রয়টার্সের প্রতিবেদন

পরিবেশে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে দ্বিমুখী নীতি ইউনিলিভারের

বণিক বার্তা অনলাইন

সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ার কারণে বিশ্বে প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু প্লাস্টিকের এ যথেচ্ছ ব্যবহার পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি ও মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিবেশের ক্ষতি কমাতে প্রায় দুই বছর আগে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার নতুন করে আর প্লাস্টিক ব্যবহার না করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও প্রতিষ্ঠানটি তাদের এ ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেশে দেশে প্লাস্টিক স্যাশে ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে লবিংয়ের অভিযোগও পাওয়া গিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। প্লাস্টিক নিয়ে দ্বিমুখী নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থাটি বলছে, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করা একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

তথ্য বলছে, উন্নয়নশীল দেশে ডিটারজেন্ট, শ্যাম্পুসহ বিভিন্ন পণ্য ছোট ছোট প্যাকেটে (স্যাশে) করে বাজারে সরবরাহ করা হয়। এসব স্যাশের পুনর্ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব এবং এগুলো পচনশীল নয়। এসব প্লাস্টিকের প্যাকেট বিভিন্ন আবর্জনার স্তূপে জমে পানি প্রবাহে বাধাসহ বন্য প্রাণীদের ক্ষতি করছে। ইউনিলিভার নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের মোড়কীকরণে কারণে পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনা করে তিনটি এশিয়ান দেশে স্যাশে নির্মূল করার লক্ষ্যে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। 

রয়টার্স বলছে, প্রায় এক দশক আগে ভারত, ফিলিপাইন এবং শ্রীলংকায় স্যাশে নির্মূলে পাঁচটি প্রোগ্রাম চালু করেছিল সংস্থাটি। কিন্তু প্রোগ্রামগুলো আলোর মুখ দেখেনি। এসব প্রোগ্রামের মধ্যে কয়েকটি পাইলট পর্যায়েই সীমাবদ্ধ ছিল।

শ্রীলংকার এক জ্যেষ্ঠ পরিবেশ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার স্যাশে নির্মূলের ঘোষণা দিলেও দেশটির সরকারের দেয়া প্রস্তাবিত স্যাশে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার জন্য চাপ দিয়েছে। শ্রীলংকার পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব অনিল জাসিংগে অভিযোগ করে বলেন, ইউনিলিভার তাদের সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা করেছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কঠোর পদক্ষেপের কারণে ইউনিলিভার দ্রুত ছয় মিনি স্যাশে বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও এখনও প্রতিদিন লাখ লাখ বড় প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবেদনে রয়টার্স আরো বলছে, ভারত এবং ফিলিপাইনে প্রস্তাবিত স্যাশে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধেও কাজ করেছিল ইউনিলিভার। 

এ বিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে ইউনিলিভার একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে অভিযোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি লন্ডনভিত্তিক ইউনিলিভারের কর্মকর্তারা। তবে তারা বলছেন, শ্রীলংকায় আইন মেনে ব্যবসা করছে ইউনিলিভার। একজন মুখপাত্র বলেছেন, পণ্য রিফিল সিস্টেম, নতুন পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্যাকেজিং উপাদানসহ বিভিন্ন সম্ভাব্য সমাধান ব্যবহার করে বহুস্তরযুক্ত স্যাশেগুলোকে পর্যায়ক্রমে বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হবে।

বিবৃতিতে সংস্থাটি আরো জানায়, বহুস্তরযুক্ত প্লাস্টিকের প্যাকটে ব্যবহার বন্ধ করা একটি জটিল এবং কঠিন প্রক্রিয়া। খুব দ্রুত এটির কার্যকর সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। বছরে কি পরিমাণ প্লাস্টিকের প্যাকেট বা স্যাশে ব্যবহার করা হচ্ছে সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারে নি তারা। তবে ২০১২ সালে একটি প্রচারমূলক ভিডিওতে প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে তারা বছরে চার হাজার কোটি প্লাস্টিকের স্যাশে বিক্রি করে। সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, এখন পর্যন্ত পণ্য ব্যবহৃত প্লাস্টিকের মাত্র ৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে। কারণ হিসেবে সমীক্ষায় বলা হয়েছে বেশিরভাগ প্লাস্টিকের প্যাকেজিং শুধুমাত্র একবার ব্যবহার করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন