বাজেট
প্রণয়নে যারা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা খুবই বুদ্ধিমান। কী করে বুঝলাম? বুঝলাম বাজেটের সব বিষয় বাদ দিয়ে এখন আলোচনা নিবদ্ধ দুটি বিষয়ের ওপর: মধ্যবিত্ত ও পাচারকৃত টাকা। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত কী পেল এবং কালো টাকা পাচারকারীরা কী পেল—এ দুটি বিষয়ই আলোচনায় এখন প্রাধান্য পাচ্ছে। বলা বাহুল্য মধ্যবিত্তের ভাগে পড়েছে একটা বড় শূন্য (জিরো) বরং উল্টো তার করভার বেড়েছে/বাড়বে ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে। অর্থমন্ত্রীর ভাষণ থেকে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে করমুক্ত আয়ের সীমা ছিল মাত্র ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। আজ ১২ বছর পর এ সীমা মাত্র ৩ লাখ টাকা। প্রতি বছর এর মধ্যে কম করে হলেও ৫-৬ শতাংশ করে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। মধ্যবিত্তের বিভিন্ন ধরনের আয় কমেছে। সঞ্চয়পত্রের সুদ, মেয়াদি আমানতের সুদ এর মধ্যে অন্যতম। তারপর দুই বছর গেছে কভিড-১৯-এর অভিঘাত, যার যাতনা তাদের সহ্য করতে হয়েছে বেশি। তারা ট্রাক সেলের লাইনে দাঁড়াননি। কম মূল্যের চালও পাননি। নগদ টাকার প্রণোদনাও পাননি। অথচ করোনাকালেও একশ্রেণীর ‘দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী’ জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছেন। স্বাস্থ্য খাতে হয়েছে অধিকতর ব্যয়। কভিড-১৯-উত্তর বাংলাদেশে শুরু হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের সর্বনাশা অভিঘাত। প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে আশা করা হয়েছিল গরিবের সমঝদার অর্থমন্ত্রী মধ্যবিত্ত-করদাতাদের জন্য কিছু একটা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সামনে সহানুভূতিশীলভাবে অবস্থাটা তুলে ধরলে তিনি ‘না’ করতেন না। মনে আছে, এক মন্ত্রী সঞ্চয়পত্র তুলেই দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পরিবার সঞ্চয়পত্র রাখেন, তার ক্রয়সীমা বাড়ান, সুদও বাড়ান। আমার ধারণা, আমলা-কামলারা মধ্যবিত্তের দুঃখ-কষ্টের কথা প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেননি। অথচ উল্টো তাকে বলা হলো, দেশে চার কোটি মধ্যবিত্ত আছে, অথচ তারা কর দেন না, কর ফাঁকি দেন। অতএব ধরো তাদের এবং সে অবস্থাই হয়েছে। দেখা যাক, মধ্যবিত্তের কতজনকে জোর করে করদাতা বানানো হয়।
বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা। আমরা প্রায়ই প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে অনেক কিছুর তুলনা করি। জিজ্ঞেস করি, ওই দেশে করমুক্ত আয়সীমা কত? মূল্যস্ফীতির এই দিনে তিনি কি একটু ছাড়ও দিতে পারতেন না? দিলেন তো না-ই বরং করের বোঝা বাড়ালেন।
আগে মোট আয়ের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করলে রেয়াত পাওয়া যেত। সেটি কমিয়ে এখন করা হয়েছে ২০ শতাংশ। ফার্স্ট ক্লাস! কিন্তু বিপরীতে যারা উচ্চআয়ধারী করদাতা, তারা আগে ৫ লাখ টাকা ভাতা পর্যন্ত কর মুক্তি পেতেন। এখন পাবেন ১০ লাখ টাকা। এর অর্থ কী? কার পক্ষে বাজেট? অধিকন্তু আরো বড় প্রশ্ন আছে। পর পর তিনবার করপোরেট ট্যাক্স তিনি ক্রমাগত কমিয়েছেন। এবারো তাই করেছেন। যুক্তি বিনিয়োগ বাড়ানো। কিন্তু সবাই জানে, বিনিয়োগের অবস্থা কী? বেসরকারি বিনিয়োগের অবস্থা কী? বেসরকারি বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। উদাহরণ? এ বছরের ৩১ ফেব্রুয়ারির একটি খবরের শিরোনাম: ‘সুযোগ
না দিলে টাকা হুন্ডি হবে’। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের
বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ না দিলে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ চলে যাবে।’ আমরা যদি বন্ধ রাখি তাহলে পিছিয়ে থাকব। অনেকেই সৃজনশীল ধারণা নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগের চেষ্টা করছেন। এটা অন্যায় কিছু না।
যদি অনুমতি না দিই, তাহলে হুন্ডির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে অর্থ চলে যাবে। তার চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়া ভালো। এই হচ্ছে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগের অবস্থা। সবাই বিদেশে বিনিয়োগ করতে চান। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ১৭ কোম্পানিকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এতে কত ডলার গেছে বিদেশে? এর প্রভাব বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কতটুকু, তার বিচার কে করবে?
এদিকে পাচারকৃত টাকার ইস্যুতে দেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ী-শিল্পপতি থেকে শুরু করে কাউকেই এ পদক্ষেপ সমর্থন করতে দেখা যাচ্ছে না। অথচ অর্থমন্ত্রী মাত্র ৭ শতাংশ করে বিদেশে পাচার করা টাকা দেশে আনার জন্য বাজেটে প্রস্তাব দিয়েছেন। যদি ৭ শতাংশ হারে ট্যাক্স দিয়ে পাচার করা টাকা দেশে আনা যায়, তাহলে মধ্যবিত্তের ট্যাক্সের রেট একটু কমানো যাবে না কেন? কেন করমুক্ত আয় বাড়ানো যাবে না? পাচার করা টাকার দুই দোষ। একে তো এগুলো কালো টাকা। দ্বিতীয় পাচার করা আরেকটি অপরাধ। দুই অপরাধে দুষ্ট অপরাধকে এভাবে আশকারা দিলে নিয়মিত করদাতাদের একটু রেয়াত দিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের এত আপত্তি কোথায়? আবার এর সঙ্গে অনেক প্রশ্নও রয়েছে। গভর্নর বলেছেন, বিদেশে বাংলাদেশীদের কোনো কালো টাকা নেই, যা আছে তা তাদের রোজগারের টাকা এবং আমদানি-রফতানি সেটলমেন্টের জন্য অপেক্ষারত টাকা। শুধু তাই নয়, আজ অর্থমন্ত্রী যা-ই বলেন না কেন, তিনিও ২০২১ সালের ২৭ নভেম্বর সংসদে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আমি
তো পাচার করি না। আমি বিশ্বাস করি, আপনারাও তা করেন না। সুতরাং কে পাচার করে, তা আমি বলব কী করে, যদি আপনারা না দেন।’ এই প্রশ্ন করে তিনি সবাইকে বলেছিলেন, পাচারকারীদের তালিকা দিতে। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বরে বলেন, রাজনীতিবিদরা নন, বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তারাই বেশি। গোপনে কানাডার টরন্টোয় অবস্থিত বাংলাদেশীদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হয়েছে। যে তথ্য পেয়েছি তাতে অবাক হয়েছি। সংখ্যার দিক থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাড়ির সংখ্যা সেখানে বেশি আছে এবং এদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকে। আমার কাছে ২৮টি এমন কেস এসেছে, তার মধ্যে চারজন মাত্র রাজনীতিবিদ। আর কিছু আছেন তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী। তাহলে দেখা যাচ্ছে অর্থমন্ত্রী না জানলে কী হবে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানেন ঠিকই। তালিকায় সরকারি কর্মকর্তা আছেন, রাজনীতিবিদ আছেন এবং পোশাক ব্যবসায়ীও আছেন। এর থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, কারা বর্তমান সিদ্ধান্তের পেছনে? কিন্তু অর্থমন্ত্রী এ পথে পা বাড়ালেন কেন? বিশেষ করে যখন হাইকোর্টের কড়া নির্দেশ আছে পাচারকারীদের তালিকা জমা দেয়ার। ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর একটি খবরের কাগজের শিরোনাম: ‘অর্থ
পাচারকারীরা দেশ-জাতির শত্রু, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট’। তারা পূর্ণাঙ্গ তালিকা চেয়েছেন। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, সরকারি কর্মচারীসহ যারাই অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত তাদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানাসহ তালিকা দাখিল করতে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সব সংস্থাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
‘এরা (পাচারকারীরা) দেশ ও জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে বলে আমরা মনে করি।’
এখন অবস্থাটা কী দাঁড়ায়? অর্থমন্ত্রী জানেন না, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানেন না; জানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর হাইকোর্ট তালিকা চেয়েছেন ২০২০ সালের নভেম্বরে। এখন ২০২২ সালের জুন। তালিকা কি দেয়া হয়েছে? মনে হয় না। বিপরীতে পাচারকারীদের টাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ দিয়েছেন। ৭ শতাংশ মাত্র ট্যাক্স। অর্থের উৎস সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন করবে না। এখন আমরা কোনটা বিচারে নেব— হাইকোর্টকে, না সংসদকে। বড়ই বিপদে আমরা। পাচারকারীদের ট্যাক্স কম, কোনো প্রশ্ন নেই। অথচ ১ হাজার টাকা আয় ঘোষণা দিলে কর্মকর্তারা ডকুমেন্ট চান। প্রধানমন্ত্রী, একমাত্র আপনিই এর বিচার করতে পারেন।
মধ্যবিত্তের দুঃখ-কষ্ট শুধু করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি বলে নয়, তার কষ্ট বিনিয়োগসীমা কমানোর কারণেও। অধিকন্তু রয়েছে আরো খড়্গ, যা নেমে আসবে আগামী অর্থবছরে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মোট ৩৮টি সরকারি সেবার ক্ষেত্রে করের রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ৩৮টির আলোচনা এখানে নয়। কয়েকটির কথা উল্লেখ করা যায়। যেমন ৫ লাখ টাকা ব্যাংকঋণ নেয়া, ট্রেড লাইসেন্স নেয়া, ১০ লাখ টাকার জমি রেজিস্ট্রি, ক্রেডিট কার্ড, বাণিজ্যিক-আবাসিক গ্যাস-বিদ্যুৎ লাইন পাওয়া, ব্যাংক হিসাব খোলা, ১৬ হাজার টাকার বেশি বেতনভোগীদের বেতন তোলা, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব সেবা লাগে মধ্যবিত্তের। তারা রিটার্ন দেন। কেউ সময়মতো দেন, কেউ পরে দেন। এসব অজুহাতে এ ধরনের সেবা বন্ধ রাখা হবে। যে ৩৮ সেবার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলো পেতে এমনিতেই বহু সমস্যা। এর মধ্যে রিটার্ন জমা দেয়ার রসিদ জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করার নির্দেশটি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। ব্যাংক হিসাব খোলার হিসাব বোধগম্য নয়। ১০ টাকার হিসাব আছে। ১ হাজার, ২ হাজার টাকা দিয়ে হিসাব খোলার বিষয় আছে। এসব ক্ষেত্রেও কি রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক হবে? জানি না, কারা এ তালিকা করেছেন। তারা এ তালিকা পুনর্বিবেচনা করে দেখতে পারেন। ব্যবসা/দোকানে রিটার্ন জমার রসিদ না টানালে ৫-২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কে এসব মনিটর করবে? একমাত্র উপরওয়ালাই জানেন।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। বাজেট প্রস্তাব পাস হলে কিছু পণ্যের দাম বাড়বে, কিছু পণ্যের দাম কমবে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে সরকারের ঘোষণা মতে, পণ্যের দাম বাড়েও না, কমেও না। দেখা যায়, যার দাম কমার কথা, তার দামও বাড়ে। আবার যার দাম বাড়ার কথা, তারা দাম বাড়ে বেশি হারে। এতে সরকারের কোনো উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। যেভাবেই হোক না কেন, বাড়া-কমার তালিকাটা চেক করলে বোঝা যাবে, এসব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মধ্যবিত্তের পণ্য। মাস্ক-স্যানিটাইজারের মূল্যবৃদ্ধি কোন যুক্তিতে, যখন করোনা আবার বাড়তির দিকে। ল্যাপটপ, সেলফোন, ফ্রিজ, কম্পিউটার, প্রিন্টার, দই-চিজ কারা খায়/কেনে? এসবের ওপর করারোপ করা কি যুক্তিসংগত? জানি না। সরকার বলে ঠিকই আছে নতুবা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে বলা দরকার, সরকারি রাজস্বের সিংহভাগ আসে আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর থেকে। ভ্যাট একটা ভোগ কর। ধনী-গরিব সবাই একই হারে ভ্যাট দেয়। অতএব, বলাই যায় এর বোঝা পড়বে সাধারণ মানুষ ও মধ্যবিত্তের ওপর। এদিকে আয়করের বোঝাও শেষ পর্যন্ত চাকরিজীবী ও স্থির আয়ের লোকের ওপর বর্তাবে। কারণ, সব করই উৎসে কেটে নেয়া হয়। ফাঁকির কোনো সুযোগ নেই। আবার বড়রা কর দেয় না, তারা করমুক্তি, কর অবকাশ, করছাড় পায়। এবারও তাই হয়েছে। অর্থমন্ত্রী দেশীয় শিল্প রক্ষার কথা বলে তাদের ওপর থেকে হরেদরে কর কমিয়েছেন। তাহলে ব্যবসায়ীদের ঝুঁকি নেয়ার বিষয়টি কী হবে? সরকারি ব্যবসার বিরুদ্ধে আমরা বলেছি, তারা অদক্ষ বলে। তাদের বোঝা সাধারণ মানুষকে বহন করতে হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, বড় বড় ব্যবসায়ীর ব্যবসার বোঝাও সাধারণ মানুষের ঘাড়ে বর্তাচ্ছে, যে কারণে সাবেক এক গভর্নর বলেছেন, এ বাজেট ‘বড় ব্যবসায়ীবান্ধব’ বাজেট। ছোট ছোট ব্যবসায়ী সুযোগ-সুবিধা বেশি পেলে তা সহ্য করা যেত। কিন্তু তা কখনো হচ্ছে না। কী ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে, কী ভর্তুকির ক্ষেত্রে, কী ঋণ পুনঃতফসিল করার ক্ষেত্রে—কোথাও তাদের কোনো অগ্রাধিকার নেই। তাহলে সাধারণ মানুষ/মধ্যবিত্ত কেন করের বোঝা এভাবে বহন করবে?
পরিশেষে দু-একটি কথা বলতে চাই বাজেটের টাকা কোথায়, কীভাবে খরচ হবে সে বিষয়ের ওপর। এক্ষেত্রেও ফাঁকির কোনো অভাব নেই। প্রথম ফাঁকি সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দ। টাকার অংকে বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু এ দুর্দিনে বাড়ার কথা জিডিপির অনুপাতে। না, তা হয়নি। তাছাড়া পেনশনের টাকা, বৃত্তির টাকা, সঞ্চয়পত্রে সুদের টাকা কীভাবে সামাজিক সুরক্ষা খাতে খরচ হয়? এসব বোঝা যায় না বরং বলি সত্য কথা বলে রাখা ভালো। সর্বোপরি এসব কর্মসূচিতে এমন সব লোক আছে যারা কোনোদিনই এ সুরক্ষার অধীনে আসতে পারে না। এটা পরিকল্পনা কমিশনের কথা, আমার কথা নয়। অথচ বছরের পর বছর এটা চলছে। এ অপচয় বন্ধ হওয়া দরকার।
পরিচালন বাজেটে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এ টাকার মধ্যে বেতন-ভাতা খাতে যাবে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ টাকা। সুদ বাবদ ব্যয় হবে মোট পরিচালন বাজেটের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ টাকা। ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে যাবে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ টাকা। তিনটি মিলিয়ে হয় ৫৪ দশমিক ১ শতাংশ টাকা। আর তো কিছু লাগে না। দেখা যাবে আমাদের পরিচালন বাজেটের খরচের পর হাতে কোনো টাকাই থাকে না। কিসের জন্য টাকা? বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য খরচের পর উন্নয়নের জন্য কিছু টাকা। এ উদ্বৃত্তটি ঘটছে না দীর্ঘদিন ধরে। ফলে উন্নয়নের টাকা (এডিপি) আসে ঋণ থেকে—ঋণ দেশী এবং বিদেশী। এ বছরের কথাই ধরা যাক। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ঘাটতি হিসাব করা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব কম, খরচ বেশি। অথচ এডিপির
আকার হচ্ছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ পুরো এডিপির টাকাই আসবে ঋণ থেকে। এটি বরাবরের ঘটনা। এ পর্যন্ত কেউ এ প্রবণতায় ছেদ টানতে পারেনি। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে তা হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। ধনী, অতিধনী, লোভী শ্রেণী যতদিন ট্যাক্স না দেবে, ততদিন এ অবস্থা চলতে থাকবে।
ড.
আর এম
দেবনাথ:
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক
