প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমলেও এখন আবার ভাইরাসজনিত বিরল রোগ মাঙ্কিপক্স নিয়ে ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের অন্তত ১০টি দেশে এ বিরল রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সব বিমান ও স্থলবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে মাঙ্কিপক্সের রোগী শনাক্ত হয়েছে। মাঙ্কিপক্স নতুন কোনো রোগ না হলেও এটিকে পশ্চিম আফ্রিকা বা মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোয় এনডেমিক হিসেবে ধরা হয়। আগে শুধু পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় ভ্রমণকারী বা সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে শনাক্ত হয়েছে এ রোগ। সম্প্রতি ইউরোপ ও আমেরিকায় বসবাসকারী বেশকিছু মানুষের মধ্যে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে, যাদের আফ্রিকার ওইসব দেশ ভ্রমণের ইতিহাস নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সম্প্রতি মাঙ্কিপক্সের নিশ্চিত কেস আছে এমন দেশগুলো ভ্রমণ করেছেন অথবা এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন অথবা সন্দেহজনক মাঙ্কিপক্স রোগী হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন, এমন রোগীদের সন্দেহজনক রোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সন্দেহজনক ও লক্ষণযুক্ত রোগীকে কাছের হাসপাতালে বা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) তথ্য জানাতে হবে।
নাজমুল ইসলাম বণিক বার্তাকে জানান, প্রতিটি স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সতর্কতা জারি করেছে। বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সন্দেহভাজন কেউ এলে যেন তাকে চিহ্নিত করা যায় ও দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
ওই চিঠি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সিলেটের সিভিল সার্জন ও আন্তর্জাতিক বন্দর রয়েছে এমন জেলার সিভিল সার্জনদের পাঠানো হয়েছে। এতে মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোয় আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ওপর সজাগ দৃষ্টি ও হেলথ স্ক্রিনিং জোরদার করতে বলা হয়েছে।
ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও সুইডেন এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় এ পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের রোগী পাওয়ার কথা জানা গেছে। প্রথম বানরের দেহে শনাক্ত হওয়া রোগটি এর আগে আফ্রিকার বাইরে দেখা যায়নি। এদিকে মাঙ্কিপক্স নিয়ে জরুরি বৈঠক করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, মাথাব্যথা, হাড়ের জোড়া, মাংসপেশিতে ব্যথা ও অবসাদ। জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা হাত ও পায়ের পাতাসহ দেহের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই গুটির জন্য রোগীর দেহে চুলকানি হয়। পরে গুটি থেকে ক্ষত দেখা দেয়। জলবসন্তের মতোই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও দেহে সেই ক্ষতচিহ্ন রয়ে যায়। রোগ দেখা দেয়ার ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। সংক্রমিত রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে এ ভাইরাস ছড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের ক্ষত থেকে ও নাক, মুখ, চোখের ভেতর দিয়ে এ ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে।