সর্বোচ্চ মূল্যসীমা নির্ধারণের সম্ভাবনা

রুশ জ্বালানি খাতের আয় কমাতে সচেষ্ট পশ্চিমারা

বণিক বার্তা ডেস্ক

রাশিয়ার অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়ার নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে দেশটিকে বাধ্য করাই এসব প্রচেষ্টার মূল উদ্দেশ্য। এবার পশ্চিমা দেশগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে রুশ জ্বালানি খাতের আয়। খাত থেকে রাশিয়ার আয় যাতে কমে যায়, সেজন্য দেশটি থেকে আমদানীকৃত জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ মূল্যসীমা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে পশ্চিমারা। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে কানাডাসহ মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি জেনেট ইয়েলেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা রুশ জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। তারা দেশটি থেকে ৯০ শতাংশ জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে একমত। পরিস্থিতিতে আমরা সর্বোচ্চ মূল্যসীমা বেঁধে দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা করছি। এর মাধ্যমে রুশ জ্বালানি খাতে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আরো তীব্র শক্তিশালী হবে। মূল্যসীমা নির্ধারণের ফলে রাশিয়ান জ্বালানি তেলের দাম কমে আসবে। খাত থেকে পুতিনের আয়ও নেমে আসবে তলানিতে।

কানাডার অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের সঙ্গে আলাপকালে ইয়েলেন বলেন, মূল্যসীমা নির্ধারণ শুধু রুশ জ্বালানি খাতের আয় কমাতেই সহায়তা করবে না, বরং নিম্ন আয় উন্নয়নশীল যেসব দেশ খাদ্যপণ্য জ্বালানির ঊর্ধ্বমুখী ব্যয়ের কারণে বিপাকে তাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

তিনি আরো বলেন, সর্বোচ্চ মূল্যসীমা নির্ধারণ অত্যন্ত কার্যকরী একটি পদক্ষেপ। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি রুশ জ্বালানি তেল জাহাজীকরণে ইন্স্যুরেন্স কিংবা অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়ার মতো ম্যাকানিজমের মাধ্যমে পদক্ষেপ সফলভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব।

তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন এবং অন্য দেশগুলো এরই মধ্যে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে একমত হলেও অঞ্চলটি এখনো জ্বালানি তেল আমদানিতে রাশিয়ার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

আগামী সপ্তাহে জার্মানিতে জি৭ নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠেয় সামিটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মূল্যসীমা নির্ধারণের কোনো পরিকল্পনা পেশ করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ইয়েলেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা আমাদের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে খুব সক্রিয়ভাবে কাজ করছি।

অন্যদিকে কানাডার অর্থমন্ত্রী ফ্রিল্যান্ড বলেন, কানাডা মনে করছে, রাশিয়ার জ্বালানি খাতের আয় কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে এটি (সর্বোচ্চ মূল্যসীমা নির্ধারণ) খুবই ভালো একটি আইডিয়া। তবে আইডিয়া বাস্তবায়ন করা ইউরোপিয়ান দেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জিং বলেও মত দিয়েছেন তিনি।

এদিকে পশ্চিমা দেশগুলো নিষেধাজ্ঞার কারণে জ্বালানি তেল উত্তোলন কমিয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখছে না রুশ সরকার। রাশিয়া উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক স্থানীয় বাণিজ্যিক টিভি চ্যানেল আরবিসিকে সম্প্রতি জানান, ইউরোপিয়ান নিষেধাজ্ঞার কারণে জ্বালানি তেল উত্তোলন কমাবে না রাশিয়া।

অন্যদিকে দেশটির উপ-অর্থমন্ত্রী অ্যালেক্সি সাজানভ বলেন, রাশিয়ার উত্তোলন কমিয়ে দিলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাসের দেয়া তথ্য বলছে, গত মাসে রাশিয়া দৈনিক ৯২ লাখ ৭৩ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করে। এপ্রিলে দৈনিক উত্তোলনের পরিমাণ ছিল ৯১ লাখ ৫৯ হাজার ব্যারেল। সে হিসাবে উত্তোলন বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে বিকল্প বাজার তৈরি করছে রাশিয়ার জ্বালানি তেল খাত। এক্ষেত্রে এশিয়ার দেশগুলোকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ভারত চীনে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল রফতানি করেছে রাশিয়া। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর রাশিয়ার মোট জ্বালানি তেল উত্তোলন দাঁড়াবে ৫০ কোটি টনে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন