হাজি সেলিম কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা- আসনের সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় গতকাল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত--এর বিচারক শহিদুল ইসলাম তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সংসদ সদস্য হিসেবে হাজি সেলিমকে কারাগারে ডিভিশন দেয়ার আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবীরা। বিচারক এক্ষেত্রে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়েছেন।

গতকাল বেলা ২টার দিকে ওই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন হাজি সেলিম। যেকোনো শর্তে জামিন আবেদনসহ কারাগারে উন্নত চিকিৎসা প্রথম শ্রেণীর ডিভিশন চেয়ে দুটি আবেদন করেন তিনি। হাজি সেলিমের আইনজীবী প্রাণনাথ আবেদনে বলেন, ২০১৬ সালে ওপেন হার্ট সার্জারির সময় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন বাক-শক্তিহীন অবস্থায় রয়েছেন হাজি সেলিম। তিনি দেশ বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। জেলহাজতে থাকলে চিকিৎসার অভাবে বাক-শক্তিহীনের কারণে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কারণে যেকোনো শর্তে তার জামিন আবেদন করেছি। জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না। তাই আপিল শর্তে আত্মসমর্পণপূর্বক তার জামিন আবেদন করা হয়েছে।

শুনানি শেষে বিচারক হাজি সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। প্রথমে মৌখিক আদেশ দিয়ে ১০ মিনিট পর লিখিত আদেশ দেয়ার কথা বলে এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক। এরপর হাজি সেলিম কাঠগড়া থেকে বেরিয়ে আইনজীবীদের একটি চেয়ারে বসেন। সময় বারবার টিস্যু পেপার দিয়ে তাকে ঘাম মুছতে দেখা যায়। একপর্যায়ে তাকে একটি বড় টেবিলে শুইয়ে দেয়া হয়।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক। পরের বছর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন হাজি সেলিম। ২০১১ সালের জানুয়ারি হাইকোর্টের এক রায়ে তার সাজা বাতিল হলে পরে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। এর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের আগের রায় বাতিল করে নতুন করে শুনানি করতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

২০২১ সালের মার্চ বিচারিক আদালতের দেয়া ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট। গত ১০ ফেব্রুয়ারি মামলায় হাজি সেলিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-- আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে কঠোর গোপনীয়তায় দেশ ছাড়েন সংসদ সদস্য। তার দেশত্যাগ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হয়। দণ্ড নিয়ে তাকে দেশত্যাগে যারা সহযোগিতা করেছিলেন, তাদের শাস্তির দাবি ওঠে। পরে তিনি দেশে ফিরে আসেন। জানা যায়, তিনি আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

উল্লেখ্য, মামলা হওয়া থেকে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের সময়ের মাঝে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন হাজি সেলিম।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন