পণ্যবাজার ডলারের পর এবার পুঁজিবাজারেও স্নায়ুচাপ বাড়ছে

বদরুল আলম ও মেহেদী হাসান রাহাত

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে গত বছরের অক্টোবরেই দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। ভোজ্যতেলের বাজারের উত্তাপ এখনো চলছে। সরবরাহ সংকটের শঙ্কায় দাম বাড়ছে গম লবণের। আমদানি ব্যয় রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। যদিও এখন তা কিছুটা কমে এসেছে। পণ্যবাজার ডলারের পাশাপাশি এখন দেশের পুঁজিবাজারকে ঘিরে স্নায়ুচাপ তৈরি হয়েছে। টানা আটদিন ধরে বড় দরপতন হচ্ছে পুঁজিবাজারে। সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগও অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি তিন বাজারের সংকট কাটাতে পুরোপুরি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।

কভিডের অভিঘাত কাটিয়ে পুনরুদ্ধার কার্যক্রম চাঙ্গা হওয়ার পর থেকেই বৈশ্বিক পণ্যবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা দিয়েছে। ভোজ্যতেলের বাজারে ঊর্ধ্বমুখিতাকে আরো জোরালো করে তুলেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বিশ্ববাজারে কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চল থেকে সূর্যমুখী তেলসহ যাবতীয় ভোজ্যতেল সরবরাহ এখন বন্ধ। গত ২৮ এপ্রিল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েল সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইন্দোনেশিয়া। যদিও সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। দেশের বাজারে গত বছরের অক্টোবরে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৫৩ টাকা। সে সময় ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে টাকা বাড়িয়ে প্রতি লিটার ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর বছরের ফেব্রুয়ারিতে সয়াবিন তেলের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে লিটারপ্রতি ১৬৮ টাকা করা হয়। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা কমার পাশাপাশি রমজানের কারণে বর্ধিত দাম আর কার্যকর করা হয়নি। এর মধ্যেই রোজার ঈদের আগে আমদানিতে সংকট না থাকলেও বাজার থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যায় সয়াবিন তেল। এমন পরিস্থিতিতে মে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকায় নির্ধারণ করা হয়, যা এখনো বলবৎ রয়েছে।

ভোজ্যতেলের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে গম লবণের দামেও। চলতি মাসের মাঝামাঝি ভারত আকস্মিকভাবে গম রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিলে সরবরাহ সংকটের শঙ্কায় অস্থিরতা আরো বেড়ে যায়। এতে পণ্যটির দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে শুরু করেছে। ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ অন্যতম বৃহৎ বাজার নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে গমের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার লবণ উৎপাদন কম হচ্ছে। ফলে বাজারে আগেই সরবরাহ সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম বস্তাপ্রতি (৭৫ কেজি) ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

বৈশ্বিক গমের বাজারের ২৫ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করে রাশিয়া ইউক্রেন। কিন্তু দেশ দুটির মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর ভারত থেকে গম আমদানি বাড়িয়েছিল বাংলাদেশসহ অনেক দেশ। কিন্তু দাবদাহে উৎপাদন নিয়ে আশঙ্কার কারণে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হঠাৎ করেই রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে দেশটি। এতে ঊর্ধ্বমুখী থাকা পণ্যটির দাম দেশে আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে শুরু করেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারের অস্থিরতার মূল কারণ বৈশ্বিক পরিস্থিতি। যেখানে সব পণ্যদ্রব্যের দামই বেড়েছে। এর প্রভাবে ডলারের দাম যেমন বেড়েছে, আমদানি মূল্যও তেমনি বেড়েছে। আমদানিনির্ভর হওয়ার কারণে সবকিছু সরকারেরও নিয়ন্ত্রণে নেই। আবার এক্ষেত্রে সুযোগ নিচ্ছেন কোনো কোনো ব্যবসায়ী। ভোজ্যতেলের বাজারে এর প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। এদিকে প্রতি ১৫ দিনে দাম পর্যালোচনা করে সমন্বয়ের কথা থাকলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মাস ১০ দিনেও তা করেনি। গত ২০ মার্চ ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করা হয় লিটারপ্রতি ১৬৮ টাকা। তখন দাম ছিল হাজার ২০০ ডলারের ওপরে। সে সময়ই এলসি হচ্ছিল হাজার ৯৫০ ডলারে। আর মে যে দাম নির্ধারণ করা হলো তখন বিশ্ববাজারে দাম ছিল হাজার ৭০০ ডলার। ২০ মার্চ যে দাম নির্ধারণ করা হয় সেটি ছিল ফেব্রুয়ারির দর। মিল মালিকদের বেশি দামে আমদানি করে কম দামে বিক্রি করার কথা না। ফলে তারা পণ্য সরবরাহের গতি কমিয়ে দিয়েছেন।

এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বণিক বার্তাকে বলেন, ব্যাংকগুলোরও ব্যর্থতা আছে। তারা সাড়ে ৮৭ টাকায় এলসি খুলছেন না। বলা হচ্ছে কার্ব মার্কেট থেকে ডলার কিনে নিয়ে আসতে, যা তারা বলতে পারেন না। ব্যাংকে ডলার নেই অজুহাতে তারা এলসি খুলতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি ডলার না দেয় তাহলে ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের কীভাবে দেবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতাই প্রকাশ পাচ্ছে। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা কার্ব মার্কেট থেকে ১০০ টাকার ওপরে ডলার কিনছেন। ফলে আমদানি পণ্যের দাম আরো বেশি বাড়ার শঙ্কা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, বাইরে যা ডলার আছে সেটা খরচ হোক, রিজার্ভ ঠিক থাক। কিন্তু পরিস্থিতিতে ডলারের অনানুষ্ঠানিক প্রবাহ বৃদ্ধির ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে।

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার হঠাৎ করেই দেশের খুচরা বাজারে ডলারের দাম সেঞ্চুরি পার করে। ওইদিন দিনভর প্রতি ডলার বেচাকেনা হয় ১০২ টাকায়। সন্ধ্যার পর মানি এক্সচেঞ্জগুলো ডলারের দাম ১০৪ টাকাও হাঁকতে থাকে। যদিও এর আগের দিন সোমবার দেশের খুচরা বাজারে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল সর্বোচ্চ ৯৬ টাকা। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে একদিনের ব্যবধানে ডলারপ্রতি - টাকা বেড়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। অবশ্য বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি ডলারের দাম কিছুটা কমে ৯৭-৯৯ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক খাতে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৯৪-৯৬ টাকা। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত প্রতি ডলারের দর নির্ধারিত রয়েছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায়। খুচরা বাজারে ডলার কেনাবেচায় এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি। ক্রেতাদের কাছ থেকে যে যেভাবে পারছে, মূল্য আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই ২১-মার্চ ২২) হাজার ১৫২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। রেকর্ড আমদানির এলসি দায় পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক। এতে ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ফলে দেশের বাজারে প্রতিটি শক্তিশালী বৈদেশিক মুদ্রারই দাম বেড়েছে। টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে প্রায় প্রতিদিনই বাজারে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এরই মধ্যে রিজার্ভ থেকে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর পরও ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতিতে নতুন ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। দেশীয় আন্তর্জাতিকদুই পরিস্থিতিই এখানে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে। গত এক বছরে বৈশ্বিকভাবে ভোগ্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে, যার প্রতিফলন আমদানীকৃত পণ্য ব্যয়ের ওপরও রয়েছে। আবার দেশে উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়েছে; বেড়ে গিয়েছে পরিবহন উৎপাদন ব্যয়।

সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল বণিক বার্তাকে বলেন, খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদনশীলতা কমেছে, ব্যবস্থাপনাও সঠিকভাবে করা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট। সব মিলিয়ে মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখনই আমদানির মাধ্যমে মজুদ করার প্রয়োজন রয়েছে। চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে ব্যক্তি খাতের মাধ্যমে আমদানির উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশকে চাল, গম, দুধের মতো খাদ্যপণ্যসহ কাঁচামাল আমদানি করতেই হবে। কাজেই বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে কিছু সময় হয়তো চলবে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী রেমিট্যান্স না এলে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে ডলারের চাহিদা বাড়বেই। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

ডলারের বিনিময় হারের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, তিন-চার বছর ধরে ডলারের বিনিময় মূল্য অতিমূল্যায়িত, এমন ধারণা প্রচলিত ছিল। সময় প্রতিযোগী দেশগুলো নিজেদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে। সুযোগ থাকলেও মূল্যস্ফীতির কথা ভেবে দেশে নীতিনির্ধারকরা তা করেননি। এখন একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে, বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে, বেড়েছে চলতি হিসাবের ঘাটতি। সামগ্রিকভাবে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। এখন আরো কিছুটা অবমূল্যায়নের বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংক বিবেচনায় নিতে পারে। চলতি বছর প্রয়োজন অনুযায়ী সাড়ে বিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এটা যখনই বন্ধ হয়েছে তখন বাজারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে একটা দুষ্টচক্রের জন্ম দিয়েছে।

পরিস্থিতি আরো সংকটপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিনিময় হারের বাজারে অস্থিরতা কমানো প্রয়োজন। কারণ এর প্রভাব নানা দিকে পড়ছে। মূল্যস্ফীতি আমদানি ব্যয় কমানোর একটা বড় উপায় হলো এক্সচেঞ্জ রেট মার্কেটকে স্থিতিশীল করা। বাজারের অস্থিরতা পুঁজিবাজারেও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলছে। আমদানি স্তরে দাম বাড়ছে, কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে দামের চাপ এক্সচেঞ্জ রেটের চাপ। এর সঙ্গে আমদানি স্তর থেকে ভোক্তা স্তরে আসতে গিয়ে নানা ধরনের চাপ। সার্বিক পরিস্থিতির অন্যতম কারণ সুশাসনের অভাব। বাংলাদেশের এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজমেন্ট, আমদানি শুল্কহার প্রয়োজনমাফিক কমানো এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব। পুঁজিবাজারেও এটির ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

গত বছরের অক্টোবরেই ধীরে ধীরে নিম্নমুখী হতে শুরু করে পুঁজিবাজার। তবে এর মধ্যে বছরের জানুয়ারিতে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। যুদ্ধের আতঙ্কে পুঁজিবাজারের দরপতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন শেয়ারদর কমার নিম্নসীমা শতাংশে বেঁধে দেয়। অবশ্য পরবর্তী সময়ে এটি কিছুটা বাড়িয়ে শতাংশ করা হয়েছে। সর্বশেষ মে থেকে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিনই সূচকে বড় পতন হচ্ছে। গত আট কার্যদিবসে ৫৫৫ পয়েন্ট হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স। পুঁজিবাজারের নিম্নমুখিতা প্রশমিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কাজে আসছে না। সর্বশেষ গতকাল মার্জিন ঋণের অনুপাত বাড়িয়ে ১ঃ১ করা হয়েছে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য ঘূর্ণ্যমান তহবিলের মেয়াদ আকার বাড়ানোরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের পণ্যবাজার, মুদ্রাবাজার পুঁজিবাজারের সংকট কোনো একক কারণে হয়নি। অভ্যন্তরীণ বাহ্যিক বিভিন্ন বিষয়ের সমন্বিত প্রভাব রয়েছে এক্ষেত্রে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলংকার সংকট, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো এখানে কাজ করেছে। যদিও খুচরা বাজারে দু-একদিন ডলারের দামে অস্থিরতার কারণে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব পড়ার কথা না। তবে এসব কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, যা পুঁজিবাজারেও অস্থিরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।

পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। লোকসান আরো বাড়ার শঙ্কায় পোর্টফোলিওতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য বলছে, বছরের ২৭ এপ্রিল শেয়ারশূন্য বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের সংখ্যা ছিল লাখ ৫৩ হাজার ১৮৪। গতকাল সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে লাখ ৯৪ হাজার ৩৪০। অর্থাৎ সময়ের মধ্যে ৪১ হাজার ১৫৬টি বিও হিসাবে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।

বিষয়ে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, বৈশ্বিক বাজারে পণ্য জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে দেশে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এতে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার বিক্রি করে টাকা উঠিয়ে নিচ্ছে। এতে তারল্য সংকুচিত হচ্ছে। পণ্য জাহাজীকরণের খরচও অনেক বেড়েছে। কারণে উৎপাদনমুখী শিল্পের ব্যয়ও বেড়েছে। কারণে কোম্পানিগুলোর মুনাফা মার্জিন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ধরনের বিষয়গুলো বিনিয়োগকারীদের স্নায়ুচাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং বাজারকেও প্রভাবিত করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন