পদ্মা সেতুতে ৮ ঘণ্টায় পার হলো ১৫ হাজার ২০০ গাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার কথা ছিল গতকাল সকাল ৬টা থেকে। তবে এর আগেই সেতুর দুই পারে টোল প্লাজায় এসে দাঁড়ায় শত শত গাড়ি। কারণে নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট আগেই শুরু হয়ে যায় যান চলাচল। প্রথম ঘণ্টায় ১৫ হাজার ২০০ গাড়ি পদ্মা সেতু পারাপার হয়েছে। সেতুতে গাড়ি থেকে নামা ছবি তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা উপেক্ষা করেছেন অনেক যাত্রী। সেতুর নাটবল্টু খুলে ফেলা এবং বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী চুরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দায়িত্বরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

পদ্মা সেতুতে টোল আদায় করা হচ্ছে তিন শিফটে। একেকটি শিফট ঘণ্টার। গতকাল প্রথম শিফট সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ১৫ হাজার ২০০ গাড়ি সেতু পারাপার হওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্ত থেকে পার হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে গিয়েছে হাজার ৪৩৮টি যানবাহন। এসব যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে ৪৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫৫০ টাকা। অন্যদিকে জাজিরা প্রান্ত থেকে ঢাকার দিকে এসেছে হাজার ৭৬২টি যানবাহন। টোল আদায় হয়েছে ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টাকা। দুই প্রান্ত মিলিয়ে চালুর প্রথম ঘণ্টায় পদ্মা সেতু থেকে টোল আদায় হয়েছে ৮২ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকা। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্ত থেকে যত যানবাহন পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়েছে, তার ৬০ শতাংশই মোটরসাইকেল ছিল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।

পদ্মা সেতুতে মাঝপথে গাড়ি থামানো গাড়ি থেকে নেমে ছবি তোলা নিষেধ। এর পরও গতকাল অনেক যাত্রী চালককে সেতুর বিভিন্ন প্রান্তে গাড়ি থেকে নেমে নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলতে দেখা গিয়েছে। তাদের কেউ সেতুর সড়ক বিভাজকে দাঁড়িয়ে, কেউ রেলিংয়ে বসে, আবার কেউ সেতুতে শুয়ে ছবি তুলেছেন। দল বেঁধে হাঁটাহাঁটি গল্পগুজব করতেও দেখা গিয়েছে অনেককে। -সংক্রান্ত অসংখ্য ছবি ভিডিও গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে। এর মধ্যে একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি সেতুর রেলিংয়ের নাটবল্টু খুলে ফেলছেন। পরে মো. বায়েজিদ (৩১) নামের ওই ব্যক্তিকে ঢাকার শান্তিনগর এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ।

অনেকে শুধু সেতুতে ওঠার জন্যই আলাদা করে গাড়ি ভাড়া করেছেন। আবার অনেকে টোল প্লাজার আগে বিভিন্ন যানবাহনে উঠে সেতুর ওপর নেমে গিয়েছেন। কারণে উত্সুক মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বলে জানান বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।

এমন প্রেক্ষাপটে সেতুর নিরাপত্তা দিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরু থেকেই নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট অ্যান্ড সেফটি টিম (ইএসএসটি)

চিঠিতে প্রকল্প পরিচালক বলেন, সেতুর ওপর যানবাহন থেকে নামা নিষিদ্ধ। এর পরও অনেকে সেতুতে নেমে মূল্যবান মালামাল যন্ত্রপাতি চুরি করছে। অনেকে দুদিকের টোল প্লাজার আশপাশে যন্ত্রপাতি মালামালের ক্ষতি করছে। অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে ইএসএসটিকে টহল জোরদার করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

সেতুতে কী কী করা যাবে না, তা উল্লেখ করে উদ্বোধনের আগেই একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পদ্মা সেতুর ওপর অনুমোদিত গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। এর বেশি গতিতে গাড়ি চালানো যাবে না। পদ্মা সেতুর ওপর যেকোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা বা হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ। তিন চাকাবিশিষ্ট যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা ইত্যাদি), হেঁটে, সাইকেল বা নন-মোটরাইজড গাড়িতে করে সেতু পারাপার হওয়া যাবে না। গাড়ির বডির চেয়ে বেশি চওড়া এবং দশমিক মিটার উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার করা যাবে না। সেতুর ওপর কোনো ধরনের ময়লা ফেলা যাবে না। গতকাল গণবিজ্ঞপ্তিটি আবার প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন