বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সুসম্পর্ক কাজে লাগিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য এগিয়ে নেয়া সহজ হবে। সে সঙ্গে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করবে। গতকাল প্রথমবারের মতো আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘বেস্ট অব ইন্ডিয়া এক্সপো- ২০২২’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। দ্য ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনসের (এফআইইও) আয়োজনে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির মিল দুই দেশের মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্কের সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরো জোরদার করতে বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করছে। উন্নয়নের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দ্রুতবর্ধনশীল দেশ। বর্তমানে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার ও ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। দুই দেশের অর্থনীতির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো জোরদার করতে ও পারস্পরিক সম্পৃক্ততা আরো দৃঢ় করতে বেস্ট অব ইন্ডিয়া এক্সপোর প্রস্তাব করা হয়েছিল।
বক্তারা আরো বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের। কভিড-মহামারী চলাকালে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশই একে অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। বেস্ট অব ইন্ডিয়া এক্সপো এ বন্ধুত্বকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ভারত-বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের জাতীয় সংগীতও একজনের লেখা। যদি আমরা আমাদের আন্তঃসম্পর্কের মাধ্যমে একসঙ্গে ব্যবসা করতে পারি, তাহলে দুই দেশের বিজনেস কমিউনিটি লাভবান হবে। আমাদের দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এটাই সঠিক সময়। এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। বিজনেস কমিউনিটিকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের উচিত, দুই দেশেই বিনিয়োগ করা। আমরা দিল্লিতেও এমন মেলার আয়োজন করতে পারি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ ধরনের সহযোগিতামূলক উদ্যোগ দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরো বেগবান করবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, এ এক্সপো ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে আরো সুসংগঠিত করবে এবং শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াবে। এটা মূলত একটা কমিটমেন্টের অংশ। ইন্ডিয়ার সেরা পণ্য বাংলাদেশে যেভাবে প্রদর্শনী হবে, তেমনিভাবে বাংলাদেশী পণ্যও ভারতে প্রদর্শন হবে। এর মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্যকে এগিয়ে নেয়া সহজ হবে।
প্রদর্শনীর আয়োজক সংস্থা এফআইইওর ভাইস প্রেসিডেন্ট খালিদ খান বলেন, এ আয়োজন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের নতুন সংযোজন। এ আয়োজন প্রথমবারের মতো হলেও সামনের বছরগুলোয় আয়োজনের ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন বলেন, প্রদর্শনীতে ১০ থেকে ১২টি ক্যাটাগরির বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। আমি আশা করব, এ এক্সপো দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে আরো শক্তিশালী করবে। রেল, স্থলপথ ও নৌপথের মাধ্যমে দেশের ব্যবসায়িক উন্নয়নে ভারত খুবই গুরুত্বপূর্ণ পার্টনার। করোনাকালেও ভারত বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
প্যাভিলিয়নগুলোয় হস্তশিল্প, তাঁত, তুলা, পাট, গৃহস্থালি ও টেকসই ভোক্তা সামগ্রী, প্লাস্টিক সামগ্রী, প্রকৌশল সামগ্রী, খাদ্য ও কৃষিপণ্য, ভবন নির্মাণ সামগ্রী প্রদর্শন করা হচ্ছে। এছাড়া সিরামিক, হোমওয়্যার, কিচেনওয়্যার, অ্যালুমিনিয়াম, রঙ ও কালি, কৃষি উপকরণ সংশ্লিষ্ট পণ্য খাতও প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে।
ভারতীয় হাইকমিশন, বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) পৃষ্ঠপোষকতায় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ‘সেমস গ্লোবাল ইউএসএ’। প্রদর্শনীটি ২৫ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।