আফ্রিকার জ্বালানি খাতে অভ্যুত্থান ঘটাতে পারে হাইড্রোজেন

বণিক বার্তা ডেস্ক

হাইড্রোজেন উৎপাদন কারখানার একটি প্রটোটাইপ

একসময় যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে ছিল আফ্রিকা। সেলফোন প্রযুক্তি অঞ্চলটিতে যোগাযোগে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। এখন জ্বালানি খাত নিয়ে এমন পরিকল্পনা করছে বিশ্বের পিছিয়ে থাকা অঞ্চলটি। হাইড্রোজেনের ওপর ভর করে ব্যয়বহুল জ্বালানি আমদানি থেকে মুক্ত হতে চাইছে দেশগুলো। আমদানি করা পেট্রল ডিজেলের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোকে হাইড্রোজেন স্বাধীনতার পথ উন্মুক্ত করে দিতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর দ্য ন্যাশনাল।

বর্তমানে অ্যাঙ্গোলা নাইজেরিয়ার মতো জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী দেশগুলোও আমদানি করা পরিশোধিত জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। বিশ্লেষকরা বলছেন, অবস্থায় দেশগুলো যদি হাইড্রোজেন উৎপাদনে মনোযোগ দেয়, তাহলে দারিদ্র্যপীড়িত অর্থনীতিগুলোও অনেকটা চাপমুক্ত হতে পারবে।

বৈশ্বিক খনন কোম্পানি ইউরোশিয়ান রিসোর্সেস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী বেনেডিক্ট সোবোটকা বলেন, আফ্রিকা পশ্চিমের কিছু উত্তরাধিকার প্রযুক্তি যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আফ্রিকার সম্পদ পশ্চিমা দেশগুলোর উপকারে চলে গিয়েছে। তবে হাইড্রোজেন আফ্রিকার দেশগুলোর সম্পদ নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করেছে।

হাইড্রোজেন সাধারণত প্রাকৃতিক গ্যাস বা পানির অণু থেকে সংগ্রহ করা হয়। ইলেক্ট্রোলাইসিস নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়ায় এটি উৎপাদন করা হয়। বাড়ি, যানবাহন বা অন্য জ্বালানিনির্ভর প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্যও জ্বালানি ব্যবহার করা যেতে পারে।

ট্রেড সেন্টারের (ট্রালাক) একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, জ্বালানি আমদানিতে আফ্রিকার দেশগুলোকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়। অঞ্চলটিতে পরিবহন ব্যয় বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। পশ্চিম আফ্রিকায় সড়কপথে একটি কনটেইনার পরিবহন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

স্থলবেষ্টিত দেশের জন্য এটি আরো ভয়াবহ হতে পারে। কারণ দেশগুলোকে চাহিদার সবকিছুই সড়কপথে পরিবহন করতে হয়। ট্রালাকের গবেষণায় উঠে এসেছে, পরিবহন খরচের বৈশ্বিক গড় একটি কনটেইনার সামগ্রীর মোট মূল্যের প্রায় শতাংশ। তবে আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য ব্যয় প্রায় ৫০ শতাংশ। তাছাড়া অঞ্চলটির অনেক মানুষ কেবল পরিবহনের জন্য নয়, বিদ্যুতের জন্যও পেট্রল ডিজেলের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

বিশ্বব্যাংকের এনার্জি অ্যান্ড এক্সট্রাক্টিভিস গ্লোবাল প্র্যাকটিস বিভাগের বৈশ্বিক পরিচালক ডেমোট্রিওস পাপাথানাসিউ বলেন, উপকূল থেকে যে দেশ যত বেশি দূরত্বে অবস্থিত সে দেশের পরিবহন ব্যয় তত বেশি। সড়কপথে পরিবহন করা জ্বালানি খুবই ব্যয়বহুল। তাছাড়া আফ্রিকায় এটি পরিবহনের জন্য খুব কমই পাইপলাইন রয়েছে। পরিবর্তে সেখানে ট্রাকে জ্বালানি আমদানি করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে হাইড্রোজেন আফ্রিকার জন্য বিপ্লব ঘটাতে পারে। কারণ এটি যেকোনো জায়গায় উৎপাদন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে লজিস্টিক্যাল চেইনেরও প্রয়োজন হয় না।

সৌর প্যানেল, হাইড্রো ড্যাম বা বায়ু খামার থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে ইলেকট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এজন্য সরবরাহ ব্যবস্থা ছাড়া যেকোনো স্থানেই হাইড্রোজেন উৎপাদন করা যায়। ডেমোট্রিওস পাপাথানাসিউ বলেন, প্রযুক্তি আফ্রিকাকে বেশ দ্রুত পরিবর্তন করতে পারে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব প্রযুক্তি স্থাপন করতে চাই। হাইড্রোজেন ব্যবহার করে আমরা স্বল্প ব্যয়ে উৎপাদন খাত চাঙ্গা করতে পারি।

ইউরোপেও হাইড্রোজেন প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সংকটের মুখে পড়ে প্রযুক্তিতে ঝুঁকছে অঞ্চলটি। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ১২টি হাইড্রোজেন প্রকল্প চলমান রয়েছে। পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে আরো কিছু প্রকল্প।

হাইড্রোজেন রফতানি করেও আফ্রিকার দেশগুলো লাভবান হতে পারে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে দেশগুলো নিজস্ব চাহিদাও পূরণ করতে পারবে। অ্যাঙ্গোলা জার্মানির একটি হাইড্রোজেন সরবরাহকারী হতে চলেছে। কেন্দ্রীয় আফ্রিকার দেশ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি সংস্থা সোনাঙ্গোল জার্মান প্রকৌশল সংস্থাগুলোর সহায়তায় একটি হাইড্রোজেন কারখানা তৈরির চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এরই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রত্যন্ত গ্রামে হাইড্রোজেন জেনারেটর চালানোর পরীক্ষা করছে। কিছু খনন প্রতিষ্ঠানও হাইড্রোজেন ব্যবহারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। এছাড়া মিসর, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, নামিবিয়ার মতো দেশগুলো হাইড্রোজেন জ্বালানির জন্য বিস্তৃত পরিকল্পনা করছে।

আফ্রিকায় এরই মধ্যে হাইড্রোজেন ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছে। মে মাসে খনন কোম্পানি অ্যাংলো আমেরিকান একটি জ্বালানি সেল-চালিত লরি চালু করেছে। গাড়িটি প্রায় ৩০০ টন আকরিক লোহা বহন করতে পারে। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী ডানকান ওয়ানব্লাড বলেন, এটি আমাদের জন্য গেম চেঞ্জার হতে চলেছে। পাশাপাশি আমাদের দক্ষতা প্রযুক্তি বিকাশে বিদেশে যাওয়ার দরকার হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা গাড়ি তৈরি করতে পেরেছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন