কারখানা কার্যক্রমে শ্লথগতি

বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা আরো ঘনীভূত হচ্ছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

টোকিওতে অবস্থিত কাওয়াসাকির একটি উৎপাদন কারখানা ছবি: রয়টার্স

চলতি মাসে ধীর হয়েছে জাপানের কারখানা কার্যক্রম। সংকোচনের মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার রফতানি। চীনের কভিডজনিত বিধিনিষেধে সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় দেশের উৎপাদন খাতও ধীর হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এশিয়ার অন্য অর্থনীতিতেও নানামুখী প্রতিবন্ধকতার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অবস্থায় বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা আরো ঘনীভূত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, চলতি মাসে অস্ট্রেলিয়ার ম্যানুফ্যাকচারিং কার্যক্রম স্থিতিশীল রয়েছে। যদিও জুনে জাপানের কারখানা কার্যক্রম চার মাসের সর্বনিম্নে নেমেছে। পাশাপাশি ইউরোপীয় মার্কিন পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্সও (পিএমআই) নিম্নমুখী হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পরিসংখ্যানগুলো বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়ানোর কারণে আর্থিক বাজারগুলো অস্থিতিশীলতার মধ্যে রয়েছে। তাছাড়া ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় আগামী মাসগুলোয় ফেডারেল রিজার্ভ আরো আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলেছে।

মার্কিন ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ফিচ রেটিং জানিয়েছে, ২০২১ সালের শেষ থেকে বৈশ্বিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বস্তুগতভাবে আরো খারাপ হয়েছে। সংস্থাটি চলতি বছরের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে দশমিক শতাংশে নামিয়েছে। এর আগে গত মার্চেও দশমিক শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ফিচ রেটিং বলেছে, প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) শেষ দিক থেকে বিশ্বজুড়ে স্ট্যাগফ্লেশনের ঝুঁকি প্রকট হয়ে উঠেছে।

স্ট্যাগফ্লেশন হলো এমন একটি অর্থনৈতিক অবস্থা, যেখানে কোনো অর্থনীতি একই সঙ্গে উচ্চমূল্যস্ফীতি বেকারত্ব এবং নিম্ন প্রবৃদ্ধির চক্রে আটকা পড়ে। সত্তর আশির দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে স্ট্যাগফ্লেশন দেখা দিয়েছিল। জ্বালানি তেলের দাম বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং সহজ মুদ্রানীতি ১৯৮০ সালে ভোক্তা মূল্যসূচককে ১৪ দশমিক শতাংশে ঠেলে দিয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারকরা সুদের হার প্রায় ২০ শতাংশ বাড়িয়ে তুলেছিলেন। সে সময় গভীর মন্দায় পড়েছিল বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি।

মার্কিন বিনিয়োগ সংস্থা পিআইএমসিওসহ বড় প্রতিষ্ঠানগুলো মন্দার ঝুঁকি সম্পর্কে বারবার সতর্ক করে আসছে। কারণ উচ্চমূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মুদ্রানীতি কঠোর করে চলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নীতিনির্ধারকরা তাদের নিজ নিজ অর্থনীতিতে খাড়া মন্দা ঠেকাতে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর চেষ্টা করছেন।

মে মাসে মার্কিন খুচরা বিক্রি অপ্রত্যাশিতভাবে কমে গিয়েছে। পাশাপাশি দেশটিতে বিদ্যমান বাড়ির বিক্রি দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে। এটি উচ্চমূল্যস্ফীতি ক্রমবর্ধমান ঋণের খরচ চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাবের চিত্র তুলে ধরেছে। এদিকে এপ্রিলে ব্রিটিশ অর্থনীতির সংকোচন মন্দার আশঙ্কা আরো বাড়িয়ে তুলেছে। দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া নিয়ে বারবার সতর্ক করছে।

অন্যদিকে এশিয়ায় জুনের প্রথম ১০ দিনে দক্ষিণ কোরিয়ার রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। এটি অঞ্চলের রফতানিনির্ভর অর্থনীতিগুলোর ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরে। চীনে মে মাসে রফতানিকারকরা শক্তিশালী চাহিদার দেখা পেয়েছিল। কভিডজনিত বিধিনিষেধ সহজ হওয়ায় চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল। যদিও -সম্পর্কিত সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ ক্রমবর্ধমান কাঁচামাল ব্যয়ের কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি আরো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

গতকাল প্রকাশিত এইউ জিবুন ব্যাংক ফ্ল্যাশ জাপান উৎপাদন খাতের পিএমআই জুনে ৫২ দশমিক পয়েন্টে নেমেছে। মে মাসেও সূচক ৫৩ দশমিক পয়েন্টে ছিল। এটি গত ফেব্রুয়ারির পর সবচেয়ে ধীর প্রবৃদ্ধি। পিএমআই ৫০ পয়েন্টের নিচে সংকোচন এবং এর উপরে বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে। মহামারীর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের চিহ্ন হিসেবে অটো জায়ান্ট টয়োটা জুলাইয়ের বৈশ্বিক গাড়ি উৎপাদন পরিকল্পনা ৫০ হাজার ইউনিট কমিয়েছে। চিপসহ অন্য যন্ত্রাংশের ঘাটতির কারণে উৎপাদন কমাচ্ছে জাপানি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।

ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের জ্যেষ্ঠ জাপানি অর্থনীতিবিদ মার্সেল থিলিয়ান্ট বলেন, চীনে সাম্প্রতিক লকডাউন শিথিল হলেও সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা অব্যাহত রয়েছে। এজন্য গত মাসে দেশটির পণ্য সরবরাহ ধীরগতিতে প্রসারিত হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন