ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের প্রথম সভায় প্রধানমন্ত্রী

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগাতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের উন্নয়ন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে বঙ্গোপসাগরে থাকা বিশাল মৎস্য খনিজ সম্পদ কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ডেল্টা প্ল্যানের সঙ্গে আমরা যে বিশাল সমুদ্ররাশি পেয়েছি, সম্পদ আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা ব্লু-ইকোনমি ঘোষণা দিয়েছি। অর্থাৎ সুনীল অর্থনীতি, সমুদ্রসম্পদকে আমাদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো। তবে কিছু কাজ খুব সীমিত আকারে শুরু হয়েছে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের প্রথম সভায় দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সভায় উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক; খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার; পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন; ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী; মৎস্য প্রাণিসম্পদমন্ত্রী রেজাউল করিম; প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা . তৌফিক--ইলাহী চৌধুরী; নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী; পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক; পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী . শামসুল আলম; প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রসম্পদ নিয়ে আমরা কতটুকু কী করতে পারি সে বিষয়ে একটা পরিকল্পনা থাকা উচিত। সেখানে তেল-গ্যাস উত্তোলন অর্থাৎ সামুদ্রিক যে সম্পদ রয়েছে, যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে, খাদ্যনিরাপত্তায় কাজে লাগতে পারে। এছাড়া এখানে রয়েছে বিশাল মৎস্যভাণ্ডার। সম্পদ আমরা হেলায় হারাতে পারি না।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে বড় গুরুত্ব হলো যে আদিকাল থেকে এখান দিয়ে সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। দুই পাশে দুটো মহাসাগর। একটা মহাসাগর থেকে আরেকটায় যেতে বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়েই চলাচলটা হয়। সেদিক থেকে এটার গুরুত্ব অনেক বেশি। কাজেই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ কীভাবে আমাদের অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে পারি, সেটাও চিন্তা করতে হবে।

সময় বঙ্গোপসাগরকে দূষণমুক্ত রাখতে নির্দেশনা দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, এখন দূষণ সব দেশেই। সাউথ সিতে এমন অবস্থা যে সেখানে পানি পাওয়া যায় না, শুধু তেলের ফেনা। কাজেই আমাদের বঙ্গোপসাগরটা যেন সে রকম দূষণ না হয়, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। এটা যেমন দূষণমুক্ত রাখতে হবে, পাশাপাশি সম্পদ আমরা কীভাবে কাজে লাগাব সেটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে।

দেশের নদীগুলোকে দূষণ থেকে রক্ষার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা মাথায় রাখতে হবে আমাদের নদীমাতৃক বাংলাদেশ। একটা মানুষের শরীরে যেমন শিরা-উপশিরা, ঠিক নদীগুলোও আমাদের দেশের জন্য শিরা-উপশিরা। তাই নদীগুলোকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে।

নদীর নাব্যতা ধরে রাখার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে সেগুলোর নাব্যতা বাড়ানো, পাশাপাশি প্রতি বছর সেগুলো রক্ষণ করার জন্য ড্রেজিং এবং নদীগুলো যেন মরে না যায় সে ব্যবস্থা নেয়া। বদ্বীপটাকে রক্ষা করা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা উন্নত জীবন দেয়া। এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার।

ডেল্টা প্ল্যান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ডেল্টা প্ল্যান করার লক্ষ্যটা হলো আমাদের ভবিষ্যৎ করণীয় সুনির্দিষ্ট করা। কাজেই ২০২০ সালের মধ্যে রূপকল্প বাস্তবায়ন করে ২১ সালে এসে আমরা সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছি। পরবর্তী পরিকল্পনা হলো ২১ থেকে ৪১ পর্যন্ত্ত আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা হচ্ছে একটা কাঠামো। কাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। পাশাপাশি ২১০০ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে সেটা মাথায় রেখেই আমাদের ডেল্টা প্ল্যান।

তিনি বলেন, ভালোভাবে একটা গাইডলাইন তৈরি করে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে। সময়ের সঙ্গে এটার পরিবর্তন, পরিবর্ধন সংশোধন করতে হবে। সেভাবেই আমাদের সব প্ল্যান হাতে নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বদ্বীপকে রক্ষার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। পরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ নিতে পারলে যেকোনো কঠিন কাজ সমাধান করা যায়। যে পদক্ষেপই আমরা নিই না কেন, সময়ের বিবর্তনে সেগুলো সংশোধন করা, মানসিকতাও থাকা উচিত। কাজেই আমরা সেভাবেই পদক্ষেপগুলো নিয়েছি বাস্তবায়ন করেছি, যার ফলে আমরা একটা সাফল্যও অর্জন করতে পেরেছি।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। কারণ আমরা জলবায়ু পরিবর্তন বা প্রকৃতির কোনো ক্ষতি হতে দিই না। কিন্তু উন্নত দেশগুলো ক্ষতি করছে, তার প্রভাবে জলবায়ুর ক্ষতি হচ্ছে। এর আঘাতটা বাংলাদেশের ওপরও আসবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন