দেড় মাস ধরেই ৬ হাজার ৫০০ পয়েন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ পুঁজিবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

বছরের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই পুঁজিবাজারে নিম্নমুখিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর মধ্যে দেড় মাস ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স হাজার ৫০০ পয়েন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। সময়ে সূচকে ওঠানামা হলেও তা হাজার ৫০০ পয়েন্ট ছাড়ায়নি। পাশাপাশি দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। মাঝে শ্রীলংকার অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়েছিল। তার ওপর প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে প্রণোদনা থাকবে বলে প্রত্যাশা ছিল সবার। কিন্তু বাজেট প্রস্তাব উত্থাপনের পর দেখা যায় এতে পুঁজিবাজারের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। টাকার ক্রমাগত অবমূল্যায়ন, চলতি মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাওয়া কলমানি বাজারে সুদের হার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও বিনিয়োগকারীদের ভাবিয়ে তুলেছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে সূচক লেনদেনে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বছরের ২২ মে ডিএসইএক্স ছিল হাজার ৫৬৫ পয়েন্টে। আর ২২ মে সূচকটি কমে হাজার ১৪২ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে দাঁড়ায়। গত দেড় মাসে হাজার ৫০০ পয়েন্টের সীমা থেকে বের হতে পারছে না ডিএসইএক্স। গতকালও দেশের পুঁজিবাজারে অস্থিরতা দেখা গেছে। লেনদেন শুরুর আধা ঘণ্টা পর থেকেই পয়েন্ট হারাতে শুরু করে সূচক। দুপুর ১২টার দিকে সূচকটি ঘুরে দাঁড়ালেও এর পরই আবারো পয়েন্ট হারাতে শুরু করে। অবশ্য শেষ ঘণ্টার ক্রয় চাপে শেষ পর্যন্ত দিন শেষে ১৯ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৩২০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স। এর আগের কার্যদিবসে যা ছিল হাজার ৩০১ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইর ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ গতকাল পয়েন্ট কমে হাজার ২৮৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ২৮৬ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিন শেষে পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৩৮১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৩৭৯ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংক, রেনাটা লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট রহিমা ফুডের শেয়ার।

ডিএসইতে গতকাল ৭০০ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ৫৯৪ কোটি টাকা। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩৮২টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ২৩৭টির, কমেছে ৯১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৫৪টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।

খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ দশমিক শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে বস্ত্র খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ দশমিক শতাংশ দখলে নিয়েছে ওষুধ রসায়ন খাত। ১০ দশমিক শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিবিধ খাত। খাদ্য আনুষঙ্গিক খাতের দখলে ছিল লেনদেনের দশমিক শতাংশ। এছাড়া প্রকৌশল খাতের দখলে ছিল মোট লেনদেনের দশমিক শতাংশ। গতকাল দশমিক শতাংশ ইতিবাচক রিটার্নের ভিত্তিতে শীর্ষে ছিল সিরামিক খাত। অন্যদিকে শতাংশ নেতিবাচক রিটার্নের ভিত্তিতে শীর্ষে ছিল চামড়া খাত।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) নির্বাচিত সূচক সিএসসিএক্স গতকাল ২৬ পয়েন্ট বেড়ে ১১ হাজার ১৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১১ হাজার ১৩৩ পয়েন্টে। সিএসইর সব শেয়ারের সূচক সিএএসপিআই গতকাল ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে ১৮ হাজার ৬১৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১৮ হাজার ৫৭৩ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২৯০টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৪টির, কমেছে ১০৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪৩টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে ৬১ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ২১ কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন