১১ বছর পর শ্রমিক-কর্মচারী ও স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি

পিপিপি পদ্ধতিতে ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিল চালুর উদ্যোগ

নুর উল্লাহ কায়সার, ফেনী

ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিল ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দীর্ঘ ১১ বছর বন্ধ থাকার পর সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব বা পিপিপি পদ্ধতিতে ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিল চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি মিলটি চালুর উদ্যোগ বাস্তবায়নে ফেনী আশপাশের এলাকার শিল্প উদ্যোক্তা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল করপোরেশন (বিটিএমসি) ওই কর্মশালায় শিগগিরই এটি চালুর জন্য শিল্প উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই বিষয়ে দরপত্র আহ্বানেরও ঘোষণা দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। এটি চালু হলে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ফেনীর রানীরহাট এলাকা আবার লোকারণ্য হয়ে উঠবে। এমন খবরে মিলটির সাবেক শ্রমিক-কর্মচারী স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।   

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯০৩ সালে ১১ একর জায়গার ওপর ফেনীর কাজীরবাগ বাজার রানীরহাট এলাকার মাঝামাঝি স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দোস্ত টেক্সটাইল মিল। ১৯৬৫ সালে সম্প্রসারণ করে ২৩ একর জায়গাজুড়ে বৃহৎ আকারে উৎপাদনে যায় মিলটি। তত্কালীন সময়ে এখানে এক-দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। শিফটিং ডিউটির কারণে অধিকাংশ শ্রমিকই আশপাশের এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। এতে করে মিলটির আশপাশে গড়ে ওঠে শত শত দোকানপাট নানা রকম ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সৃষ্টি হয় হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। মিলটি ঘিরে এলাকাটি ছিল কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর।

স্বাধীনতার পর দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলো লোকসান দিতে শুরু করলেও দোস্ত টেক্সটাইল মিলটি ছিল লাভজনক। ২০০০ সালের পর এটিও লোকসানের মুখে পড়তে শুরু করে। একপর্যায়ে বিভিন্ন মেয়াদে ঠিকাদারের মাধ্যমে মিলটি চালানো হয়। ওই সময়ে ঠিকাদাররা মিলে তুলা সরবরাহ করে উৎপাদিত সুতা বিক্রি করে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতেন। লোকসান শুরু হলে ২০০৬ সালে মিলটি একবার এবং ২০০৮ সালে আরো একবার বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্বল্প পরিসরে চুক্তিভিত্তিতে ২০১১ সালে ফের মিলটি চালু হলেও কিছুদিন পরই স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল কাদের বলেন, একসময় ফেনীর সবচেয়ে কর্মযজ্ঞ এলাকা ছিল ফেনীর রানীরহাট কাজীবাগ এলাকা। এখানে ছিল দেশের অন্যতম টেক্সটাইল মিল। মিলের সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিক তাদের স্বজন-পরিবারের সদস্যদের পদভারে পুরো এলাকা মুখরিত ছিল। একসময় এখানকার কারখানার সাইরেনের আওয়াজে মানুষের ঘুম ভাঙত। আশপাশে ছিল শত শত দোকানপাট। মিলের আশপাশে গড়ে উঠেছিল ভাড়াযোগ্য অনেক আবাসিক ভবন। কিন্তু এখন এখানে কিছুই নেই। সন্ধ্যার পর এলাকাটিতে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এখন আর এখানে কেউ আসে না। সাইরেনের আওয়াজও আর শোনা যায় না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিলসহ দেশের চারটি মিলকে আধুনিকায়ন করে পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিলের আধুনিকায়ন করতে খরচ হবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে বিটিএমসি দোস্ত টেক্সটাইল মিলসহ বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলগুলোকে যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করার বিষয়ে দেশী-বিদেশী স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। আলোচনায় ইতিবাচক সাড়া পেলেই দরপত্র আহ্বান করা হবে।

সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মিলটির ভেতরে থাকা কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কার্যক্রম না থাকায় কারখানার ভেতর এখন সন্ধ্যার পরই হয়ে যায় সুনসান। কয়েকজন শ্রমিক-কর্মচারী আবাসিক ভবনগুলোয় বসবাস করে আসছেন মানবেতরভাবে। তাদের কেউ রিকশা চালিয়ে, কেউ ফেরি করেই চালান সংসার। তার পরও তাদের আশা, কোনো একদিন কারখানাটি চালু হবে। আবার ফিরে আসবে তাদের সুখের দিন।

ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান জানান, ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিল চালু হলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। মিলটি দ্রুত চালু করার বিষয়ে আমাদের ভাবনা রয়েছে।

বিটিএমসির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাকির হোসেন ফেনীর কর্মশালায় বক্তব্যকালে জানিয়েছেন, উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলাশেষে তাদের সাড়ার ওপর নির্ভর করেই আমরা দরপত্র আহ্বান করব। ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিলসহ দেশের চারটি মিলকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চালুর জন্য আমরা পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি, শিগগিরই পিপিপিএ পদ্ধতিতে মিলগুলো চালুর বিষয়ে আমরা সফল হব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন