এশিয়ায় চাহিদা বৃদ্ধিতে ঝুঁকিতে ইউরোপের এলএনজি আমদানি

বণিক বার্তা ডেস্ক

স্পট মার্কেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ঊর্ধ্বমুখী দাম এশীয় অঞ্চলে চাহিদা বৃদ্ধি শীতের মৌসুমে ইউরোপের বাজারে পর্যাপ্ত এলএনজির সরবরাহকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। পাশাপাশি রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য এলএনজি সরবরাহ কেন্দ্র ফ্রিপোর্টের সরবরাহ বিভ্রাট ঝুঁকিকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। খবর রয়টার্স।

সম্প্রতি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানিনির্ভরতা আনতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ফলে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে বিকল্প উৎস থেকে প্রচুর পরিমাণে এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে আঞ্চলিক জোটটিকে। এক্ষেত্রে ইউরোপের প্রধান ভরসা যুক্তরাষ্ট্র। নভেম্বরের মধ্যে গ্যাসের মজুদ ৮০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে ইইউর নেতাদের।

যতটা সম্ভব দ্রুতই রাশিয়ার গ্যাসের ওপর থেকে নির্ভরতা সম্পূর্ণ কাটিয়ে উঠতে চাইছে ইউরোপ। লক্ষ্যে কয়লাভিত্তিক জ্বালানি প্রকল্প অন্যান্য দেশ থেকে এলএনজি আমদানির দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করেছে অঞ্চলটির বিভিন্ন দেশ। নর্ডস্ট্রিম- পাইপলাইনে রুশ জ্বালানি সরবরাহ কমে আসায় এমন পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হয়েছে ইইউ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নতুন সরবরাহ অনেকাংশে কমে আসা খাতে বিনিয়োগ হ্রাস পাওয়া বৈশ্বিক এলএনজির বাজারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য এলএনজি উৎপাদনকারী কয়েকটি দেশ পূর্ণ সক্ষমতার ব্যবহার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শীতল জ্বালানি পণ্যটির বাজারে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

চলতি সপ্তাহে এলএনজির দাম বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। শিগগিরই প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ৪০ ডলার ছাড়াবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। যদি বৈশ্বিক সরবরাহ সংকট আরো প্রকট হয়ে ওঠে তবে এলএনজির বাজার আদর্শ রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছবে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ বা আগামী বছরের শুরতে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ৬০ ডলার স্পর্শ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি তৈরি হলে ইউরোপের জন্য এলএনজির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়বে।

চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ফ্রিপোর্ট এলএনজির প্লান্টে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইউরোপে এলএনজির সরবরাহ হুমকির মুখে পড়ে। কোম্পানিটি জানায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ সুবিধা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হবে। বছরের শেষ নাগাদ আংশিক উৎপাদন সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে।

ফ্রিপোর্ট এলএনজির উল্লেখযোগ্য ক্রেতা  ইউরোপ। প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহকৃত এলএনজি কার্গোর ৭০ শতাংশের গন্তব্য ছিল অঞ্চলটির বিভিন্ন দেশ। ফিপোর্টের সরবরাহ বন্ধ থাকায় ইউরোপে ৪০-৫০ লাখ টন এলএনজির ঘাটতি তৈরি হবে, যা জ্বালানির অন্য উৎসগুলোর প্রতি প্রতিযোগিতা আরো বাড়িয়ে তুলবে।

চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ এলএনজি আমদানি করেছে ইউরোপ, যা এক বছর আগের তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। শীতল জ্বালানি পণ্যটির দাম স্থিতিশীল রাখতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এলএনজি আমদানি করেছে অঞ্চলটি।

ক্যাপ্রা এনার্জির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামির দ্রুজ বলেন, এশিয়া ইউরোপের এলএনজির বাজারে ভারসাম্যহীনতা ক্রমেই বাড়ছে। ইউরোপিয়ান মজুদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এশিয়ার মজুদ সংক্রান্ত ব্যয়ও বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের শেষার্ধে ইইউ, তুরস্ক যুক্তরাজ্যের এলএনজি আমদানির পরিমাণ প্রথমার্ধ থেকে কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। এটির পরিমাণ হতে পারে প্রায় ১৬ শতাংশ বা এক কোটি টন।

শীতকালীন জ্বালানি চাহিদা পূরণে এশীয় ক্রেতারা স্পট মার্কেটের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে জাপান-কোরিয়া মার্কারে (জেকেএম) এলএনজির দাম আগের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেড়ে প্রতি এমএমবিটিইউ ৩৭ ডলারে পৌঁছেছে।

রিস্টাড এনার্জির জ্যেষ্ঠ এলএনজি বিশ্লেষক কুশাল রমেশ বলেন, শীতকাল সামনে রেখে টিটিএফ জেকেএম উভয় বাজারেই দামের রেখা দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। বাজারগুলোয় এলএনজির ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য স্পট মার্কেটের তুলনায় বেশি দেখা যাচ্ছে। ফলে এলএনজি কার্গোর জন্য ইউরোপের সঙ্গে এশিয়াকে প্রতিযোগিতায় নামতে দেখা যাবে। এছাড়া আসন্ন শীতে জাপানের বিদ্যুতের বাজার আরো কঠিন হয়ে উঠবে, যা এলএনজির চাহিদা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন