বাংলাদেশের রফতানি ৫০ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসেই পণ্য রফতানি হয়েছে ৪৭ বিলিয়ন ডলারের। অর্থবছর শেষ হতে বাকি আর মাত্র দুদিন। চলতি মাসের প্রথম ২৫ দিনে শুধু পোশাক রফতানিই হয়েছে ৩২০ কোটি ডলারের। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরে ৫০ বিলিয়ন ( হাজার কোটি) ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়েছে বাংলাদেশের রফতানি 



দ্রুতই ১০০ বিলিয়ন ডলারের রফতানি উপহার দিতে পারব কে আজাদ

আমি অত্যন্ত আনন্দিত স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী পালনের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা রফতানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছি। সংকটের মধ্যেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এটা আশার কথা। তবে এখন আমাদের অনেক সতর্কও থাকতে হবে। উন্নত বিশ্বে এখন মূল্যস্ফীতি চলছে। অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে গেছে, যা আমাদের জন্য সংকটের বার্তা দিচ্ছে। তুলাসহ অন্যান্য কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। অবস্থায় সরকারকে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এরই মধ্যে কারখানায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। জ্বালানি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। এটা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি ঠিক থাকলে খুব কম সময়ের মধ্যেই আমরা ১০০ বিলিয়ন ডলারের রফতানি উপহার দিতে পারব।

সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই

 


বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় অর্জনকুতুবউদ্দিন আহমেদ

এটি তৈরি পোশক খাত দেশের জন্য অনেক বড় অর্জন। এটাকে ধরে রাখার জন্য আমাদের অনেক চিন্তাভাবনা করতে হবে। প্রবৃদ্ধি করা সহজ। সে তুলনায় ধরে রাখাটা কঠিন। এখন বৈশ্বিক যে অবস্থা, যেকোনো কারণেই হোক চীনের অবস্থা এখন আমাদের পক্ষে আছে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের অবস্থান আরো শক্তিশালী করতে হবে। পণ্যে বৈচিত্র্য নিয়ে আসা এবং গবেষণা উন্নয়ন করতে হবে। চীনের টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন নতুন কাপড় বের হচ্ছে। তারা গবেষণা করছে। আমাদেরও সেদিকে এগোতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও নিশ্চিত করতে হবে। গবেষণার পরিসর জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে শিল্প-কারখানাগুলোও উপকৃত হবে। এভাবে অনেক বেশি এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

সাবেক সভাপতি, বিজিএমইএ

 


দেশের জন্য অবশ্যই একটি মাইলফলকশেখ বশির উদ্দিন

রফতানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্জন দেশের জন্য অবশ্যই একটি মাইলফলক। কৃষিজাত পাটপণ্য দিয়ে রফতানি খাতের শুরু হয়েছিল। কয়েক বছর ধরেই পাট একটা স্থির অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। তেমন একটা এগোতে পারছে না। আমরা গতানুগতিক পণ্যের বাইরে বের হতে পারছি না বলে। এটি একমাত্র শিল্প খাত, যেটির কাঁচামাল একেবারেই অভ্যন্তরীণ। যুক্তিগতভাবেও আমাদের উৎপাদনশীলতা আমরা একেবারেই বাড়াতে পারিনি। কৃষি থেকে শুরু করে পাট পাটজাত পণ্যের ভোক্তা পর্যন্ত যে সুযোগ বাজারে রয়েছে, সেখানে অনেকগুলো ডট আছে। ডটগুলোর সংযোগ ঘটানো হয়নি সঠিকভাবে। ফলে খাতের প্রকৃত সম্ভাবনা বিকশিত হয়নি। খাতটির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বিকশিত হওয়া প্রয়োজন। খাতের উন্নয়ন সম্ভাবনার মাত্রা অনেক বেশি ওপরে। পাট শিল্পকেও সঠিক সৃজনশীলতার মাধ্যমে এগিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যতে প্রচলিত রফতানি পণ্যের পাশাপাশি পাটের মতো সম্ভাবনাময় খাতগুলোর সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে রফতানি আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে, এমন প্রত্যাশা করছি।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আকিজ গ্রুপ

 


উন্নয়নশীল দেশের নিরিখে বড় পরিবর্তনঅধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান

স্বাধীনতার ৫০ বছরের মাথায় এসে ৫০ বিলিয়ন রফতানি, এটা অনেক বড় অর্জন। পাট প্রাকৃতিক সম্পদনির্ভর। পণ্য রফতানির মাধ্যমে যাত্রা করে এখন শিল্পজাত পণ্য রফতানি করছি। এটি একটি কাঠামোগত পরিবর্তন, সেটাও একটা বড় অর্জন। আমাদের এখনকার রফতানিতে শতকরা ৯০ ভাগই হলো শিল্পজাত পণ্য। উন্নয়নশীল দেশের নিরিখে এটি কাঠামোগত বড় পরিবর্তন। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদনির্ভর। অন্যরা তেল বা খনিজ সম্পদ রফতানি করছে। সেখানে শিল্পজাত পণ্য রফতানি করা বড় ধরনের একটা গুণগত পরিবর্তন। এটা ঠিক আমরা একটা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এটাকে আমি বলব, এমন একটা পণ্যে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রমাণ করতে পেরেছি, যার আন্তর্জাতিক বাজার প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের। বাজারে তৈরি পোশাকের আরো অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের এখন অন্তত পাঁচটা পণ্যের রফতানি বিলিয়ন ডলারের বেশি। এগুলো আমাদের অর্জন। আমাদের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ কারখানা গড়ে উঠেছে, যেগুলোর সুবিধাও আমরা পাচ্ছি। আমাদের স্থানীয় মূল্য সংযোজন যাতে বাড়ে সেদিকে নজর দিতে হবে। কেবল গ্রস এক্সপোর্ট নয়, নিট এক্সপোর্টও যেন আমরা বাড়াতে পারি।

সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি


আমরা যে পণ্য রফতানি করি তার চাহিদা কমবে নামোহাম্মদ হাতেম

রফতানি খাতের যে উন্নয়ন সেটা সরকারের আমলে হয়েছে। ২০১০ সালের পর এর গ্রোথ বেড়েছে। মাস শেষে শুধু পোশাক পণ্যের রফতানি ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আমার ধারণা আগামী অর্থবছর পণ্যটির রফতানি ৫০ বিলিয়ন ক্রস করবে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে একটা মন্দার আশঙ্কা করছি। কিন্তু আমরা যে পণ্য রফতানি করি তার চাহিদা কমবে না। নীতিগত সহায়তা পাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। সরকার আমাদের নীতিগত সহায়তা দিয়েছে। আরো এগিয়ে যেতে পারতাম, সেটি হয়নি কাস্টমসের পলিসিগত দীনতার কারণে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, কাস্টমসের লোকেরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অনেক নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। আমরা যারা দিন-রাত পরিশ্রম করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাতের জন্য পরিশ্রম করছি তাদের জন্য এটা খুবই দুঃখজনক। আমদানি-রফতানির জন্য সবচেয়ে বড় বাধাই হচ্ছে কাস্টমস।

নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ


অর্জন সহজহয়েছে সরকারের নীতি সহায়তায়মো. সায়ফুল ইসলাম

১৯৭১ সালে আমাদের যেটা ছিল সেখান থেকে ২০২২ সালে আমরা রফতানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছি। যেসব দেশ যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয় তারা কেউই সেভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পারেনি। আমরা স্বাধীনতার সময় কৃষিপ্রধান ছিলাম। শিল্প কারখানা ছিলই না। বঙ্গবন্ধুর একটা পরিকল্পনা ছিল। ৭৪- দুর্ভিক্ষ, বন্যা, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। সব মোকাবেলায়ই বঙ্গবন্ধুর তিন বছর চলে গেছে। যেখানে আমাদের পুরোটাই ছিল কৃষিভিত্তক, সেখানে আমাদের জিডিপিতে কৃষির অবদান মাত্র ১৩ শতাংশ। বাকিটা বেসরকারি খাত, শিল্প খাত। আমরা পাট, চা চামড়ার ওপর নির্ভর ছিলাম। তিনটা থেকে ধীরে ধীরে অনেকগুলোয় এগিয়েছি। বেসরকারি খাত নিজেরা চেষ্টা করে এগোচ্ছে, যা অনেক সহজ হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে নীতিসহায়তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে। আমি মনে করি, আমাদের রফতানি নীতিতে যে ৮০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য নির্ধারণ হয়েছে, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে সেটাও আমরা অতিক্রম করে যাব। লক্ষ্য অর্জনে যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে সরকারের নীতিসহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।

এমসিসিআই, সভাপতি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন