জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরও ফিরছে এ৩৮০

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসজনিত মহামারী শুরু হলে বন্ধ হয়ে যায় আকাশপথে যোগাযোগ। সে পরিস্থিতিতে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বসিয়ে রাখা হয় অনেকগুলো এ৩৮০ মডেলের এয়ারবাস। দুই বছর ধরে বিশালাকার  উড়োজাহাজগুলো বিভিন্ন অঞ্চলের রক্ষণাবেক্ষণাগারে বসে ছিল।

দীর্ঘ বিরতির পর পরিস্থিতি আবারো স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণবিষয়ক বিভিন্ন বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়েছে। খুলে দেয়া হয়েছে বিশ্বের বন্দরগুলো। অবস্থায় আবার নিজের জায়গায় ফিরতে চায় ইউরোপের ডাবল ডেকার উড়োজাহাজ এ৩৮০ এয়ারবাস। নতুন যে যাত্রী চাহিদা তৈরি হয়েছে তার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চায় প্রতিষ্ঠানটির নির্মাতারা।

এয়ারবাসের এ৩৮০ মডেলের বাহনগুলোর ইঞ্জিনসংখ্যা চারটি। এগুলো নতুন প্রজন্মের দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট বাহনের চেয়ে অনেক বেশি জ্বালানি তেল খরচ করে। তার পরও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, কান্তাস এয়ারওয়েজ, জাপানের এএনএ হোল্ডিংস এবং দক্ষিণ কোরিয়ার আশিয়ানা এয়ারলাইনস বড় আকারের জেট বহরে যুক্ত করতে চায়।

এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, যাত্রীরা বড় আকারের এই জেটগুলোয় ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। কোরিয়ান এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াল্টার চো বলেন, এয়ারবাসের এ৩৮০ উড়োজাহাজগুলো আকারে অনেক বড়, এগুলোয় বেশি পরিমাণে বিজনেস ক্লাস আসন থাকে। যাত্রীরা বাহনে যাত্রা পছন্দ করেন। বিশেষ করে উচ্চচাহিদাসম্পন্ন রুটগুলোয় উড়োজাহাজের বেশ চাহিদা রয়েছে। কোরিয়ান এয়ারও চলতি বছরের শেষ নাগাদ বহরে তিনটি এ৩৮০এস ফিরিয়ে আনতে চলেছে। সে অনুযায়ীই এখন পরিকল্পনা চলছে।

শুধু গ্রাহক চাহিদাই নয়, বোয়িংয়ের নতুন ৭৭৭এক্স মডেলের উড়োজাহাজ সরবরাহ পেতে দেরি হওয়ার কারণেও লুফথানসা এ৩৮০ ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। শিগগিরই বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছবে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও তাদের মাত্র ১৪ জন পাইলটের এ৩৮০ চালানোর অভিজ্ঞতা অনুমতি আছে বলে জানিয়েছেন লুফথানসার প্রধান নির্বাহী কারসটেন।

একুশ শতকের জন্য এক হাজারটি এ৩৮০ তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল এয়ারবাস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ ছোট দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট বাহনগুলো বিভিন্ন পরিষেবা কোম্পানির কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে মাত্র ২৪২টি এ৩৮০ তৈরি করেছিল এয়ারবাস।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মহামারীপূর্ব সময়ের সঙ্গে এ৩৮০-এর চাহিদা আর কখনই মিলবে না। যদিও ১০৬টি আবারো পরিষেবা খাতে ফিরছে। ২০২০ সালের এপ্রিলে যখন মহামারী শুরু হয় তখনকার চেয়ে তা মাত্র চারটি কম। এ৩৮০-এর চাহিদা কখনই আর আগের মতো হবে না। ফলে একপর্যায়ে এগুলোর ভবিষ্যৎ হবে স্ক্র্যাপ হিসেবে।

এরই মধ্যে এয়ার ফ্রান্স স্থায়ীভাবে এ৩৮০এস উড়োজাহাজটি মহামারী চলাকালে অবসরে পাঠিয়েছে। থাই এয়ারওয়েজ মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস তাদের বহরে থাকা এ৩৮০ বিক্রি করতে চায়, তবে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু প্রতিষ্ঠান উড়োজাহাজ স্ক্র্যাপ করতেও পাঠিয়ে দিয়েছে।

এ৩৮০-এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে চারটি ইঞ্জিন চলার জন্য খরচ হওয়া অতিরিক্ত জ্বালানি। বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিশাল বাহন পরিচালনা অত্যন্ত খরচসাধ্য। তবে এশিয়া-প্যাসিফিক এয়ারলাইনস অ্যাসোসিয়েশনের ডাইরেক্টর জেনারেল সুভাষ মেনন বলেন, যদি আপনি যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা বাড়াতে চান তাহলে বিশাল বাহনগুলো ফেরত আনার বিকল্প নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন