চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের জন্য নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ সুযোগ রহিত করা হয়েছে। পুঁজিবাজারের স্বার্থে আগামী বছর পর্যন্ত এ সুযোগ বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। গতকাল এক্সচেঞ্জটির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এ দাবি জানানো হয়।
বাজেট প্রতিক্রিয়া উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুকসহ এক্সচেঞ্জটির পর্ষদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, সরকারের অতীতের অর্জন ও উদ্ভূত পরিস্থিতির সমন্বয়ে ‘কভিড অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’
শিরোনামে এবারের বাজেট প্রণীত হয়েছে। সংগত কারণেই এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি খাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা খাতসহ আরো বেশকিছু খাতকে। বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাতের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রয়াসে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট কর হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাত ২৩ শতাংশ। উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছার লক্ষ্যে সরকার এ অনুপাত বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যা খুবই ইতিবাচক বলে আমরা মনে করছি।
ঘোষিত বাজেটে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট বেশকিছু বিষয় পুনর্বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসিফ ইব্রাহীম বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো বাজারবান্ধব ছিল। এবার সিএসইর পক্ষ থেকে বিদ্যমান বিধানগুলো যেন অপরিবর্তিত থাকে সে দাবি করা হয়েছিল। আমরা আনন্দিত যে প্রায় সব বিধান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের লেনদেনের ওপর বিদ্যমান উৎসে কর দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছিল, যা বাজেটে বিবেচিত হয়নি। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে পরিচালন খাতে ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। পাশাপাশি তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্রোকারেজ সেবার কমিশন অত্যন্ত কমে যাওয়ার কারণে এ কর্তনকৃত অর্থ অধিকাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর করদায় হিসেবে বেশি হয়। তাই উৎসে করহার হ্রাসে আমাদের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এছাড়া ব্রোকারদের বিও অ্যাকাউন্ট মেইনটেনেন্স ফি থেকে প্রাপ্ত আয় ১০০ কোটি টাকা থেকে বিবেচ্য করকে উল্লেখিত দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ উৎসে কর সংযুক্ত হয়েছে বলে বিবেচনার অনুরোধ করছি।
বিভিন্ন পর্যায়ে করপোরেট কর কমানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সিএসইর বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করহারের ব্যবধান খুবই কম। তাই ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হয় না। কারণ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে নানা ধরনের কমপ্লায়েন্স পরিপালন করতে হয়। এতে কোম্পানিগুলোকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়। ফলে করহার কমানোর প্রকৃত কোনো সুবিধা ভোগ করা যায় না। তাই পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তিকে উৎসাহিত করতে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করের ব্যবধান সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা যেতে পারে।
সিএসইকে বর্তমানে ৩০ শতাংশ হারে করপোরেট কর দিতে হয়। এক্সচেঞ্জটির পক্ষ থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এটি শূন্য হারে নির্ধারণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রির কথা বিভিন্ন সময়ে বলা হলেও ঘোষিত বাজেটে এর কোনো পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয়নি। অর্থায়নের উৎস হিসেবে শেয়ার অফ লোড করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এবং এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো করছাড় দেয়া যেতে পারে।
প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের জন্য নির্দিষ্ট হারে কর পরিশোধ করে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা রহিত করা হয়েছে। এ সুবিধা আগামী বছর পর্যন্ত বহাল রাখার জন্য আমরা বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। এতে পুঁজিবাজার যেমন শক্তিশালী হবে তেমনি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, পাশাপাশি অর্থ পাচারও কমবে বলে আমরা আশা করছি।
সিএসইর পক্ষ থেকে তালিকাভুক্ত এসএমই কোম্পানিগুলোর জন্য প্রথম তিন বছর শূন্য হারে এবং পরবর্তী সময়ে ১৫ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল, যা বিবেচনা করা হয়নি। পুঁজিবাজারে এসএমই বোর্ডের নিয়ম অনুসারে তালিকাভুক্ত হলে অধিক সংখ্যক কোম্পানি প্রাইভেট থেকে পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত হবে এবং একটি মানসম্মত করপোরেট কাঠামো ও রিপোর্টিংয়ে অভ্যস্ত হবে, যা থেকে সরকারের প্রত্যক্ষ করের পাশাপাশি পরোক্ষ করও বাড়বে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ বাবদ আয় থেকে কেটে রাখা করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করা, মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে করমুক্ত লভ্যাংশের বিদ্যমান সীমা ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা নির্ধারণ, মিউচুয়াল ফান্ড থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশকে পুরোপুরি আয়করমুক্ত রাখারও দাবি জানিয়েছে সিএসই।