কুমিল্লার শ্রীকাইলে নতুন গ্যাস কূপ খননের কাজ শুরু করেছে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড’ (বাপেক্স)। শ্রীকাইল নর্থ-১ অনুসন্ধান কূপে বিজয়-১২ রিগ বসিয়ে এ গ্যাস কূপ খননের কাজ শুরু হয়।
বাপেক্স সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে বাপেক্স নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার, কূপ খনন, কূপের সংস্কারসহ নানা ধরনের কার্যক্রম শুরু করেছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শ্রীকাইল নর্থ-১ কূপ খননের কাজ শুরু হলো।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী বণিক বার্তাকে বলেন, শ্রীকাইল নর্থ-১ অনুসন্ধান কূপ খনন শুরু করেছি আমরা। আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে ভালো খবর দিতে পারব বলে আশা করছি। আমরা এখানে টু-ডি এবং থ্রি-ডি করেছি। আমরা প্রায় নিশ্চিত হয়েই এখানে ড্রিলিং করছি।
জানা গেছে, শ্রীকাইলে বাপেক্স যে এলাকায় কূপ খননের কাজ শুরু করেছে, ডিপিপি অনুযায়ী ওই কূপে ৯১ বিসিএফ গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করছে ভূতাত্ত্বিক বিভাগ। এছাড়া এখানে গ্যাস মিললে জাতীয় গ্রিডে এ কূপ থেকে দৈনিক ১০-১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাবে।
বাপেক্স ওই অঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধানে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তিনটি কূপ মিলে এ প্রকল্প নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। এর মধ্যে শ্রীকাইল নর্থ-১ অনুসন্ধান কূপ, সুন্দলপুর-৩, বেগমগঞ্জ-৪ (ওয়েস্ট) মূল্যায়ন কূপ রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে শুরুতে শ্রীকাইলে গ্যাস কূপ খননের কাজ শুরু করল সংস্থাটি।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বাপেক্সের আরেক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, শ্রীকাইল নর্থ-১-এ কূপ খননের কাজ শুরু হয়েছে। এখনই কোনো কিছু বলা যাবে না। পরীক্ষামূলকভাবে দেখার পর চূড়ান্তভাবে বলা যাবে এ কূপে ঠিক কী পরিমাণ গ্যাস মিলবে। আগামী তিন মাস গ্যাস কূপ খননের কাজ চলবে। বাকি এক মাস লাগবে টেস্টিং প্রক্রিয়ায়। সব মিলিয়ে চার মাস পর চূড়ান্তভাবে সবকিছু জানা যাবে।
এদিকে গ্যাস কূপ খননের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, আজ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের নেতৃত্বে শ্রীকাইল নর্থ-১-এ অনুসন্ধান কূপে বিজয়-১২ রিগ দিয়ে খননের কাজ শুরু হলো। আগামীতে গ্যাস নিয়ে আপনাদের সুখবর দিতে পারব আশা করছি। জ্বালানি স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশীয় জ্বালানি অনুসন্ধান, নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার, বিদ্যমান গ্যাসকূপগুলোয় ডিপ ড্রিলিংয়ের মাধ্যমে অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করছি।
বাপেক্স সূত্র বলছে, বর্তমানে শ্রীকাইল গ্যাসফিল্ড থেকে দৈনিক প্রায় ৩৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। নতুন কূপে গ্যাস মিললে দৈনিক ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে সংস্থাটির আটটি গ্যাসফিল্ড থেকে দৈনিক ১৩৮ মিলিয়ন ফুটের কিছু গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাপেক্সের নতুন উদ্যোগে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম নিঃসন্দেহে দেশের জ্বালানি খাতে আশার সঞ্চার করবে। নতুন কূপে গ্যাস অনুসন্ধান সেই পদক্ষেপের অংশ। নতুন অনুসন্ধান কূপে বাপেক্স ভালো খবর দিতে পারবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, বাপেক্স এরই মধ্যে তাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। নতুন করে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে জোরালো পদক্ষেপ তাদের সক্ষমতাকে তুলে ধরবে। যেখানে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাচ্ছে সেই কাজটি আরো আগে করা গেলে সুফল পাওয়া যেত। তবে শুধু শ্রীকাইলে নয়, দেশের যেসব জায়গা ভূতাত্ত্বিক জরিপ করা হয়েছে, সবগুলো জায়গায় শিগগিরই জোরালো অনুসন্ধান চালানো উচিত।