জরিপের ফল প্রকাশ

ঢাকার গণপরিবহনে হয়রানির শিকার ৬৩ শতাংশ নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার গণপরিবহনে চলাচলের পথে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন শতকরা ৬৩ শতাংশ নারী, তরুণী কিশোরী। এদের মধ্যে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন ৪৭ শতাংশ। এসব ভুক্তভোগীর অর্ধেকই পরবর্তী সময়ে চরম মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। গতকাল প্রকাশিত এক জরিপের ফলাফলে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ঢাকা শহরে গণপরিবহনে হয়রানি: কিশোরী এবং তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব শীর্ষক জরিপে রাজধানীর বাস, ট্রেন, লেগুনা, রাইডশেয়ারিংকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌন হয়রানির পাশাপাশি ১৫ শতাংশ বুলিং, ১৫ শতাংশ সামাজিক বৈষম্য, ১৫ শতাংশ লিঙ্গবৈষম্য শতাংশ শারীরিক গঠন নিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। যাত্রী ওঠানো-নামানোর সময় চালকের সহকারীদের নেমে দাঁড়ানোর কথা থাকলেও তারা বাসের দরজায় অবস্থান করে অযাচিতভাবে স্পর্শ করে বলে অভিযোগ করেছেন প্রায় ৬১ শতাংশ নারী। ছয় মাসে অন্তত তিনবার ধরনের স্পর্শের মুখোমুখি হচ্ছেন ২৫ শতাংশ নারী।

আঁচল ফাউন্ডেশন পরিচালিত জরিপে ১৩ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৮০৫ জন কিশোরী, তরুণী নারী জরিপে অংশ নেন। এসব অংশগ্রহণকারী রাজধানীর আজিমপুর, মিরপুর, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকার স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কর্মজীবী নারী গৃহবধূ। এর মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৬ শতাংশ। জরিপ শুরুর সময়ের ছয় মাস আগ পর্যন্ত হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন এমন নারীদের তথ্য যুক্ত করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত অনলাইন সরাসরি তাদের সাক্ষাত্কার নিয়েছে জরিপ পরিচালনাকারীরা।

জরিপের তথ্যে দেখা গেছে, যৌন হয়রানির মধ্যে রয়েছে গণপরিবহনে ওঠানামার সময় চালকের সহকারীর অযাচিত স্পর্শ, বাসে জায়গা থাকার পরও যাত্রীদের গা ঘেঁষে দাঁড়ানো, বাজেভাবে স্পর্শ করা, ধাক্কা দেয়া বাজে মন্তব্য। যৌন নিপীড়নকারী ব্যক্তিদের মধ্যে যাত্রীর সংখ্যাই বেশি। গণপরিবহনের চালক চালকের সহকারীর হাতেও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন অনেকে। নিপীড়নকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা বেশি। জরিপে অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগ নারী জটিলতা এড়ানোর জন্য এর প্রতিবাদ করেননি।

হয়রানি প্রতিরোধে ১০ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে আঁচল ফাউন্ডেশন। যার মধ্যে পরিবহনে আসনের বেশি যাত্রী না তোলা, গণপরিবহনের ভেতর ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন, গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো, নারীদের জন্য আলাদা পরিবহনের ব্যবস্থা করা, বাসের চালক, তত্ত্বাবধায়ক সহকারীর পরিচয় উল্লেখ করে নেমপ্লেট বাধ্যতামূলক করা, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম নেয়া।

জরিপ প্রকাশের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন করেন আঁচল ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য ফারজানা আক্তার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক মো. ইসমাইল হোসাইন, আইনজীবী শাইখ মাহদি প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন