাই, পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ জিয়াংসু এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ জিলিন ও লিয়াওনিকের শিল্প সংস্থাগুলোর মুনাফা ২০ শতাংশেরও বেশি সংকুচিত হয়েছে।
মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক গ্লোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষকরা একটি নোটে বলেছেন, বিভিন্ন খাত ও ফার্মজুড়ে মুনাফার ভিন্নতা উল্লেখযোগ্য রয়ে গিয়েছে। কিছু কারখানা লকডাউনের পর সাংহাইয়ের মতো শহরগুলোয় পুনরায় কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে রিয়েল এস্টেট খাতে শ্লথগতি এবং পুনরায় সংক্রমণের আশঙ্কা উৎপাদন কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এজন্য বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে ভঙ্গুর পুনরুদ্ধারের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এনবিএসের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা বার্ষিক ১ শতাংশ বেড়ে ৩ লাখ ৪৪ হাজার কোটি ইউয়ানে (৫১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার) পৌঁছেছে। মুনাফা বাড়ার এ হার বছরের প্রথম চার মাসে ৩ দশমিক ৫ শতাংশের চেয়ে ধীর। এ সময়ে গাড়ি উৎপাদন সংস্থাগুলোর মুনাফা ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। জানুয়ারি-মে সময়ে শিল্প সংস্থাগুলোর আয় ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৫৩ লাখ ১৬ হাজার কোটি ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে। এ খাতের আয় বাড়ার হারও প্রথম চার মাসে ৯ দশমিক ৭ শতাংশের তুলনায় শ্লথ।
কারখানা কার্যক্রমে গতি ফেরায় মে মাসে চীনের অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। তবে এক্ষেত্রে দুর্বল ভোক্তাব্যয় এবং কঠোর কভিডজনিত বিধিনিষেধ নীতিনির্ধারকদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সামগ্রিক শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও চীনের পাইকারি মূল্যস্ফীতি মে মাসে ১৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও অন্যান্য প্রধান শিল্প পণ্যগুলোর দুর্বল চাহিদার কারণে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী রয়েছে।
ইংদা সিকিউরিটিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক জেং হাউচেং বলেন, অভ্যন্তরীণ কভিড পরিস্থিতি পুনরায় অবনতি এবং জ্বালানি তেলের দাম উল্লেখযোগ্য বাড়ার আশঙ্কা নেই। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বাড়তি ব্যয়ের চাপ অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও চলতি মাসে শিল্প মুনাফা বাড়বে বলে আশা করছি।