ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ কেউ আসেন তারকা হতে, কেউ আসেন ব্যবসা করতে। আর কেউ এসে ইন্ডাস্ট্রিটাকেই বদলে দেন। হতে পারে তাদের দক্ষতা, হতে পারে গ্ল্যামার দিয়ে কাজটা হয়। কেউ কেউ আইডিয়া দিয়ে করেন। শাহরুখ খান মূলত এ সবকিছুর প্যাকেজ। নিজের সব কথায় বা সাক্ষাত্কারে শাহরুখ খান বলে থাকেন, বলিউড তাকে অনেক কিছু দিয়েছে। কিন্তু তিনি এমন এক ব্যক্তি, যিনি বলিউডকে দিয়েছেন বহু কিছু।
নব্বইয়ের দশকে শাহরুখ খানের উত্থান। এ শতকের প্রথম দশকেও দর্শক মাতিয়েছেন তিনি। শাহরুখ খান একটা নাম নয়, ব্র্যান্ড। কিন্তু এ নামের বাইরে তিনি হয়েছেন বাজিগর, বাদশাহ ও কিং খান। কিন্তু সেটা কেবল হিট সিনেমা বা বক্স অফিসের রোজগারের জন্য নয়, শাহরুখ নিজস্ব একটা স্বাতন্ত্র্য তৈরি করেছিলেন। একজন টিভি অভিনেতাকে যখন ১৯৯২ সালে রাজ কাওয়ারের দিওয়ানায় কাস্ট করা হয়, তখন কেউ জানত না বলিউড তার সর্বকালের অন্যতম সেরা অভিনেতাকে পেয়েছে। শাহরুখ তার ৩০ বছর পূর্তিতে দেয়া ভিডিও বার্তায় নিজেও বলেছেন, ‘আমি ভেবেছিলাম বছর দুয়েক হয়তো কাজ করে পাঁচ-সাতটা সিনেমা করব।’
শুরুর সময়টা ভালো যায়নি এ পাঠানের। প্রথম তিন বছরে বেশকিছু সিনেমা করলেও তেমন কোনো সফলতা নেই। কপাল ঘুরেছিল যশ চোপড়ার হাত ধরে। দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গের রাজ তাকে দিল রোমান্টিক বয়ের খেতাব। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। করণ জোহর, যশ চোপড়াদের হাত ধরে একের পর এক উপহার দিয়েছেন হিট সিনেমা। কিন্তু সেখানে বলিউড কী পেল?
একটি টক শোতে করণ জোহর বলেছিলেন, হলিউড অভিনেতা টম ক্রুজের তুলনায় শাহরুখকে বেশি মানুষ চেনে। চেনানোর এ কাজটি করেছেন শাহরুখ নিজে। নব্বইয়ের দশকে নিজের পাশাপাশি বলিউডকে নিয়ে গেছেন তিনি দেশের বাইরে। বহু স্টেজ শো তিনি করেছেন যেখানে নিজের পাশাপাশি বলিউডকে পরিচয় করিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে দূরপ্রাচ্য এবং পশ্চিমেও এর মাধ্যমে বলিউডের বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে।
নিজেকে নিয়েও কম নিরীক্ষা করেননি শাহরুখ। তাকে রোমান্টিক হিরো হিসেবে দেখা হলেও ক্যারিয়ারের শুরুতেই তিনি ডর সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘আই লাভ ইউ কক... কক...
কিরাণ’
আজও বিখ্যাত সংলাপ। কিন্তু সে সময় খল চরিত্র মানে ছিল খল চরিত্র। শাহরুখ প্রথম এমন একাধিক চরিত্র করেছেন। ডরের পর আনজাম, ডুপ্লিকেট করেছেন তিনি। দ্বৈত ও ক্যামিও চরিত্রেও শাহরুখ নিজের স্বাতন্ত্র্য ধরে রেখেছেন।
নিজের প্রযোজনা সংস্থা থেকে নতুন নতুন অনেক নিরীক্ষা করার পাশাপাশি বলিউডে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের কাজের অন্যতম ভরসার জায়গা শাহরুখের রেড চিলিস। নতুন বহু অভিনেতা-অভিনেত্রীকে সুযোগ দিয়েছেন তিনি। মন্দিরা বেদী থেকে শুরু করে আনুশকা শর্মা ও দিপীকা পাড়ুকোন শাহরুখের হাত ধরেই এসেছেন। এ সময়ের জিশান আইয়ূব থেকে শুরু করে জয়দীপ আহেলওয়াতও শাহরুখের সহযোগিতার কথা অকুণ্ঠ চিত্তে বলেন।
গত কয়েকটা বছর ভালো যায়নি শাহরুখের। সিনেমার ধারা বদল, বলিউডের পড়তি দশার পাশাপাশি একাধিক নিরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আগামী বছর তিনটি সিনেমা নিয়ে আসছেন তিনি। পাঠান, জাওয়ান ও ডাঙ্কি নিয়ে দর্শক আবার নতুন করে শাহরুখের জন্য অপেক্ষা করছে। তবে সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, রাজার বেশেই ফিরবেন তিনি।