খরস্রোতা নদীতে নির্মিত বিশ্বের দীর্ঘতম সেতুর উদ্বোধন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পৃথিবীর সবচেয়ে খরস্রোতা নদী অ্যামাজন। হাজার ৩০০ মাইল দীর্ঘ নদীতে কোনো সেতু নেই। বিশ্বের খরস্রোতা নদীগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে পদ্মা। নদীতে নির্মিত দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে সেতু উদ্বোধন করবেন। আর যানবাহন চলাচল শুরু হবে আগামীকাল সকাল ৬টা থেকে। উদ্বোধনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সকাল ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সুধী সমাবেশে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন তিনি। সেখানে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধন খাম সিলমোহর প্রকাশ করবেন। বেলা ১১টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থল থেকে টোল প্লাজার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন তিনি। টোল দিয়ে চলে যাবেন মাওয়া প্রান্তের ম্যুরাল চত্বরে। সেখানে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ম্যুরাল উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী চলে যাবেন জাজিরা প্রান্তে। সেখানে উদ্বোধনী ফলক দ্বিতীয় ম্যুরাল উন্মোচন করবেন তিনি। এরপর শিবচরের কাঁঠালবাড়িতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন।

এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির (এমবিইসি) কাছ থেকে পদ্মা সেতু বুঝে পেয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার বিকালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেতু বুঝে পাওয়ার

চিঠি গ্রহণ করেন প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে বর্ণিল আয়োজনে সাজানো হয়েছে পদ্মার দুই পাড়। দুই পাড়েই চলছে উৎসবের আয়োজন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক ব্যবহার করে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠানের ব্যানার, বিলবোর্ড, ফেস্টুন, পোস্টার দিয়ে ছেয়ে ফেলা হয়েছে মহাসড়ক। এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও শ্রীনগর, সিরাজদিখান, লৌহজং উপজেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট অলিগলি পেয়েছে নতুন সাজ। শিমুলিয়া ঘাটে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

মাওয়া প্রান্তের সুধী সমাবেশের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সম্পর্কে মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন বলেন, উদ্বোধনকে ঘিরে মুন্সীগঞ্জকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে চেকপোস্ট ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ জেলায় এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেতুসহ আশপাশের প্রতিটি স্থানে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি এলাকায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভাকে কেন্দ্র করে সভাস্থলের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সেখানে মঞ্চ তৈরি হয়েছে সেতুর আদলে। ১১টি পিলারের ওপর ১০টি স্প্যান বসিয়ে ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট প্রস্থের মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে জনসভাস্থল। জনসভার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করার জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী সব ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচিত হবে এবং নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণে আমাদের নেত্রীর যেসব চ্যালেঞ্জ ছিল সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পাওয়া বিজয় সম্পন্ন হবে। আমরা সে বিজয় উৎসবই পালন করতে যাচ্ছি। সেতু বাংলাদেশের আগামী সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দেবে। এটি দেশের অর্থনীতিতে এক প্রাণবন্ত গতি সঞ্চার করবে।

এদিকে গতকাল বিকালে জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে যে পরিমাণ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখছি তাতে বৃষ্টি না হলে আগত মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়াবে। এখানে নিরাপত্তার শঙ্কা নেই। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের কর্তব্য পালন করছেন। আমাদের দলীয় ভলান্টিয়ার টিমও কাজ করছে। প্রয়োজনে আমরা বিজিবি নিয়ে আসব। তাই মানুষের শঙ্কার কোনো কারণ নেই।

প্রমত্তা পদ্মায় সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের নভেম্বরে। প্রথমে নদীর গভীরে পাইলিং করা হয়। এরপর সেসব পাইলের ওপর গড়ে তোলা হয় পিয়ার ক্যাপ। পিয়ার ক্যাপের ওপর একে একে ৪১টি স্প্যান বসিয়ে পুরোপুরি দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। স্প্যানের ওপরে বসানো হয় রোডওয়ে স্ল্যাব, যার ওপর তৈরি হয়েছে চার লেনের সড়ক। পদ্মা সেতুর নিচে, স্প্যানের ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। এজন্য বসানো হয়েছে রেলওয়ে স্ল্যাব। তবে রেল লাইন এখনো বসানো হয়নি। পদ্মা সেতু পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী জুলাই থেকে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হতে পারে, যা শেষ করতে সময় লাগবে ছয় মাস। তবে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ শুরু করতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন