সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইটিএফ চালু করতে চায় ডিএসই

আগ্রহী লংকাবাংলা, শান্তা ও গ্রিন ডেল্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের পুঁজিবাজারে বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) চালু করতে চাইছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এরই মধ্যে উদ্যোক্তা হিসেবে লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট গ্রিন ডেল্টা ড্রাগন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড ইটিএফে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। পাশাপাশি বছরের মধ্যে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডের (এটিবি) কার্যক্রম শুরু করতে চায় ডিএসই। গতকাল এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভূঁইয়া, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) এম সাইফুর রহমান মজুমদার, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) জিয়াউল করিম, জনসংযোগ প্রকাশনা বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান, পণ্য বাজার উন্নয়ন বিভাগের প্রধান সাঈদ মাহমুদ জুবায়ের সিনিয়র ব্যবস্থাপক সৈয়দ ফয়সাল আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

ডিএসইর এমডি তারিক আমিন ভূঁইয়া সংবাদ সম্মেলনে জানান, দেশের পুঁজিবাজারে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইটিএফ চালু হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড, ডেট সিকিউরিটিজ, ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের কোম্পানি অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ লেনদেনের জন্য এটিবি প্লাটফর্মও বছরের মধ্যে চালু হবে। ইটিএফ থেকে নির্দিষ্ট সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে। নিবন্ধিত সম্পদ ব্যবস্থাপকরা ইটিএফ পরিচালনা করবেন। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের দিকটি দেখবে ট্রাস্টি। ইটিএফের মাধ্যমে সংগৃহীত তহবিলের মধ্যে ১০ শতাংশ উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করবে। আর সম্পদ ব্যবস্থাপক বিনিয়োগ করবে শতাংশ। বাকি অর্থ প্রাইভেট প্লেসমেন্ট পাবলিক অফারের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। প্রথমে ডিএস-৩০ সূচকে থাকা কোম্পানিগুলোকে নিয়ে ইটিএফ গঠিত হবে। সূচকটি সমন্বয়ের সময় যেসব কোম্পানির শেয়ার সূচক থেকে বেরিয়ে যাবে ইটিএফের সম্পদ ব্যবস্থাপক সেসব শেয়ার বিক্রি করে দেবেন। অন্যদিকে সূচকে যেসব কোম্পানির শেয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে সেগুলো বাজার থেকে কিনে নেবেন। ডিএস-৩০ সূচকে থাকা কোম্পানিগুলোর ফ্রি ফ্লোট বাজার মূলধনের ভর অনুসারে ইটিএফ থেকে আনুপাতিক হারে বিনিয়োগ করা হবে। শুরুতে ডিএস-৩০ সূচকের কোম্পানিগুলোকে নিয়ে ইটিএফ গঠন করা হলেও পরবর্তী সময়ে শরিয়াহ সূচকে থাকা কোম্পানি, ওষুধ খাতের কোম্পানি কিংবা অন্য কোনো খাতের কোম্পানি নিয়ে ইটিএফ গঠন করা হতে পারে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় ইটিএফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি।

ডিএসইর সিওও এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, বিশ্বজুড়েই ইটিএফ একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। এটি মেয়াদি বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের সমন্বিত রূপ। আমাদের এখানে বৈশ্বিক চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইটিএফ পরিচালনা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, সম্প্রতি লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট গ্রিন ডেল্টা ড্রাগন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড ইটিএফে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স উদ্যোক্তা লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে ১০০ কোটি টাকার একটি ইটিএফ গঠন করবে। এরই মধ্যে লংকাবাংলার পক্ষ থেকে বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে প্রস্তাব দেয়ার পাশাপাশি বেশকিছু বিষয়ে ছাড় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন ইটিএফ বিধিমালা ২০১৬-এর কিছু ধারার বাধ্যবাধকতা পরিপালন থেকে অব্যাহতি দিয়ে ইটিএফ চালুর অনুমোদন দিয়েছে। ইটিএফ চালুর বিষয়ে লংকাবাংলার পক্ষ থেকে আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে এবং দেশের পুঁজিবাজারে প্রথম ইটিএফ চালু করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি উদ্যোক্তা হিসেবে ৫০ কোটি গ্রিন ডেল্টা ড্রাগন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে ইটিএফে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে শান্তা গ্রুপ উদ্যোক্তা হিসেবে শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে একটি ইটিএফ গঠন করবে।

ইটিএফ বিধিমালা ২০১৬-এর বিধি () অনুসারে, ইটিএফ গঠনের সময় এর ন্যূনতম তহবিলের আকার কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা হতে হবে। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তার ১০ শতাংশ, সম্পদ ব্যবস্থাপকের শতাংশ বাকি ৮৮ শতাংশ অর্থ প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে। অর্থাৎ উদ্যোক্তা, সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রাইভেট প্লেসমেন্ট মিলিয়ে ইটিএফের আকার ৫০ কোটি টাকা হতে হবে। অন্যদিকে পাবলিক অফারের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে ইটিএফের আকার ৫০ কোটি টাকার বেশি হতে হবে।

এটিবি প্লাটফর্মের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডিএসইর পক্ষ থেকে বিএসইসিতে এটিবি-সংক্রান্ত খসড়া প্রবিধান জমা দেয়া হয়েছে। কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে বর্তমানে কিছু ধারা সংশোধন করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্লাটফর্মে দেশের ৭৬টি বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড, ১৮টি ইকুইটি সিকিউরিটিজ, ১৫টি ডেট সিকিউরিটিজ তালিকাভুক্তির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন