ঝুঁকিপূর্ণ ও ভারী শিল্প অধ্যুষিত চট্টগ্রাম

দগ্ধ রোগীর উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থাই গড়ে ওঠেনি

সুজিত সাহা ও দেবব্রত রায়, চট্টগ্রাম ব্যুরো

দেশের প্রধান বন্দর বাণিজ্যিক কেন্দ্র চট্টগ্রাম। স্বাধীনতার আগে থেকেই নানামুখী ভারী শিল্পের বিকাশ ঘটে এখানে। রফতানিমুখী পোশাক কারখানার পাশাপাশি এখানে রয়েছে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, শিপ বিল্ডিং, ইস্পাত কারখানার মতো শিল্প। কিন্তু এসব খাতের পাশাপাশি অঞ্চলের চিকিৎসা ব্যবস্থায় তেমন উন্নয়ন হয়নি। ফলে কোনো শিল্প-কারখানায় বা শিল্পকেন্দ্রিক দুুর্ঘটনা ঘটলে যথাসময়ে যথাযথ চিকিৎসা পাওয়া যায় না। রোগীর অবস্থা গুরুতর হলেই তাকে পাঠিয়ে দিতে হয় রাজধানীতে।

শুধু চট্টগ্রাম শহরেই রয়েছে চারটি বিসিক শিল্পনগরী, দুটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, তিনটি ভারী শিল্প এলাকা (নাসিরাবাদ, মোহরা কালুরঘাট) এছাড়া এক হাজারের বেশি গার্মেন্ট শিল্প-কারখানা, অর্ধশতাধিক ইস্পাত পণ্যের ভারী কারখানা, সিমেন্ট কারখানা। চট্টগ্রাম আশপাশের এলাকাগুলোয়ও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কারখানা। চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে সাতটি সরকারি পাটকল, একাধিক বেসরকারি কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন কারখানা, রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি পরিশোধনকারী কারখানা, অন্তত সাতটি বৃহৎ ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানা। সরকারি-বেসরকারি এলপিজি প্লান্টসহ বেশ কয়েকটি কেমিক্যাল উৎপাদনের কারখানা রয়েছে চট্টগ্রামে। এসব ভারী কারখানা অন্যান্য শিল্পের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও চট্টগ্রামে রয়েছে ২৬ শয্যাবিশিষ্ট একটি বার্ন ইউনিট। 

ইউনিটও স্থাপিত হয় ২০০৬ সালে কেটিএস গার্মেন্টস কারখানায় আগুনে ৬৫ জন দগ্ধ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। সেই সময়ই চট্টগ্রামে পোড়া রোগীদের জন্য বিশেষায়িত একটি হাসপাতাল নির্মাণের দাবি ওঠে। এরপর ২০১২ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বল্প পরিসরে বার্ন ইউনিটটি চালু করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগেও সেই ইউনিটের শয্যা সংখ্যা বাড়েনি বা আধুনিকায়ন হয়নি। ফলে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে মাত্র চারজন চিকিৎসক নিয়ে পরিচালিত ইউনিট রীতিমতো হিমশিম খায়।

বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার চৌধুরী কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, চট্টগ্রামের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় ১০০ শয্যার একটি পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে। মূলত স্থান জটিলতার কারণে এটি আটকে রয়েছে। চীনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের প্রকল্পের জন্য চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ-সংলগ্ন এলাকায় জমি নির্বাচন করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে।

শনিবার সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোয় ভয়াবহ বিস্ফোরণ অগ্নিকাণ্ডের পর গত দুদিন চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত ১৬০ জন। এর মধ্যে রোববার পর্যন্ত ইউনিটে ভর্তি ছিলেন ৯৬ জন। পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হলে গতকাল রোগী ভর্তি ছিলেন ৯১ জন।

বার্ন ইউনিট সূত্র জানিয়েছে, ২৬ শয্যার ইউনিটে বিএম কনটেইনার ডিপোর ঘটনায় আহত ১৩ জন চিকিৎসাধীন। আগেই অনেকগুলো শয্যা রোগীতে পূর্ণ ছিল। শনিবারের দুর্ঘটনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আগের কম ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের শয্যা থেকে মেঝেতে নামিয়ে গুরুতর আহতদের শয্যার ব্যবস্থা করা হয়। বাকিদের পাশের গাইনি প্রসূতি বিভাগের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে বার্ন ইউনিটের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। এজন্য ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের নিয়মিত রোগীদের হাসপাতালের বারান্দায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া চক্ষু বিভাগ, অর্থোপেডিক বিভাগেও সীতাকুণ্ডের আগুনে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

শয্যা সংকটের পাশাপাশি বার্ন ইউনিটের সবচেয়ে বড় সমস্যা আইসিইউ না থাকা। চিকিৎসকরা বলছেন, সংকটাপন্ন রোগীদের আইসিইউ প্রয়োজন হলে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এমনকি রোগীর অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সেক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না।

বর্তমান বার্ন ইউনিটের সংকট বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের শয্যা সংখ্যা কম হলেও অগ্নিদুর্ঘটনায় রোগীর সংখ্যা বাড়লে অন্যান্য বিভাগের সহায়তায় সংকট মোকাবেলা করা হয়। সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার পরও কয়েকটি বিভাগে রোগী ভর্তি করা হয়েছে বার্ন ইউনিটের তত্ত্বাবধানে। এজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের সব ধরনের সহযোগিতা রয়েছে। স্বল্প লোকবল সক্ষমতা দিয়ে সাধ্যমতো রোগীদের জন্য কাজ করছেন বলেও জানান চিকিৎসক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন