অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত গতকাল বিকল্প বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী স্বাধীনতার পর থেকে গত ৪৬ বছরে দেশে কালো টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৮ লাখ ৬১ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। এ সময়ে দেশ থেকে কমপক্ষে ৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশের পেশাদার অর্থনীতিবিদদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’। এ টাকা উদ্ধার করে তা দেশের জাতীয় বাজেটে খরচ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। পাশাপাশি জনগণতান্ত্রিক বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ারও সুপারিশ করেছে তারা।
গতকাল অর্থনীতি সমিতির অডিটরিয়ামে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাব ২০২২-২৩: একটি জনগণতান্ত্রিক বাজেট প্রস্তাব’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এ প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থনীতি সমিতি ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করছে। বর্তমান সরকারের চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় তা ৩ দশমিক ৪ গুণ বেশি। এ বিশাল বাজেটের জন্য কোনো বিদেশী ঋণ নিতে হবে না। দেশীয় উৎস থেকেই পুরো বাজেট ব্যয় মেটানো সম্ভব। স্বাধীনতার পর থেকে পুঞ্জীভূত কালো টাকা থেকে ২ শতাংশ উদ্ধারের প্রস্তাব করছি। এতে ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা উদ্ধার হবে।
আগামী বছরের বাজেটে আয়ের উৎস হিসেবে ২৭টি নতুন উৎসের প্রস্তাব করে অর্থনীতি সমিতি। বাজেটে আয় সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ বারকাত বলেন, বাজেট অর্থনৈতিক হলেও এর আয়ের সমাধান অনেকটাই রাজনৈতিক। এ বিশাল বাজেটের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে এমন উৎসে হাত দিতে হবে, যেখানে অতীতে হাত দেয়া হয়নি। এ উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্পদ কর। দেশে সম্পদ কর আইন আছে। অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর বসাতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যারা অতিরিক্ত মুনাফা করে তাদের ওপর কর বসানো হয়েছিল। বিদেশী নাগরিকদের ওপর কর আদায় করা যায়। বিদ্যমান বিভিন্ন কর সর্বোচ্চ আহরণে জোর দিতে হবে। কালো টাকা ও পাচারকৃত টাকা থেকে উদ্ধার করা অর্থ বাজেটে ব্যয় করতে হবে।
অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, আমাদের কাছে ১৯৭২-৭৩ থেকে ২০১৮-১৯ সাল পর্যন্ত ৪৬ বছরের বাংলাদেশের পুঞ্জীভূত কালো টাকার পরিমাণ ৮৮ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ কমপক্ষে ৮ লাখ কোটি টাকা। আমরা তার ১০ শতাংশ উদ্ধার করে বাজেটে আনার কথা বলছি।
তিনি বলেন, দুর্নীতি, কালো টাকা, তথ্য পাচার বিষয়ে আমরা একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের কথা বলছি। এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কার্যপরিধি বিস্তারিত কীভাবে কী হবে তাও আমরা সরকারকে জানিয়েছি। অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। মোট বাজেটের মধ্যে বিভিন্ন কর থেকে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা আয়ের কথা বলা হয়েছে। যা সরকার প্রস্তাবিত চলমান অর্থবছরের (২০২১-২২) চেয়ে ৪ দশমিক ৭৬ গুণ বেশি। এনবিআর আয় করবে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের বাইরে কর আদায় হবে ৬ লাখ ৭০ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। এ সময় অর্থনীতি সমিতির পক্ষ থেকে তিনি বিভিন্ন খাতের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব সরকারের কাছে তুলে ধরেন।
অর্থনীতি সমিতি জানায়, তাদের প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি কমানোর পক্ষে। আবুল বারকাত বলেন, আমাদের প্রস্তাবিত মোট বাজেট সরকার প্রস্তাবিত চলমান অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ গুণ বড়, কিন্তু আমাদের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি মোট বাজেটের ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অথচ চলমান সরকারি বাজেটে তা ৩৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নে আমরা দুটি নতুন উৎসের কথা বলেছি, ‘বন্ড মার্কেট’ ও ‘সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্ব’। প্রস্তাবিত এ দুটি নতুন উৎস থেকে পাওয়া যেতে পারে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা ৭২ দশমিক ২ শতাংশ ঘাটতি অর্থায়ন পূরণ করতে সক্ষম।
