সব রাজনৈতিক দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার আন্তরিক বলে জানিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সরকার ও নির্বাহী কর্তৃপক্ষের আবশ্যিক দায়িত্ব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গতকাল জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আরো গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে কিনা; থাকিলে, তা কী?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অধিকতর গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে সংসদকে জানান। তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ দলীয় কার্যক্রম নির্বিঘ্নে করার পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করে প্রতিষ্ঠানটি। দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন থাকবে এবং কেবল সংবিধান ও আইনের অধীন হবে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সরকার ও নির্বাহী কর্তৃপক্ষের আবশ্যিক দায়িত্ব।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অধিকতর গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে সরকারের নেয়া উল্লেখযোগ্য ১১ ধরনের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে সংবিধানের বিধান অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠন আইন করা হয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারি এটি জাতীয় সংসদে পাস হয়। সংসদ নেতা আরো বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন সংসদে উত্থাপিত হলে বিরোধী দলের প্রস্তাবিত ২২টি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়, যা নির্বাচন গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার প্রথম পদক্ষেপ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আধুনিক পদ্ধতির ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চালু করা হয়েছে।
আইন অনুসারে অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নতুন কমিশন গঠনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এবং প্রচলিত আইনের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব ধরনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বদ্ধপরিকর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮(৪) অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন এবং ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ধারা ৪ ও ৫ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। সে লক্ষ্যে নির্বাচনী কাজে নির্বাহী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়মিত সহায়তার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিয়োগ প্রদান করা হয়ে থাকে।
সংসদ নেতা বলেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর থেকে আচরণবিধি প্রতিপালন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পর্যাপ্তসংখ্যক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও রিটার্নিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড নিয়োগ করা হয়।