আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিধ্বস্ত ঘরের সামনে ক্ষতিগ্রস্ত আফগানরা। আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাকটিকাজুড়ে এখন ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলার ছাপ ছবি: এপি

আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে এক হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনায় আরো অন্তত দেড় হাজার মানুষ আহত হয়েছে। তবে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। খবর রয়টার্স।

গতকাল সকালে আফগানিস্তানের পাকটিকা প্রদেশে রিখটার স্কেলে দশমিক মাত্রার ভূমিকম্পন অনুভূত হয়। রয়টার্স বলছে, ২০০২ সালের পর এটিই দেশটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প। ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকা পাহাড়ি অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় সঠিক তথ্য পেতে সময় লাগছে। এছাড়া যখন ভূমিকম্পটি আঘাত হানে সেই সময় বেশির ভাগ মানুষ ঘুমিয়ে ছিল বলে হতাহতের পরিমাণ বেশি হয়েছে।

ইউএসজিএস জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খোশতের ৪৪ কিলোমিটার দূরে। সেখান থেকে প্রায় ৩১০ মাইল বা ৫০০ কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত ভূকম্পন টের পাওয়া গেছে। প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানও ভূমিকম্পে কেঁপেছে। ইউরোপিয়ান মেডিটারিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানায়, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ভারতের প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ ভূমিকম্প সীমার মধ্যে ছিল।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে অসংখ্য মানুষ। এলাকাটি পাহাড়ি হওয়ায় হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো হয়।

পাকটিকা প্রদেশের সংস্কৃতি তথ্য বিভাগের প্রধান মুহাম্মাদ আমিন হাজিফি জানান, ভূমিকম্পে প্রদেশের গেয়ান, জিরক, বারমাল নাকা জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির নিচে চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গণমাধ্যম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, অসংখ্য বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। হেলিকপ্টারে করে দুর্গত মানুষকে উদ্ধার করা হচ্ছে।

স্থানীয় এক সাংবাদিকের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, পাকটিকা প্রদেশের যে রাস্তা দিয়েই যান না কেন ভূমিকম্পের ভয়াবহতার চিহ্ন দেখতে পাবেন। সেখানকার আকাশ ভারি হয়ে আছে প্রিয়জনের মৃত্যুশোকে কাতর সাধারণ মানুষের কান্নায়। তাছাড়া দুর্গম এলাকা হওয়ায় উদ্ধারকারী দল পৌঁছতেও সময় লেগেছে। সেই কারণে ক্ষতির মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। শুরুতে আশপাশের শহরগুলো থেকে সাধারণ মানুষ এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে। এক কৃষক জানিয়েছেন, তিনি নিজেই ৪০টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। ঘটনার ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে স্থানীয় হাসপাতালের পক্ষে তা সামাল দেয়া সম্ভব ছিল না। তাছাড়া হাসপাতালটিও ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়েছে, সেখানকার কর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছেন।

এছাড়া ভূমিকম্পে মোবাইল ফোনের টাওয়ার ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে। যার কারণে দ্রুত খবর পৌঁছানোও সম্ভব হয়নি। যেহেতু সেলফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না তাই অনেক মানুষই তাদের আত্মীয়-পরিজনের খবর নিতে পারছে না।

ক্ষতিগ্রস্ত আফগানদের পাশে দাঁড়াতে সহায়তা সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তালেবান সরকারের মুখপাত্র বিলাল কারিমি। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের পরবর্তী ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা পাঠাতে হবে।

আফগানিস্তানে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি . রমিজ আলাকবারোভ জানিয়েছেন, এরই মধ্যে সহায়তা পাঠানো হয়েছে। আরো সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বিপুল ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সংঘর্ষের কারণে দেশটি এখনো ভূমিকম্প বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে পারেনি। এসব কাজে এখনো আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোর ওপরই নির্ভরশীল তারা। যদিও আফগানিস্তান প্রকৃতিগতভাবেই ভূকম্পনপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। গত এক দশকে বেশ কয়েকটি ভূমিকম্পে সাত হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে সবশেষ গত জানুয়ারিতে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে এক ভূমিকম্পে ২০ জনের মৃত্যু হয়। বিধ্বস্ত হয় শতাধিক ঘরবাড়ি।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদেও ভূকম্পন টের পেয়েছে বলে জানিয়েছে অনেক বাসিন্দা। পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তরের বরাতে স্থানীয় সংবাদপত্র ডন জানায়, ভূমিকম্পে পাঞ্জাব খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের কিছু অংশ কেঁপে উঠেছে। তবে সেখানে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন