সনির কাছে ১০০ মেগাপিক্সেলের সেন্সর চায় অ্যাপল-গুগল

বণিক বার্তা ডেস্ক

সনির সিইও মনে করেন, সক্ষমতার দিক থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ডিএসএলআরকে ছাড়িয়ে যাবে স্মার্টফোন ক্যামেরা ছবি: টেক রাডার

গত কয়েক বছরে স্যামসাংয়ের বেশ কয়েকটি প্রিমিয়াম স্মার্টফোনে ১০৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। ২০২৩ সালে উন্মোচন হতে যাওয়া গ্যালাক্সি এস২৩ ফোনে আইসোসেল এইচপি১-এর ২০০ মেগাপিক্সেল সেন্সর ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি। সম্প্রতি ওই ইমেজ সেন্সর ব্যবহার করে একটি বিড়ালের দানবাকৃতির ছবি তুলেছে তারা। ইমেজ সেন্সরের দিক থেকে স্যামসাং যখন অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে তখন পিছিয়ে থাকতে চাইবে না অ্যাপল গুগলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট। সম্প্রতি তারা তাদের সেন্সর সরবরাহকারীদের ১০০ মেগাপিক্সেলের সেন্সর নিয়ে কাজ করতে অনুরোধ জানিয়েছে। খবর ফোনঅ্যারেনা।

অ্যাপল গুগল ইমেজ সেন্সরের জন্য মূলত সনির ওপর নির্ভর করছে। অ্যাপল গুগল ক্যামেরা হার্ডওয়্যারের চেয়ে সফটওয়্যারের দিকে জোর দিয়ে আসছিল। এজন্য অ্যাপলের সবচেয়ে দামি আইফোনেও ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু বাজার প্রবণতার দিকে তাকিয়ে সনির ১২. মেগাপিক্সেলের সেন্সরের স্থলে স্যামসাংয়ের ৫০ মেগাপিক্সেলের আইসোসেল জিএন১ সেন্সর ব্যবহার শুরু করেছে গুগল। এছাড়া অ্যাপল জানায়, তারা তাদের পরবর্তী প্রিমিয়াম ফোন আইফোন ১৪ প্রো প্রো ম্যাক্সে ৪৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ব্যবহার করবে।

এখন সেন্সর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সনি যখন ১০০ মেগাপিক্সেলের ইমেজ সেন্সর আনার ঘোষণা দিচ্ছে তখন জাপানি প্রতিষ্ঠানটির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে অ্যাপল গুগলের মতো গ্রাহক। ডিজিটাল চ্যাট স্টেশনের বরাতে জানা গেছে, সনির আইএমএক্স৮ সিরিজের অংশ হতে পারে ১০০ মেগাপিক্সেলের ওই সেন্সর।

এছাড়া সনির পাইপলাইনে আইএমএক্স৯ সিরিজের সেন্সর রয়েছে বলে জানা গেছে। যা স্যামসাংয়ের ৫০ মেগাপিক্সেলের আইসোসেল জিএন২ সেন্সরের সঙ্গে টেক্কা দেবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ধারণা করা হচ্ছে, শাওমি ১২ আল্ট্রা ফোনে সনির আইএমএক্স৯৮৯ সেন্সর ব্যবহার হতে পারে।

সম্প্রতি সনির সিইও এক পূর্বাভাসে জানান, গুণগত মানের দিক থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ডিএসএলআরকে ছাড়িয়ে যাবে অনেক স্মার্টফোন ক্যামেরা। ইমেজ সেন্সর নির্মাতা কোম্পানিগুলোর উচ্চ রেজল্যুশনের ক্যামেরায় মনোযোগ বৃদ্ধিতে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সনির সিইও তেরুশি শিমিজুর আরো বলেন, ২০১৯ সালে বলা হয়েছিল, স্মার্টফোনের ব্যাটারি, ডিসপ্লে ক্যামেরায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। ব্যাটারি ডিসপ্লেতে সে রকম কোনো পরিবর্তন না এলেও ক্যামেরার উন্নয়নে এখনো আশা রয়েছে।

ভবিষ্যতে কোনো এক সময়ে স্থিরচিত্রের গুণগত মানের দিক থেকে স্মার্টফোন ডিএসএলআর ক্যামেরার জায়গা দখলে নেয়ার বিষয়টিকে নির্দেশ করেছেন শিমিজু। অর্থাৎ ছবির রেজল্যুশনের দিক থেকে ইন্টারচেঞ্জেবল লেন্স ক্যামেরা (আইএলসি) একসময় দখল হারাবে।

চ্যানেল নিউজের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্যামসাং, সনি থেকে শুরু করে একাধিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ক্যামেরা প্রযুক্তির উন্নয়নে বড় বড় পদক্ষেপ এরই মধ্যে নিয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠান তাদের স্মার্টফোনে থাকা ক্যামেরার সেন্সর ছবির মানোন্নয়নে বড় বিনিয়োগ করেছে। সনি এরই মধ্যে দুই লেয়ারের ট্রানজিস্টর পিক্সেল প্রযুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছে। এটি ডিভাইসের বিভিন্ন কার্যক্রমে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি কম আলোয় ছবি তোলার ক্ষেত্রে নয়েজ বা দূষণের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করবে।

প্রযুক্তির অগ্রগতি হওয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইসসহ  যেকোনো ক্ষেত্রে উচ্চক্ষমতার ক্যামেরা তৈরির বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেছে। ক্রমবর্ধমান কোয়ান্টাম স্যাচুরেশন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে আগামী দুই বছরে স্মার্টফোনের ইমেজ সেন্সর আরো বড় এবং উন্নত হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইমেজ সেন্সর প্রযুক্তির বিষয়ে সনি বরাবরই গর্ব প্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বর্তমানে বাজারে যেসব স্মার্টফোন রয়েছে, সেগুলোয় ব্যবহূত ৪২ শতাংশ ইমেজ প্রযুক্তিই তাদের উদ্ভাবিত। স্মার্টফোনের ক্যামেরা প্রযুক্তির উন্নয়ন হলেও মানুষ এখনো ডিএসএলআর ক্যামেরা ব্যবহার করে। খাতে পরিচিত দুটি প্রতিষ্ঠান হলো ক্যানন নাইকন। ফটোগ্রাফির জন্য ভালো মানের ক্যামেরার চাহিদা থাকলেও সেগুলো স্মার্টফোনের মতো সুবিধাজনক নয়।

চ্যানেল নিউজ জানায়, ক্যামেরা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ডিএসএলআরের প্রযুক্তিকে লিগেসি ফরম্যাট বলে স্বীকার করেছে। সেই সঙ্গে এটি যে ভবিষ্যৎ নয় তাও প্রতিষ্ঠান দুটি জানিয়েছে। বিষয়টি মাথায়  রেখে একটি বিষয় অনুমান করা যায়, স্মার্টফোনের ক্যামেরার তুলনায় ডিএসএলআর শিগগিরই হারিয়ে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন